সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
তোফায়েল আহমেদ বিনা ভোটে এমপি হয়ে পারিবারিক ভাবে লুঠপাট করেছে-হাফিজ ইব্রাহিম শ্রেষ্ঠ গাইড হিসেবে পুরস্কার পেলেন মাইলস্টোন কলেজের ছাত্রী মেহজাদ আকবর এসবিএসি ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত দৌলতখানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালিত পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু

বলিউডের ওপরে নজরদারি চালাবে ভারতের ‘ধর্ম সেন্সর বোর্ড’

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২৩

হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগের ওপরে আঘাত দিতে পারে এমন সিনেমা, সিরিয়াল, নাটক, বই- সবকিছুর ওপরে নজর রাখার জন্য একটি বেসরকারি সেন্সর বোর্ড তৈরি করেছে ভারত।
হিন্দুদের অন্যতম শীর্ষ ধর্মগুরু শঙ্কারাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেন। তার অভিযোগ, যখন কোনো সিনেমায় কোনো ধর্মকে খাটো করে দেখাতে হয়, সেটা হিন্দু ধর্মকেই দেখানো হয়। আর অন্য ধর্মগুলোকে ভালোভাবে চিত্রায়িত করা হয়। বলিউড, টিভি সিরিয়াল, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সব জায়গাতেই হিন্দু দেবদেবীদের লাগাতার অপমান করা হচ্ছে। এটি আটকাতেই ধর্ম সেন্সর বোর্ড তৈরি করা হচ্ছে। এই হিন্দু ধর্মগুরুর তৈরি ‘সেন্সর বোর্ডে’ ১১ জন সদস্য থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। যাদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, ধর্মীয় গুরু, মিডিয়ার প্রতিনিধি, ইতিহাসবিদ আর ফিল্ম জগতের মানুষ- সবাই থাকবেন। সিনেমার চরিত্র, স্ক্রিপ্ট, সংলাপ সবই থাকবে নজরদারিতে থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ। তিনি বলেন, ‘সিনেমা, সিরিয়াল বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলিতে ধর্মীয় চরিত্র, সংলাপ, রং, তিলক আর স্ক্রিপ্ট পরীক্ষা করে দেখা হবে। যদি কোনো জায়গায় দেখা যায় যে হিন্দু ধর্ম, বেদ,পুরাণের বর্ণনার অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে, তাহলে এই সেন্সর বোর্ড প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
চলচ্চিত্র বা সিরিয়াল নির্মাতাদের কাছে ওই হিন্দু ধর্মগুরু আবেদন করেছেন যে তারা যেন কোনো ছবি বা সিরিয়াল তৈরি করার আগেই এই বোর্ডের সাথে পরামর্শ করে নেন। যাতে পরে আর কোনো সমস্যা না হয়। এই বোর্ডটির পরামর্শদাতা হিসাবে রাখা হয়েছে বলিউডের চিত্র পরিচালক তরুণ রাঠিকে।
কেন এই ‘ধর্ম সেন্সর বোর্ড’? তরুণ রাঠি জানান, ‘এই সেন্সর বোর্ড একদিক থেকে চলচ্চিত্র শিল্পকে সাহায্যই করবে। কেননা, কয়েক শ’ কোটি টাকা খরচ করে কেউ কোনো সিনেমা বানালেন, তারপরে দেখা গেল হিন্দু সমাজ সেটাকে বয়কট করছে। তখন তো প্রযোজকেরই ক্ষতি। সেই ক্ষতি এড়ানোর জন্যই বোর্ডের সাথে আলোচনার কথা বলা হচ্ছে।’
ভারতে সরকার নিয়ন্ত্রিত ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড রয়েছে। যাদের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো সিনেমা প্রদর্শনই বেআইনী। তাহলে নতুন করে ধর্মীয় বিষয়ে কেন একটা সেন্সর বোর্ড?
বিবিসি বাংলার এই প্রশ্নের জবাবে তরুন রাঠি বলছেন, ‘ভারতীয় সংবিধানে এই অধিকার দেয়া আছে যে এমন সংস্থা তৈরি করা যেতে পারে, যারা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় বিষয়গুলো পরিচালনা করবে। আর ধর্ম সেন্সর বোর্ডের মাধ্যমে আমরা ঠিক এটাই করতে চাইছি। আর সরকারি সেন্সর বোর্ড থাকা সত্ত্বেও তো এমন অনেক সিন বা সংলাপ ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছে যেগুলো হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে।’
বিবিসি বাংলাকে তরুন রাঠি বলেন, ‘এটা চলে আসছে কারণ আমরা চুপচাপ মেনে নেই। কিন্তু এখন আর চুপ করে থাকব না আমরা। সংবিধান যা অধিকার দিয়েছে, তার মধ্যে থেকেই আমাদের ধর্মের সঠিক চিত্রায়ণ হোক, এটাই আমরা চাই। এর জন্য প্রয়োজনে বিচার ব্যবস্থারও সহায়তা নেব আমরা’।
নজরদারি চলবে আঞ্চলিক ভাষার ওপরেও: শুধু যে বলিউড সিনেমা বা হিন্দি সিরিয়ালের ওপরে নজরদারি চালাবে এই সেন্সর বোর্ড তা নয়। আঞ্চলিক ভাষাগুলোতে যেসব সিনেমা, সিরিয়াল, নাটক, বই এমনকি সামাজিক মাধ্যমে বা স্কুলের কোনো নাটকের ওপরেও নজর রাখবে এই ‘সেন্সর বোর্ড।’ বিজেপির দক্ষিণ কলকাতা জেলার সভানেত্রী সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরী নিজে একজন ফিল্ম নির্মাতা। এই ধর্ম সেন্সর বোর্ড গঠনের কথা জেনে তার প্রতিক্রিয়া ছিল এরকম, ‘একটা তো সরকারি সেন্সর বোর্ড আছে। তার বাইরে কোনো বেসরকারি সংস্থা কী এরকম সেন্সর বোর্ড তৈরি করতে পারে? আমার জানা নেই। আর যে সরকারকে ভোট দিয়ে আমরা এনেছি, সেই বিজেপি সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনেই তো সেন্সর বোর্ড। তারা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল আছেন বিষয়গুলো সম্পর্কে। শঙ্করাচার্যজীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমার প্রশ্ন, বেসরকারিভাবে একটা সেন্সর বোর্ড গড়ার কী কোনো দরকার ছিল?’ তবে একই সাথে সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরী বলছেন যে, সম্প্রতি অনেক প্রযোজক-পরিচালককেই দেখা যাচ্ছে ছবিতে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে এসে নিজেদের ফিল্মকে বিতর্কিত করে তুলছেন তারা, যার জেরে বিক্ষোভ হচ্ছে, বিরোধ হচ্ছে। ‘একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশে বাক স্বাধীনতা সবারই আছে। কারো বাক স্বাধীনতাকে এভাবে জোর করে আটকানো যায় না। কিন্তু একজন ফিল্ম ডিরেক্টর হিসেবে এবং একজন বিজেপি কর্মী হিসাবে বলব, কোনো ধর্মীয় ভাবাবেগকেই যেন আঘাত না করা হয়। শুধু হিন্দুদের নয়, মুসলমান, খ্রিস্টান বা যেকোনো ধর্মের আবেগকেই আঘাত করা উচিত নয়, বলছিলেন বিজেপি নেত্রী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরী।
বলিউড কী হিন্দু বিরোধী? ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাথে হিন্দুত্ববাদীদের বিরোধ নতুন নয়।
শাহরুখ খান-দীপিকা পাডুকোন অভিনীত ‘পাঠান’ সিনেমার এক দৃশ্য নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্ক চলছে ভারতে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বলছে ওই ছবির একটি দৃশ্যে দীপিকা পাডুকোন গেরুয়া রঙের বিকিনি পরে গান করেছেন, যেটা হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছে। ওই ছবির বেশ কিছু দৃশ্য না বদলালে সেটিকে মুক্তি পেতে দেয়া হবে না, এমন হুমকিও দেয়া হয়েছে।
ভারতের সরকারি সেন্সর বোর্ড নির্দেশ দিয়েছে পাঠান সিনেমার কিছু দৃশ্য পরিবর্তন করতে, কিন্তু সেগুলো ঠিক কোন দৃশ্য, সে ব্যাপারে খোলসা করে কিছু বলা হয়নি। ‘পাঠান’ এর আগে ‘আদিপুরুষ’ নামে একটি ফিল্ম নিয়েও হিন্দুত্ববাদীরা আপত্তি তুলেছিল। তারও আগে ‘কালী’, ‘পদ্মাবত’, ‘ব্রহ্মাস্ত্র’, ‘লক্ষ্মী’র মতো একাধিক সিনেমা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। হিন্দুত্ববাদীরা কোথাও সিনেমা হলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে, কোথাও ছবির নির্মানের সময়েই সেটে হামলা হয়েছে। হিন্দু সাধু সন্তদের সর্বোচ্চ সংগঠন অখিল ভারতীয় সন্ত সমাজ তাদের এক সাম্প্রতিক বৈঠকে সরাসরিই বলেছিল যে বলিউড আসলে হিন্দু বিরোধী। সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com