ভোলায় গ্যাস ও যোগাযোগ সম্ভাবনা থাকলেও প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও যথাযথ উদ্যোগ নেই। ধান, সুপারি, গোলা এই তিন মিলে ভোলা। উপকূলীয় জেলা ভোলার কৃষি নিয়ে এমন প্রবাদ প্রচলিত থাকলেও সেই ভোলার শিল্প সম্ভাবনা যেন অনেকটাই আড়ালে রয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস, স্থল ও নৌ যোগাযোগ, কৃষিভিত্তিক শিল্পের কাঁচামালসহ নানা সুবিধা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও যথাযথ গুরুত্বের অভাবে ভোলায় এখনো বড় শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। বিশিষ্টজনরা বলছেন, যথাযথ পরিকল্পনা নেওয়া হলে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ভোলার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেশের অর্থনীতিতেও বড় ভূমিকা রাখবে। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত এ জেলায় দেশের অন্যতম বৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র শাহবাজপুর গ্যাসকূপ আবিস্কৃত হলেও এখানে গড়ে ওঠেনি গ্যাসভিত্তিক ভারী কোনো শিল্প-কলকারখানা। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের সংযোগ স্থাপন করেছে এ জেলা। ভোলার ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম ও যশোরসহ ২১টি জেলায় সড়কপথে যাতায়াতে ৪৫০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যায়। তিনি আরো বলেন, ভারতের আগরতলা থেকে পশ্চিমবঙ্গে যেতে সময় লাগে চার দিন। কিন্তু ভোলায় ট্রানজিট দিয়ে বাংলাদেশে আসতে সময় লাগবে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এতে ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরো সুদৃঢ় হবে। মেঘনার গভীরতার কারণে নদীপথে এবং সড়কপথে চট্টগ্রাম ও মংলা থেকে অন্য জেলার চেয়ে এ জেলায় কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে যাতায়াতের সুবিধা রয়েছে অনেক বেশি।
আর সে কারণেই অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভোলা একটি সম্ভাবনাময় জেলা। এদিকে, ভোলার গ্যাস অবিলম্বে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ভোলাবাসী। এ দাবিতে গত কয়েকদিন আগে ভোলা শহরের কে জাহান মার্কেটের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সংশ্লিষ্টরা, গ্যাস সরবরাহ ঠিকাদার ও ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস চাই কমিটি এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে। ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস চাই কমিটির আহ্বায়ক মোবাশ্বির উল্যাহ চৌধুরী বলেন, ভোলায় প্রাপ্ত গ্যাস দিয়ে আগে ভোলার গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করতে হবে এবং ভোলার শিল্প কারখানায় দিয়ে এরপর বাইরে নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) জানায়, ভোলায় বিপুল পরিমাণ গ্যাস পাওয়া গেছে। এখান থেকে দৈনিক ২০ মিলিয়ন বা ২ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে বলে জানিয়েছে বাপেক্স কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, এখন পর্যন্ত ৮টি কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট গ্যাস মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫ টিসিএফ ঘনফুট। বাপেক্সের মহাব্যবস্থাপক ভূতত্ববীদ মোঃ আলমগীর বলেন, নতুন করে বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের অনুসন্ধান চলছে। এ বিষয়ে ভোলার সাবেক মেয়র ও চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর বলেন, বৃহত্তর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য ভোলায় পর্যাপ্ত গ্যাস রয়েছে। এখানে মাটির নিচে কোটি কোটি টাকার গ্যাস পড়ে থাকলেও তা কোনো কাজে আসছে না। নামমাত্র গ্যাসভিত্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপন ছাড়া আর কিছুই হয়নি। সেটিও প্রায় বিকল হয়ে পড়ে থাকে। এখানে অন্তত হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, ভোলার আরেকটি বড় সমস্যা নদী ভাঙন। নদী ড্রেজিং করে উপকূলীয় অঞ্চলের নাব্যতা ফিরিয়ে আনারও দাবি জানান তিনি। ভোলার যোগাযোগব্যবস্থা বাণিজ্যিক সম্ভাবনায় কাজে লাগানোর দাবি জানিয়ে ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল হক অনু এ প্রতিবেদক কে বলেন, ভোলায় পর্যাপ্ত গ্যাস থাকা সত্বেও এই গ্যাস এখনো জাতীয় গ্রিডের বাইরে আছে। ফলে অলস পড়ে আছে। তিনি আরও বলেন, ভোলার এই গ্যাস ব্যবহার করা জরুরী। এদিকে, ভোলার গ্যাস গৃহস্থলি কাজে ব্যবহারের জন্য ভোলায় হাজার হাজার মানুষ সুন্দরবন গ্যাস কম্পানি লিমিটেডের কাছে আবেদন করলেও সুন্দরবন গ্যাস কম্পানি গ্যাস সংযোগ দিচ্ছেনা। তাই, অবিলম্বে এই গ্যাস ভোলায় গৃহস্থলি কাজে ব্যবহারের দাবি জানান নজরুল হক অনু। ভোলার নদী ভাঙন সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাবে সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এম ফারুকুর রহমান বলেন, নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, সাইক্লোন শেল্টার পুনর্র্নিমাণ ও নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা বলেন, গ্যাস দিয়ে ভোলায় ইউরিয়া সার কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, স্টিল মিল, শিপবিল্ডিং, টেক্সটাইল মিল, কোল্ড স্টোরেজ, অটো রাইস, অটো ব্রিকফিল্ডসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে কাজি গ্রুপ নামের একটি কোম্পানি শহরের খেয়াঘাট এলাকায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ফিশ ফিড ও পোলট্রি ফিড কারখানা তৈরির কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির উপ মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং, দক্ষিণ) মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান জানান, ভোলা সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডে জেলায় গৃহস্থলি কাজে ব্যবহারের জন্য ৫ সহস্রাধিক আবেদন জমা পড়েছে। তবে, আপাততঃ ভোলায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে।