‘রাসূল সা.-এর আদর্শে গড়ি আলোকিত পৃথিবী’ একটি সিরাত বিষয়ক গবেষণা গ্রন্থ। বইটিতে লেখক হারুন ইবনে শাহাদাত সংক্ষেপে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন। একই সাথে উম্মতে মুসলিমার দায়িত্ব ও কর্তব্যও কী হওয়া উচিত, সে সম্পর্কেও কুরআন-সুন্নাহর আলোকে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন। বইটিতে মোট চারটি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। তার মধ্যে প্রথম প্রবন্ধটির নাম ‘জাহেলিয়াত ও অন্ধকার একাকার’। এতে প্রাচীন জাহেলিয়াতের সাথে আধুনিক জাহেলিয়াতের তুলনা করে মুসলিম সমাজকে বিদ্যমান ভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
লেখক বলেছেন, ‘‘যারা প্রশ্ন করেন, প্রায় একশতজন মানুষ যে দেশে মুসলমান, সে দেশে কাকে ইসলামের দাওয়াত দেবেন? মুসলমানদের মাঝে দাওয়াতী কাজের কী বা প্রয়োজন? তারা একবারও কি ভেবে দেখেছেন, আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা. যে সমাজে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই সমাজের মানুষেরাও বিশ্বাস করতেন, তারা হজরত ইব্রাহীম আ.-এর অনুসারী। মক্কা নগরীতে তখনও পবিত্র কা’বাঘর ছিল। প্রতি বছর হজ পালন করা হতো। হজের সময় যুদ্ধ-বিগ্রহ, খুন-খারাবি বন্ধ থাকতো। তারা হজের সময় পশু কুরবানিও করতেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় হাজীদের মেহমানদারি করতেন।”
কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা ছিল মুশরিক বা পৌত্তলিক। কারণ তারা আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ মানতো না। তারা হজ করতো, তাদের নিজেদের মনগড়া পদ্ধতিতে নামাজ পড়তো, আবার দেবতায়ও বিশ্বাস করতো, দেবতার বন্দনা করতো, উপাসনা করতো। তারা আল্লাহকে সর্বশক্তিমান বলে বিশ্বাস করতো, কিন্তু তাঁকেই একমাত্র হুকুমকর্তা মানতো না, নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতা-কর্তৃত্ব-আধিপত্য বিসর্জন দিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহর গোলামি ও তাঁর হুকুমের কাছে আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুত ছিল না। তারা নিজেদের হজরত ইব্রাহীম, ইসমাইল ও ইসহাক ও ইয়াকুবের বংশধর ও অনুসারী মনে করলেও তাদের শিক্ষা ও আদর্শ থেকে বহু দূরে অবস্থান করছিল। যদিও তাঁদের প্রতি তাদের ভক্তি-শ্রদ্ধার অভাব ছিল না।
তারা পবিত্র কাবাঘরে হজরত ইব্রাহীম আ.-এর মূর্তি স্থাপন করে তাদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা নিবেদন করতো। বস্তুত এসব পৌত্তলিকতাই ছিল মুশরিকদের মনগড়া। হজরত ইব্রাহীম আ.সহ পূর্ববর্তী কোনো নবী-রাসূলই তাদের উম্মতদের কখনোই পৌত্তলিকতার শিক্ষা দেননি। প্রত্যেক নবী-রাসূলই মানুষকে একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করার দাওয়াত দিয়েছেন, শুধু তাঁর দেয়া হেদায়াত বা পথনির্দেশ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু কালক্রমে তারা আল্লাহর কালাম বা আসমানি কিতাবের শিক্ষা থেকে দূরে সরে যায়।
আসলে মানুষ যখন আল্লাহর কালাম থেকে, দীনের জ্ঞানের মূল উৎস থেকে দূরে সরে যায়, তখনই অজ্ঞতা-জাহেলিয়াত তাদের ঘিরে ধরে এবং ধর্মের নামে পৌত্তলিকতা বা শিরক-ভক্তিবাদ জায়গা করে নেয়। শিরক মূলত অজ্ঞতা বা আন্দাজ-অনুমান ছাড়া আর কিছুই নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ শিরক সম্পর্কে বলেছেন:
‘‘জেনে রাখ, নিশ্চয় আসমানসমূহে যারা আছে এবং জমিনে যারা আছে সব আল্লাহরই এবং যারা আল্লাহ জমি ব্যতীত অন্যদের ডাকে, তারা মূলত শরীকদের অনুসরণ করে? তারা তো কেবল ধারণার অনুসরণ করে। তারা তো শুধু মিথ্যাই বলে।’’ সূরা ইউনুস : ৬৬।
‘আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা ছাড়া অন্ধকার দূর হয় না’
পৌত্তলিকতা তথা অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে থাকা মানবজাতিকে সঠিক পথ দেখানোর জন্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল কুরআন দিয়ে পাঠালেন সর্বশেষ নবী ও রাসূল মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে। তাঁর প্রধান কাজ ছিল আল্লাহর কালাম আল কুরআনকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া বা প্রচার (তাবলীগ) করা, কুরআনের আলোকে মানুষের চিন্তা-চেতনায় জমে থাকা শিরক-পৌত্তলিকতাকে ঘষে-মেজে পরিষ্কার করে বিশুদ্ধ তাওহীদের আলোকে নিজেদের চিন্তা-চেতনা, চরিত্র ও কর্মকে পবিত্র করা, যার জন্য স্বয়ং হজরত ইব্রাহীম আ. এবং ইসমাইল আ. মক্কায় পবিত্র কাবা ঘরের প্রাচীর নির্মাণ করার সময় দোয়া করে গেছেন: “হে আমাদের রব, এদের কাছে এদেরই মধ্য থেকেই একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শোনাবে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদের পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’।’’
আল্লাহর রাসূলের কাজ ছিল মানুষের কাছে আল্লাহর কালাম আল কুরআন পৌঁছে দেয়া, কুরআনের শিক্ষা অনুসারে মানুষের চরিত্র ও জীবনকে পরিশুদ্ধ করা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে আল্লাহর কালামকে বুলন্দ করা বা সর্বোচ্চ মর্যাদায় বাস্তবায়ন বা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সর্বাত্মক সংগ্রাম বা জিহাদ করা: ‘তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্যদীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দীনের ওপর তা বিজয়ী করে দেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।’ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর সার্বভৌমত্ব ঘোষণার জন্য রাসূল (সা.)কে নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘‘জেনে রেখ, সৃষ্টি তাঁর, হুকুমও (চলবে) তাঁর, বরকতময় আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতিপালক।’’ আল আরাফ : ৫৪। ‘‘সকল ক্ষমতা এবং ইজ্জতের মালিক; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’’ ইউনুস : ৬৫।
‘‘আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্ব তাঁরই। তিনিই জীবন দেন এবং তিনিই মৃত্যু দেন। আর তিনি সকল কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।’’ আল হাদীদ: ১-২।
এ কারণে আমরা দেখি আল্লাহর রাসূল আল্লাহর দীনকে বুলন্দ করার জন্য, কুরআনের শাসন বাস্তবায়ন করার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি শুধু কুরআনের শিক্ষা প্রচারই করেননি, কুরআনের আলোকে জীবন গড়ার কৌশল বা হেকমতও শিক্ষা দিয়েছেন এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে কুরআনের শিক্ষা বাস্তবায়ন করার জন্য তাঁর অনুসারী আল্লাহর সৈনিকদের নিয়ে সংঘবদ্ধ চেষ্টা করেছেন। ফলে সত্যের বিজয় হয়েছে, মিথ্যা অপসৃত হয়েছে।
‘আরবের অন্ধকার যুগের সাথে বর্তমানের তুলনা’
লেখক প্রাচীন জাহেলিয়াতের সাথে আধুনিক জাহেলিয়াতের তুলনা করে দেখিয়েছেন, প্রায় দেড় হাজার বছর সময় পার করে এসেও জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তির ব্যাপক উৎকর্ষতা অর্জনের পরও কীভাবে মানবিক মূল্যবোধের দৈন্যতায় ভুগছি, কীভাবে ভোগবাদে আচ্ছন্ন হয়ে আত্মাকে কলুষিত করছি এবং আমাদের মধ্যে আল্লাহর কালাম ও মহানবীর জীবনাদর্শ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পৌত্তলিকতার মধ্যে আকণ্ঠ ডুবে আছি। তিনি বলেছেন, ‘‘মক্কার সেই অন্ধকার সময়ের সাথে বর্তমান সময়ের পার্থক্যটা খুব বেশি নয়। আর এজন্যই এখনো রাসূল সা. প্রদর্শিত দীনের দাওয়াত জরুরি। মুসলমানদের মাঝে দাওয়াত পৌঁছানো, তাদের চিন্তার পরিশুদ্ধি ছাড়া সমাজ, দেশ ও দুনিয়ার পরিবর্তন সম্ভব নয়।’’
কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমাদের মধ্যে আল্লাহর কালাম আল কুরআন বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন এখনো পৌত্তলিকতার নাগপাশ থেকে মুক্তি পাচ্ছি না? লেখক উল্লেখ করেছেন, ‘‘বর্তমানে দেখা যায়, আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, নামাজ পড়েন, হজ করেন, কুরবানি দেন এমন মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য উসিলা তালাশের নামে অনেক জীবিত ও মৃত ধর্মগুরুকে আল্লাহর কাছে পৌঁছার মাধ্যম বলে মনে করেন।’’
আমার মতে, এরও মূল কারণ আল্লাহর কালাম থেকে দূরে সরে যাওয়া। আমরা প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করি কিন্তু কুরআনের শিক্ষা জানার চেষ্টা করি না। আমাদের মসজিদগুলোয় তিন বেলা ‘কিতাবের তালিমের’ নামে ১০২ বছর আগে একজন বিশিষ্ট লেখকের লিখিত গ্রন্থে সংকলিত কিছু বাছাই করা হাদীস পড়া হয়, কিন্তু ভুলেও দিনে একবার আল কুরআনের দরস পেশ করা হয় না। এছাড়া ঈমান আমলের আলোচনার নামে যে বয়ান করা হয়, সেখানেও সব মনগড়া ও অনুমাননির্ভর কথা-বার্তাই বলা হয়, কুরআনে হাদীসের কোনো উদ্ধৃতিও দিতে দেখা যায় না। এমনকি মসজিদে জুমার খুতবা এবং ওয়াজ মাহফিলে বড় বড় বুজুর্গদের বয়ানেও আল্লাহর কালামকে প্রাধান্য দেয়ার প্রবণতা দেখা যায় না। সবাই আল্লাহর কথার চেয়ে নিজেদের কথাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। অধিকাংশ মসজিদেই আপনি অর্থসহ কুরআন এবং মহানবীর জীবনী খুঁজে পাবেন না। অনেক খুঁজে হয়তো দুয়েকটা পাবেন, কিন্তু দেখবেন সেগুলোয় ধুলার আস্তর পড়েছে। সব জায়গাতেই দেখবেন তাবলিগ জামাতের পবিত্র কিতাব তাবলীগি নিসাব।
এককথায় বলা যায়, আমাদের মধ্যে আল্লাহর কালাম আল কুরআন বিদ্যমান রয়েছে; কিন্তু কুরআনের শিক্ষা প্রায় উঠে গেছে। যার কারণে অনুমাননির্ভর বয়ান ও কিচ্ছা-কাহিনী, শিরক-বেদায়াত ও জাহেলিয়াত আবার জায়গা করে নিচ্ছে।
‘রাসূল সা.-এর কর্মবণ্টন পদ্ধতি’
এটি এ বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শিরোনাম হলেও এখানে ঈমান, ইসলাম, জিহাদ, মহানবীর মিশন এবং মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় বিষয় হলো রাসূল সা.-এর কর্মবণ্টন পদ্ধতি।
আসলে এ বিষয়গুলো একটির সাথে আরেকটি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ঈমানের অনিবার্য দাবিই হলো আল্লাহর ইচ্ছার নিকট নিজের স্বেচ্ছাচারিতাকে বিসর্জন দিয়ে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করা। আবার ইসলাম শব্দটির অর্থই হলো আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করা। আর এভাবে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করার অপর নাম দাসত্ব বা গোলামি করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষ ও জীন জাতিকে এই দাসত্ব করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন এবং হজরত আদম আ. থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা. মানুষকে আল্লাহর দাসত্বের দিকেই আহ্বান জানিয়েছেন, এটিই ছিল প্রত্যেক নবী-রাসূলদের জীবনে মিশন।
আজকের যুগেও যদি আমরা ঈমানের দাবি পূরণ করতে চাই, তাহলে আমাদের দীন কায়েমের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করতে হবে।
তবে এখানে লেখক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সেটি হলো যোগ্যতা অনুসারে কর্মবণ্টন এবং মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতার মূল্যায়ন। প্রত্যেক মানুষের মেধা-যোগ্যতা একই ধরনের হয় না। কারও কারও মধ্যে থাকে স্রষ্টা প্রদত্ত বিশেষ কিছু গুণাবলী। সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরি। আমাদের সমাজের সর্বক্ষেত্রে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের তীব্র সংকট বিদ্যমান। আমাদের দূরদর্শী, বিচক্ষণ ও সাহসী রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীবাহিনী যেমন দরকার, তেমনি সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মী, কবি, সাহিত্যিক, কবি, গীতিকারও প্রয়োজন। আমরা নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলামের পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টির মাধ্যমে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে দুর্নীতিমুক্ত সৎ ও ইনসাফপূর্ণ শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে একটি কল্যাণমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এটি চাট্টিখানি কথা নয়। শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে এটি হবে না। আমাদের ব্যাপক ও উন্মুক্ত গড়ঃরাধঃরড়হধষ ড়িৎশ বা উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে যার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো মিডিয়া সাংস্কৃতিক অঙ্গন। অথচ এ অঙ্গনেই আমরা সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে। অথচ একটি মিশনারি জাতি হিসেবে এ অঙ্গনে আমাদেরই নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিল। আল্লাহর রাসূল এবং কয়েকজন সাহাবীর জীবনাদর্শ পর্যালোচনা করে লেখক এ বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
এক্ষেত্রে লেখক যথেষ্ট আশাবাদী। তৃতীয় অধ্যায়ের নাম ‘অপসংস্কৃতির আঁধার কেটে আসবে বিজয়’। এখানে তিনি সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে আমাদের সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। আসলে সাংস্কৃতিক স্বকীয়তাই রাজনৈতিক স্বাধীনতার শিকড়। তাই অপসংস্কৃতির অসুস্থ ধারার বিপরীতে সুস্থ সাংস্কৃতিক লড়াইকে শক্তিশালী করা প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। এখানে শিথিলতা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ‘সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে পরাজয় মানে অস্তিত্ব বিপন্ন।’
সর্বশেষ চতুর্থ অধ্যায়ে লেখক সংক্ষিপ্তভাবে মহানবীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপঞ্জি তুলে ধরেছেন। এর ফলে এক নজরে রাসূলের জীবনীকে দেখা যায়।
মহানবীর জীবনী নিয়ে বর্ণনাধর্মী সাহিত্যের অনেক কাজ হয়েছে। তবে সে তুলনায় গবেষণাধর্মী সাহিত্য যথেষ্ট কমই হয়েছে। অবশ্য এটি খুব সহজ কাজ নয়। তাই বলা যায়, হারুন ইবনে শাহাদাত একটি দুর্গম পথে যাত্রা করার সাহস করেছেন। এখানে যতগুলো বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন, সবগুলো বিষয় নিয়েই আরও বিস্তারিত কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আশা করি, তিনি ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও কাজ করবেন। তারপরও তার এই প্রয়াস যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক। এটি অনেকটা জানালা দিয়ে আকাশ দেখার মতো। অল্প সময়ে রাসূলের সংগ্রামী জীবনকে হৃদয়ঙ্গম করার পক্ষে বইটি যথেষ্ট সহায়ক। আমি বইটির ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী। বইটি প্রকাশ করেছে কালার পেন্সিল প্রকাশনী, বাংলাবাজার, ঢাকা। বইটি পেতে আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭৯২৪৮৩৩২১।