রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
আজ ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার এক বাণীতে তিনি একথা বলেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দীর্ঘ ৯ মাস ১৪ দিন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দিজীবন শেষে ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতির পিতা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছিলো বাংলার বিজয়। তাই দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের। আজকের এ দিনে তিনি জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীন বাংলার রূপকার জাতির পিতার অবদান ছিল অতুলনীয়। ১৯৪৮ সালে মাতৃভাষার দাবিতে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বসহ ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ৬-দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় সবই হয়েছিল তাঁর নেতৃত্বে। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহার কারণে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার মুক্তিকামী মানুষ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে প্রকারান্তরে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বজ্রকণ্ঠে তাঁর উচ্চারণ, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ২৫ মার্চ কালরাত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি নিধনযজ্ঞের নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’র মাধ্যমে গণহত্যা শুরু করে। এরূপ প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দেন। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। এর পরই পাকিস্তানি জান্তারা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসা থেকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে রাখে। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁকে নেতৃত্বের আসনে রেখেই মুক্তিযুদ্ধ চলতে থাকে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সদ্যস্বাধীন দেশের মাটিতে পা রেখেই বঙ্গবন্ধু আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে সমবেত লাখো জনতার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার জীবনের সাধ আজ পূর্ণ হয়েছে। আমার সোনার বাংলা আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র’। পাকিস্তানে বন্দিকালীন তাঁর ফাঁসির হুকুম হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছিলেন তাঁর লক্ষ্যে অটল ও অবিচল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ফাঁসির মে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। জয় বাংলা’। দেশ ও জনগণের প্রতি এমন অকৃত্রিম ভালোবাসার উদাহরণ বিশ্বে বিরল।
আবদুল হামিদ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাঁর আদর্শ মুছে দিতে এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব খর্ব করতে অপচেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আজ অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছে। যতদিন বাংলাদেশ ও বাঙালি থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু সবার অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন খাতে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও উন্নত প্রযুক্তির মেট্রোরেল, যা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এছাড়া কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল খুব শীঘ্রই যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে যা বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনে সফলতার পথ ধরে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের পথে আরও সাহস ও আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যেতে পারব। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এ আমার প্রত্যাশা।