সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১১ পূর্বাহ্ন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝরে যাচ্ছে বিদেশী শিক্ষার্থী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৩

কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে লিঙ্গ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যাও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০১৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ৩৪ জন বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে শূন্যের কোঠায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকাডেমিক শাখার তথ্য মতে, ২০২২ সালে ভারত থেকে একজন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করলেও পরে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী শূণ্যের কোঠায় নেমে আসার কারণ হিসেবে বাংলায় পাঠদান, ভাষাগত দক্ষতা যাচাই, কোর্স না করানো, আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যক্রমের অনুপস্থিতি, বই-নোটসহ বেশিরভাগ শিক্ষা উপকরণ বাংলায় থাকার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকাডেমির শাখা সূত্রে জানা যায়, সর্বপ্রথম ২০১৪-১৫ সেশনে মাত্র দু’জন নেপালি শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে বিদেশী শিক্ষার্থীর আগমন শুরু হয়। এর আগে কোনো বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন-এমন তথ্য নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ সেশনে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় তিনজনে। এরপর ২০১৭ সালে জর্ডান, সোমালিয়া ও নেপাল থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। তারপর ২০১৮ সালে নেপালি ও জর্ডান থেকে আটজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তবে সময়ের ব্যবধানে মাত্র একজন ছাড়া টিকতে পারেননি কেউ। ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি একসাথে পাঁচজন নেপালি শিক্ষার্থী গোপনে দেশ ছাড়ার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়ে বছর না পেরুতেই চলে যান জর্ডানের শিক্ষার্থী রাদ ইব্রাহিম খলিল আবুশায়ুন। এরপর ২০১৯-২০ সেশনে চারজন বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও ২০২০-২১ সেশনে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির ধারাবাহিকতায় ভাটা পড়ে। সে বছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ বিভাগের মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে অন্তরা হালদার নামে মাত্র একজন বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপরে আর কোনো বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
বিদেশী শিক্ষার্থীরা ছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই তার সার্বজনীনতা ধরে রাখতে পারে না উল্লেখ করে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটা আন্তর্জাতিক। এমনকি আমেরিকান অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে সেখানকার শিক্ষার্থীদের চেয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বেশি। আমাদের বিদেশী শিক্ষার্থীর দরকারটা অনেক বেশি। যদি একটি দেশের বা এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় তার সার্বজনীন চেহারা ধারণ করতে পারে না। তবে বাংলাদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের মান বিবেচনায় রাখার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে যায় তারা মোটামুটি সবাই ক্লাসের ভালো ছাত্র। আমাদের বিদেশী শিক্ষার্থী দরকার। কিন্তু ভর্তির সময় কোন মানের শিক্ষার্থী নিচ্ছি, তা বিবেচেনা করা দরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক মোঃ সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আসছে। আমরা চেষ্টা করছি এই জায়গাটা ঠিক করার জন্য। কিছুদিন আগে আমাদের যে ব্রসিয়ারগুলো বানানো হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে অনেক ভুল থেকে গেছে। এই ব্রসিয়ারগুলো যদি আমরা সুন্দরভাবে করতে পারি তাহলে এইগুলো বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে পাঠাবো। তখন তারাও আমাদের সাহায্য করতে পারবে। আমরা যে অভাব বোধ করছি সেটা পূরণ করা সম্ভব হবে। বিদেশী ছাত্রদের রাখতে গেলে শুধু যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আহবান করলে চলে আসবে, বিষয়টি পুরোপুরি তা নয়। বিদেশী যে দূতাবাসগুলো আছে তারা যদি একটু এগিয়ে আসে তাহলে এই জায়গাটা পূরণ করা সম্ভব হবে। বিষয়টা নিয়ে আমাদের সকল বিভাগকে সচেষ্ট হতে হবে।
বিদেশী শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ওইভাবে এখনো গড়ে ওঠেনি। আমরা আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদেরই যথেষ্ট পরিমাণে স্কলারশিপ দিতে পারছি না। তারপরও আমরা বিদেশীদের জন্য কিছু স্কলারশিপ চালু করেছি বলে জানান তিনি। সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com