সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩ অপরাহ্ন

ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় ব্যবসায়ীরা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২২

রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে মেট্রোরেলের পাইলিং কাজ উদ্বোধনের তারিখ ধরলে পেরিয়েছে পাঁচ বছর। দীর্ঘ এ সময়ে গণপরিবহনে নতুন যুগে প্রবেশের আনন্দের পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় তৈরি হয় কিছু সাময়িক প্রতিবন্ধকতা। নির্মাণকাজ চলায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, নির্মাণসামগ্রীর স্তূপে সংকুচিত হয়েছিল মিরপুরের পল্লবী থেকে শুরু করে একেবারে আগারগাঁও পর্যন্ত। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন ব্যবসায়ী ও চলাচলকারীরা। অনেকে ব্যবসা গোটাতেও বাধ্য হন। সব সমস্যা সমাধানের পথে। সড়ক থেকে সরেছে সব ধরনের আবর্জনা। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, বহুলপ্রতীক্ষিত মেট্রোরেল চালু হলে ব্যবসা আগের চেয়ে জমবে। পাঁচ বছরের বেশি সময় পরে ২৮ ডিসেম্বর চালু হতে যাচ্ছে মেট্রোরেল (উত্তরা-আগারগাঁও)। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত কাজ চলমান। প্রথম ফেজের উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করায় নতুন করে আশার আলো দেখছেন এই এলাকার ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মেট্রোরেলের উদ্বোধন সামনে রেখে আগারগাঁও, তালতলা, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর-১০, সেনপাড়া, পল্লবী এলাকার ব্যবসায়ীরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন নির্মাণকাজ চলায় সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল এসব এলাকার সড়ক। স্টেশন এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে কাজ চলতো। অসহনীয় যানজট ছিল নিত্যসঙ্গী। নির্মাণসামগ্রী রাখা ও নির্মাণকাজ চলায় ধুলাবালিতে নাজেহাল হয়ে একসময় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। বাড়িভাড়ায়ও পড়ে নেতিবাচক প্রভাব। হোটেল ও ফার্নিচার ব্যবসায়ও ভাটা পড়ে। নির্মাণসামগ্রীর আবর্জনা এরই মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নিচের সড়ক সেজেছে নতুন আঙ্গিকে। মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু হলে পরিবেশ আরও বদলে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মিরপুর তালতলার রোকেয়া সরণির মোল্লা হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ নতুন করে চালু করা হয়েছে। মেট্রোরেল নির্মাণকালীন দুর্ভোগ ও ধুলাবালির কারণে একসময় এই হোটেলে ক্রেতা আসতো না। ফলে বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেই চিরচেনা দুর্ভোগ নেই। ফলে নতুন করে চালু করা হয়েছে হোটেলটি। হোটেলটির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আমির জাগো নিউজকে বলেন, হোটেল আগে চালু ছিল। কিন্তু মেট্রোরেল নির্মাণের ধুলাবালির কারণে কাস্টমার আসতো না। তাই একসময় বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেই ধুলাবালি নেই, তাই চালু করেছি।
মেট্রোরেল নির্মাণের কারণে অনেকে কাজীপাড়া-শেওড়াপাড়া এড়িয়ে ৬০ ফুট সড়ক ব্যবহার করতেন। ফলে এই পথের অনেক ক্রেতা অন্যদিকে চলে যান। বেচাকেনায়ও বিশাল ভাটা পড়ে। যেমন- বিক্রমপুর মটরসে টায়ার, টিউব, ব্যাটারি, মবিল, গিয়ার অয়েল, কমপ্রেশার, অয়েল ফিল্টার, গ্রিজ ও গাড়ির মালামাল বিক্রি হয়। কিন্তু মেট্রোরেল নির্মাণের দুর্ভোগে ক্রেতা হারায় প্রতিষ্ঠানটি।
বিক্রমপুর মটরসের মালিক মো. হাবিব জাগো নিউজকে বলেন, মেট্রোরেলের ধুলার ভয়ে ক্রেতারা এদিকে আসতো না। অন্য জায়গায় চলে যেত। কয়েকটি বছর যে কষ্ট করেছি তা মুখে বলে প্রকাশ করতে পারবো না। আশা করছি সামনে ভালো দিন আসবে।
এই পথের ফল বিক্রেতা মোহাম্মদ ফরিদ। প্রায় ১৬ বছর শেওড়াপাড়া-কাজীপাড়া সড়কে ফল বিক্রি করেন। আশা প্রকাশ করে ফরিদ বলেন, মেট্রোরেলের আন্ডারে যতগুলো দোকান পড়ছে সবাই কষ্ট করেছে। আমরা আশা করছি মেট্রোরেল চালু হলে আগের গ্যাপগুলো পরিপূর্ণ করতে পারবো। আমাদের বেচাকেনা বাড়বে। সেই আশায় এখনো বুক বেঁধে আছি।
‘আগে আমাদের দোকান ছিল শেওড়াপাড়া বাস টার্মিনালে। মেট্রোরেল নির্মাণের কারণে আমাদের দোকান ভাঙা পড়ে। দোকানে অনেক ধুলাবালি ফেস করা লেগেছে। গাড়ি গেলেই ধুলায় অন্ধকার! এখন নতুন করে দোকান দিয়েছি। আল্লাহ দিলে ভালো পরিবেশ, ধুলাবালি নেই। কাস্টমারও আসতে শুরু করেছে। আশা করি সামনে ক্রেতা আরও বাড়বে।’ মেট্রোরেলের কারণে শেওড়াপাড়া থেকে মিরপুর-১২ পর্যন্ত পুরো এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। পুরোনো ব্যবসায়ীদের অনেকে বিক্রয়কেন্দ্রগুলো নতুন করে সাজিয়েছেন। পাশাপাশি এ এলাকায় হচ্ছে অনেক নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
মিরপুরের কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া এলাকা আসবাবপত্রের ব্যবসার জন্য প্রসিদ্ধ। মেট্রোরেল নির্মাণকাজের কারণে ক্রেতা হারিয়েছিলেন অনেকে। এখন মেট্রো চালু হলে ক্রেতা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তামিম ফার্নিচারের ম্যানেজার জাহিদ মোহাম্মদ। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের কাজের কারণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই মুশকিল ছিল। আশা করছি সামনে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে।
মিরপুর-১০ এলাকায় বেনারসিপল্লি ছাড়াও আছে বেশ কিছু বিপণি-বিতান। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, মেট্রোরেল চালু হলে তাদের দুর্দশা কাটবে। বেনারসিপল্লিতে শতাধিক শাড়ির দোকান আছে। মেট্রোরেলের কাজের কারণে তিন-চার বছর তাদের ব্যবসার গতি কমে গিয়েছিল। এখন আবার তা বাড়ছে। বেনারসিপল্লি তাঁতি বাস্তবায়ন সমিতির সভাপতি হাজি সাত্তার জাগো নিউজকে বলেন, মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ চলার কারণে অনেক ক্রেতা চলে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে ক্রেতা আসতে শুরু করেছে। বেচাকেনাও বেড়েছে। আশা করি সামনে বেচাকেনা আরও বাড়বে। দূরের মানুষও কেনাকাটা করতে আসবে মেট্রোরেল চড়ে। করোনা ও মেট্রোরেল নির্মাণের কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। আশা করি সামনে কয়েকগুণ বাড়বে ক্রেতা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com