তার সকালটা শুরু হয় মাথায় একরাশ চিন্তা নিয়ে। দু’বেলা দু’মুঠো আহার, কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহন করলেও শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অপলক তাকিয়ে থাকা। বিবাহিত হয়েও বাপের সংসারে বোঝা হয়ে রয়ে যাওয়া ।এ যেন ভাগ্য বিড়ম্বনার এক করুণ গল্প। আর এই গল্পের চরিত্রটি কাল্পনিক নয় বাস্তব। জন্ম থেকেই তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী একজন মানুষ। বলছি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের উল্ল্যা গ্রামের নুরুল ইসলাম ও লিলি বেগম দম্পতির ৭ সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান সাক্ষী খাতুন নামের ২৭ ইঞ্চি উচ্চতার এক নারীর জীবন সংগ্রামের গল্প। জন্ম থেকে দুইটি পা নেই প্রতিবন্ধী স্বাক্ষী খাতুনের(৩৩)। উচ্চতায় মাত্র ২৭ ইঞ্চি লম্বা তিনি। মানুষ তার নিজ পা দিয়ে চলাফেরা করলেও সাক্ষী খাতুনকে চলতে হয় দুই হাতে ভর করে। তিনি সংসারে প্রয়োজনীয় সব কাজ নিজেই করে থাকেন।শারীরিকভাবে উচ্চতায় কম ও প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও পরিবার তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করায়। গত ৮ বছর আগে সাক্ষী খাতুনের বিয়ে হয় পাশের কোলা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের আখের আলীর সাথে। দীর্ঘদিন ঘরসংসারের পর স্বাক্ষী খাতুন গর্ভবর্তী হন। গত তিন মাস আগে তার কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। বিয়ে হলেও তার সংসার জীবন কাটে উল্ল্যা গ্রামে বাবার বাড়িতেই। দিনমজুর স্বামীকে জীবন-জীবিকার তাগিদে অধিকাংশ সময় থাকতে হয় বাইরে। দরিদ্র কৃষক পিতার সংসারে জন্ম থেকেই বোঝা হয়ে আছেন সাক্ষী খাতুন। এই সংসারে তার শিশু সন্তান বোঝার পাল্লাটাকে যেনো আরো ভারি করেছে।যে কারণে নিজের জীবনের অনাগত দিনগুলো কথা চিন্তা করতেই কপালে ভেসে ওঠে চিন্তার ভাঁজ। সমাজের কাছেও প্রতিবন্ধী এই নারী যেনো বোঝা। কেউ খোজ রাখে নি তার। একটিমাত্র প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড ছাড়া আর কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে সাহায্য সহযোগিতাও মেলে নি কপালে। তাই অনিশ্চয়তা, শংশয় ও সংকটে কাটছে প্রতিবন্ধী এই নারীর জীবন। সাক্ষী খাতুন জানান, দরিদ্র পিতার ঘরে ও স্বামীর কাছে আর বোঝা হয়ে থাকতে মন চান না। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও অনেকে তো কাজ করছেন। আমিও তাদের মতো কিছু করতে চাই। আর এর জন্য প্রয়োজন সহযোগিতার। আমার শিশু সন্তানকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সাক্ষী খাতুনের পিতা নুরুল ইসলাম জানান, অভাব অনটনের সংসারে আমার এই প্রতিবন্ধী মেয়ে ও তার শিশু সন্তানকে নিয়ে আমরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। সরকার যদি আমার এই মেয়ের দিকে একটু তাকাত তাহলে ওদের জীবনটা সহজ হতো।