সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে। বর্ণবাদী ও ধর্মবিদ্বেষী কাজের অনুমোদন দেওয়ায় রোববার সৌদি আরব, তুরস্ক, জর্ডান, কুয়েত, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং পাকিস্তান কঠোর সুইডিশ সরকারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। খবর ডেইলি সাবাহর। সুইডেন সরকারের কাছ থেকে দেশটির উগ্র-ডানপন্থি রাজনীতিবিদ রাসমুস পালুদান তুরস্কের দূতাবাসের সামনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর অনুমতি নেওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। কুখ্যাত এই চরমপন্থি ধর্ম অবমাননার নিকৃষ্ট কাজটি করার সময় পুলিশের পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ সুরক্ষা পেয়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আসুন আমরা ঘৃণা ও চরমপন্থাকে প্রত্যখ্যান করে সারাবিশ্বে সহনশীলতা এবং সম্প্রতির বার্তা ছড়িয়ে দিই।
এ ঘটনাকে জর্ডান ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, পবিত্র কুরআন পোড়ানোর এই ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক তৎপরতাকে উসকে দেবে। এ জন্য এ ধরনের কর্মকা- বন্ধ করে শান্তি ও সম্প্রীতির সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে হবে। চরমপন্থার বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোকে সম্মিলিত দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেছে দেশটি।
কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ সালেম আবদুল্লাহ আল জুবায়ের আল সাবাহ এক বিবৃতিতে বলেছেন, কুরআন পোড়ানোর এ ঘটনা সারাবিশ্বের মুসলমানদের মনে আঘাত দিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মিসর কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এ ঘটনা মুসলিম বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে। এই ধরনের বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের বিপদ সম্পর্কে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে মিসর বলেছে, এমন ন্যক্কারজনক কাজ বাদ দিয়ে বরং সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূল্যবোধকে উচ্চে তুলে ধরতে হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারও পবিত্র কুরআন পোড়ানোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। পবিত্র কুরআন পোড়ানোর অনুমতি দেওয়ায় কাতার সুইডিশ কর্তৃপক্ষের নিন্দা করেছে। বিদ্বেষ ও সহিংসতা প্রত্যাখ্যানের দায়িত্ব পালন করতে দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা যথাসম্ভব শক্ত ভাষায় এই জঘন্য কাজের নিন্দা জানাচ্ছি। আমাদের বারবার হুশিয়ারি সত্ত্বেও এই জঘন্য ঘটনা ঘটানো হলো। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এই কা-জ্ঞানহীন ও উসকানিমূলক পদক্ষেপ বিশ্বের ১৫০ কোটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে।
বাংলাদেশে নিন্দা : সুইডেনের স্টকহোমে তুর্কিয়ে প্রজাতন্ত্রের দূতাবাসের সামনে শনিবার (২১ জানুয়ারি) একজন কট্টর ডানপন্থী নেতার পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। গত রোববার (২২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এবং ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলাম পৃথক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানান। বিবৃতিতে মুজিবুর রহমান বলেন, সুইডেনের স্টকহোমে তুর্কি দূতাবাসের সামনে একটি উগ্রপন্থী দলের পবিত্র কুরআন মাজিদ পোড়ানোর ঘটনা গোটা বিশ্বের মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত করেছে। আমরা ন্যক্কারজনক এ ঘটনায় বাংলাদেশের জনগণ ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানো হয়েছে, যা ধর্মীয় অনুভূতির ওপর মারাত্মক আঘাত।
মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা পবিত্র কুরআন মাজিদ পোড়ানোর ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুইডেন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য ওআইসি এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমরা গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, সুইডেনে তুর্কি দূতাবাসের সামনে উগ্র ডানপন্থী রাজনৈতিক দল হার্ড লাইনের বিতর্কিত নেতা রাসমুস পালুদান প্রকাশ্যে পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে পবিত্র কুরআনে অগ্নিসংযোগ করেছে, যা শুধু কুরআন নয়; বরং বিশ্বের সকল মুসলমানসহ শান্তিকামী প্রতিটি মানুষের কলিজাকে দগ্ধ করার শামিল। পৃথিবীর কোনো সভ্য জাতি বা দেশ কারো মৌলিক বিশ্বাসের ওপর এভাবে আঘাত হানতে পারে না। এর আগেও ২০২০ সালে সুইডেনে একই কাজ করেছিল উগ্রপন্থীরা। এ নীতিহীন ন্যক্কারজনক অপকর্মের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার সৃষ্টি হয়েছিল। যাতে বহু মানুষ নিহত হয়েছে। ফলে শুধু মুসলমান নয়, বরং বিশ্বের শান্তিকামী দেশ ও মানুষ থেকে ধিক্কার ও ঘৃণা কুড়িয়েছিল সুইডেন। এই নিন্দনীয় কাজ প্রতিটি মুসলমানসহ বিশ্বের সকল বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে আঘাত করেছে। সুইডেনের মতো দেশগুলো নিজেদের সভ্য ও শ্রদ্ধাশীল হিসেবে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপনের প্রয়াস চালিয়ে আসছে, কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর এমন ঘৃণ্য আঘাত কীভাবে তাদের দেশ ও জাতিকে সভ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তা বিবেকসম্পন্ন মানুষের বোধগম্য নয়। এগুলো কোনোভাবেই বাক-স্বাধীনতা নয়; বরং বাক-স্বাধীনতার নামে মারাত্মক ধৃষ্টতা। এক্ষেত্রে সুইডেন সরকারের নীরব ভূমিকা বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছে। এগুলো কি শুধু অবমাননা, নাকি এর পেছনে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে তা বিবেচনায় নেয়ার জন্য আমরা মুসলিম নেতাদেরসহ বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একইসাথে এমন নিকৃষ্ট কর্মকা- বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে জাতিসঙ্ঘ, ওআইসি, আরবলীগসহ সকল মুসলিম দেশ, নেতাদের ও শান্তিকামী মানুষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
নেতারা আরো বলেন, মুসলিমরা শান্তিতে বিশ্বাসী। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, মুসলিমদের জীবনের চেয়েও প্রিয় পবিত্র কুরআন অবমাননা করলে আমরা চুপ থাকব; বরং সুশৃঙ্খল পন্থায় এর প্রতিবাদ জানানো প্রতিটি মুসলমানের ঈমানেরই দাবি। আমরা অবিলম্বে পবিত্র কুরআনে অগ্নিসংযোগকারীদের গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় এর ফলে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায়ভার সুইডেন সরকারকেই নিতে হবে। তাদেরকে সন্ত্রাসীদের কাতারেই বিবেচনা করবে বিশ্ববাসী।