মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন সরকার। এমনই একটি সরকারী ঘর ভাতিজীর নামে বরাদ্দ নিয়ে নিজের জায়গায় নির্মাণ করিয়েছেন এবং সেই ঘর অন্যের নিকট ভাড়া দিয়েছেন এক প্রভাবশালী ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা। এটি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষার গ্রামের ঘটনা। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় সারাদেশে ‘যাদের ভুমি আছে ঘর নাই’ তাদেরকে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষার ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার ও মহিষার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির হাওলাদার প্রভাব খাটিয়ে তার আপন ভাতিজী প্রিয়াংকার নামে আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর প্রথম পর্যায়ের একটি ঘর বরাদ্দ নেন। ভাতিজির নামে সরকারী ঘর বরাদ্দ নিয়ে নিজের জমিতে নির্মাণ করিয়েছেন। কিন্তু ভাতিজী প্রিয়াংকা সেই ঘরে বসবাস করছেন না। ঘর অন্যের কাছে মাসিক ২৫শ’ টাকায় ভাড়া দিয়েছেন ওই যুবলীগ নেতা মনির। রোববার (১৫ জানুয়ারি) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় সালমা বেগম নামে এক নারী তার দুই সন্তান নিয়ে প্রিয়াংকার নামে বরাদ্দকৃত ওই সরকারী ঘরে বসবাস করছেন। জানতে চাইলে সালমা বেগম বলেন, মনির মেম্বার এই ঘর আমার কাছে মাসিক ২৫শ’ টাকায় ভাড়া দিয়েছেন। মনির মেম্বারের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে আমি দুই মেয়ে নিয়ে এই ঘরে বসবাস করছি। আমার কোন জমিও নেই, ঘরও নেই। স্থানীয়রা জানান, মান্নান হাওলাদারের মেয়ে প্রিয়াংকা স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ির পর প্রায় পাঁচ বছর হয় ঢাকায় চলে যান এবং গার্মেন্টসে কাজ করে ঢাকাই বসবাস করছেন। প্রিয়াংকার অবর্তমানে তার আপন চাচা মহিষার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও মহিষার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মনির হাওলাদার প্রিয়াংকার নামে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নেন। প্রিয়াংকার নামে বরাদ্দ নিয়ে সেই ঘর নিজের জমিতে উত্তোলন করে ভাড়া দিয়েছেন যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির হাওলাদার। প্রিয়াংকা মুঠোফোনে বলেন, কারো কাছে ঘর ভাড়া দেয়া হয়নি। আমি একটি কাজে কিছুদিনের জন্য ঢাকায় এসেছি। তাই এক প্রতিবেশীকে থাকতে দিয়েছি। আমি শীঘ্রই চলে আসবো। অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির হাওলাদার বলেন, আমার ভাতিজী প্রিয়াংকা গরীব ও অসহায়। আমি তাকে আশ্রয়ন প্রকল্পের সরকারী ঘর এনে দিয়েছি। তার কোন জায়গা জমি না থাকায় আমার জমিতেই ঘর তুলে দিয়েছি। প্রিয়াংকা চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গিয়েছেন এবং তার ঘরে একজনকে কিছুদিনের জন্য থাকতে দিয়ে গেছেন। আমি কারও কাছে ঘর ভাড়া দেইনি। আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালাচ্ছে। ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জানতে পারলাম মহিষার ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে প্রিয়াংকা নামে এক নারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর প্রথম পর্যায়ে যার জমি আছে ঘর নেই প্রকল্পে তিনি একজন উপকারভোগী। বর্তমানে তিনি সেই ঘরে বসবাস করেননা। তিনি অন্য কোথাও থাকেন। বর্তমানে সেই ঘরে অন্য কেউ ভাড়া হিসেবে থাকেন। আমি জানতে পেরে আজকেই তদন্ত দিবো। তদন্তে যদি সত্যতা প্রমাণিত হয় তাহলে আশ্রয়ন প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী নিয়ম ভঙ্গের যে ব্যবস্থা রয়েছে সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।