আলু উৎপাদনে শীর্ষ জেলা মুন্সিগঞ্জে বীজ বপন শেষে এখন জমিতে বেড়ে উঠছে আলুগাছ। জেলার ছয় উপজেলার দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে আলুগাছের সবুজ পাতার সমারোহ থাকলেও চলতি মৌসুমে পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উচ্চ ফলনের আশায় বুক বেঁধেছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। তবে সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন তারা।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর জেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্র ছিল ৩৫ হাজার ৭৯৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ ৯৭ হাজার ১৯৬ মেট্রিক টন আলু। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হবে প্রায় ৩০.৬৫ মেট্রিক টন। তবে আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৪৪৬ হেক্টর জমিতে। এক্ষেত্রে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে হেক্টরপ্রতি প্রায় ৩২ মেট্রিক টন আলুর ফলন হতে হবে।
সরেজমিন দেখা যায়, জেলার প্রধান অর্থকরী ফসলের পরিচর্যায় কৃষকদের কর্মযজ্ঞ চলছে। পানি সেচ, আগাছা পরিষ্কার, সার আর কীটনাশক ছিটানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
সদর উপজেলার টরকি গ্রামের কৃষক মনির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত দু-তিন বছর ধরে আমাদের লোকসানের কবলে পড়তে হচ্ছে। ঋণ করে চাষ করি। অনেকে জমিজমা-ভিটেমাটি বিক্রি করে দিচ্ছে। গতবার কোল্ডস্টোরেজে ৩০০ বস্তা আলু রাইখা আইয়া পড়ছি। এখন যেই শীতটা পড়ছে এটা আলুর জন্য উপকারী। আশা করতাছি এমন আবহাওয়া আরও কিছুদিন যদি থাকে তবে ভালো ফলন হবে।’ একই এলাকার কৃষক শাহাদাত মৃধা জানান, প্রতি কানি জমিতে আলু চাষে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এবছর বীজের দাম কিছুটা কম ছিল তবে সার-কীটনাশক, শ্রমিকের দাম বেশি। ‘গতবছর ৫০ কেজির সারের বস্তা ৮০০ টাকায় কিনেছিলাম, এবছর তা ১১০০-১২০০ টাকা। প্রতি প্যাকেট কীটনাশকে ৮০-১০০ টাকা বেড়েছে। সরকার যদি সার-কীটনাশকের দামটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এনে দেয় তবে আমাদের জন্য ভালো। খরচ কম হলে আমরা লাভের সুযোগ থাকবে’, বলেন শাহাদাত মৃধা।
কৃষক রনি বলেন, ‘পাঁচ কানি জমিতে আলু চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ৮-৯ লাখ টাকার মতো। লাখ লাখ টাকা খরচ করে যদি আলুর দাম না পাই তবে কী জন্য আলুর আবাদ করবো? তবে এখন আবহাওয়া ভালো আছে। এজন্য যদি কিছুটা সুফল পাই।’ চরমশুরা এলাকার কৃষক হারুন-অর রশিদ বলেন, ‘সব কিছুর খরচ বেড়েছে, তারপরও আলু লাগাইছি। এবছর ভালো ফলন হবে। কিন্তু বাজার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। বাজারে ভালো দাম না থাকলে, ফলন ভালো হলেও আমরা লোকসানের কবলে পড়বো।’
তিনি বলেন, ‘দেড়-দুমাসের মধ্যে আলু উত্তোলন শুরু হবে। দাম কী হবে সেটা নিয়ে এখনই পরিকল্পনা করা দরকার। বিদেশে যদি রপ্তানি করা যায়, তাইলে বাজারে ভালো দাম থাকবে।’
জেলা কৃষি অফিস বলছে, অন্য রবিশস্য চাষ বেশি হওয়ায় এবছর আলু চাষ কিছুটা কমেছে। বিদেশে রপ্তানির জন্য রপ্তানিমুখী আলু চাষে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক এবিএম ওয়াহিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আলু উৎপাদনের জন্য অনুকূল তাপমাত্রা ১৬-২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। বর্তমানে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে এটি অনুকূল। এখন পর্যন্ত শীতজনিত কোনো রোগ, পোকামাকড়ের উপদ্রবের সংবাদ আমরা পাইনি। কৃষক ভাইদের প্রতি আমাদের পরামর্শ, মাঠ লেভেলের যারা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। কোনো পোকামাকড় কিংবা রোগবালাই দেখা দেওয়া মাত্রই যেন কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রপ্তানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কৃষকদের রপ্তানি উপযোগী আলু চাষে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে সুষম মাত্রায় সার দিয়ে যদি আলুর চাষাবাদ করা হয় তাহলে অবশ্যই আলু রপ্তানির জন্য উপযোগী হবে। আলু রপ্তানির জন্য সরকারি উদ্যোগ রয়েছে।-নিউজজাগো২৪.কম