এককালীন ফলন ও অন্যান্য ফসলের তুলনায় অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কলা চাষে ঝুঁকছেন জেলার কৃষকরা।
জেলার মধুপর, ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলার পাহাড়ি অ লের লালমাটি উপযোগী হওয়ায় কলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে। অনেক কৃষকের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও এসেছে কলা চাষে। বেশ কিছুদিন পানামা পোকার আক্রমণে কলা চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বর্তমানে পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে গেছে। প্রচলিত অন্যান্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে শ্রম ব্যয় খুবই কম। বিক্রির ক্ষেত্রেও ঝামেলা নেই। কলার বাজার দরেও সহজে ধ্বস নামে না। তাই এখন সারা বছরেই কলার চাষ করা হয়।
উৎপাদিত কলা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৭০-৮০ ভাগই যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। এছাড়াও দেশের অন্য জেলাগুলোতে ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, ফুলবাড়িয়া, সিলেট, ভৈরবসহ নানা জেলায় যাচ্ছে কলা। স্থানীয় কলার পাইকারী বাজার মধুপুরের জলছত্র, গারো বাজার এবং সখীপুর উপজেলার কুতুবপুর বাজারে সবচেয়ে বেশি কলা বিক্রি হয়। এসব হাট থেকে প্রতিদিনই বের হচ্ছে ছোট-বড় মিলে ২০-৩০ ট্রাক ভর্তি কলা। মধুপুরের জলছত্র সপ্তাহে দুুই দিনব্যাপী হাট হয়। এই দুইহাটেই কলা বিক্রি হয় প্রায় কোটি টাকার উপরে। একই চিত্র সখীপুরের কুতুবপুর এবং মধুপুরের গারো বাজারেও। দেশের বিভিন্ন অ ল থেকে পাইকার আসেন কলা নিতে।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ অ লে বারিকলা-১ ও বারিকলা-২ (আনাজিকলা), অমৃতসাগর, মন্দিরা, মন্দিরা সাগর, সবরি, চম্পা, চিনিচাম্পা, কবরি, মেহেরসাগর, বীচি কলাই ত্যাদি জাতের কলা চাষ হয়ে থাকে। প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫০ থেকে ৩৮০টি কলাগাছ রোপণ করা হয়। একটি কলা গাছে রোপণ থেকে বাজার জাত পর্যন্ত ১৫০ থেকে ২০০ টাকা খরচ হয়। প্রতিটি কলার ছড়ি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি করা যায়। এ হিসেবে প্রতি বিঘায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা কৃষকের লাভ হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কলা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলা চাষ হচ্ছে মধুপুরে। মহিষমারা, শোলাকুড়ী, বেরীবাইদ, অরণখোলা, কুড়াগাছা, কাকরাইত, ভবানীটেকী, গরমবাজার, কাউচি বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ২ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হচ্ছে।
এ বছর ঘাটাইল উপজেলায় ৯৫০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। সন্ধানপুর, সংগ্রামপুর, রসুলপুর, লক্ষিন্দর, ধলাপাড়া ও সাগরদিঘী ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি কলার চাষ করা হয়েছে। কলার চাহিদা দিন-দিন বেড়েই চলছে। সেই প্রভাব পড়েছে কলা চাষীদের মাঝেও। আগের থেকে বেশি দামে বিক্রি করতে পারছেন কৃষকরা।
মধুপুরের মহিষমারার কৃষক ছানোয়ার হোসেন বলেন, নিজের পৈতৃক জমি ও অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে আমি বিভিন্ন ফলের চাষ করছি। এবার পাঁচ বিঘা জমিতে ১৭০০ কলার চারা রোপণ করছি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ফলন এবং লাভও দুটোই ভাল হবে। এখন শীত দেখে কলার দাম একটু কম যাচ্ছে। গতমাসেও কলার বাজার অনেক ভাল ছিল। এখনও কৃষকরা ভাল দাম পাচ্ছেন। আরেক তরুণ কলা চাষী আব্দুস সাত্তার বলেন, পাহাড়ি অ ল কলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় কলা চাষে অনেক লাভবান হওয়া যায়। তাই বেকার যুবকদের চাকরির পিছনে না ছুটে কলা চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে বলেন। যাতে নিজেরাও স্বাবলম্বী হওয়া যায় আর বেকারত্ব দূর করা যায়। স্থানীয় কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই বার প্রথম তিনি সবরি কলার চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত কলা গাছগুলো সুস্থ সবল থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন। কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পেলে সামনে আরও বেশি জমিতে কলার চাষ করতে পারবেন। মধুপুরে কাকরাইত গ্রামের কলা চাষী মাসুদ রানা বলেন, আমি আনারসের পাশাপাশি কলাও পেঁপে চাষ করে থাকি। করোনার মহামারী সময় কলাসহ বিভিন্ন ফলে ব্যাপক লোকসান হয়েছিল। এ বছর কলার বাম্পার ফলন হবে আশা রাখছি এবার লাভবান হবো।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আল মামুন রাসেল জানান, এ বছর উপজেলায় কিছুটা কলা চাষ কম হয়েছে। কারণ একই জমিতে বারবার কলা চাষ করলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে পানামা পোকার আক্রমণে কলা চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবারও মধুপুর উপজেলায় ২ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হচ্ছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভালো ফলনের আশা করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আহসানুল বাসার বলেন, চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইল জেলায় ৪ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কলা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলা চাষ হচ্ছে মধুপুর উপজেলায়। মধুপুরের জলছত্রে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন কলা কিনতে এবং প্রায় কোটি টাকার কলা বিক্রি হয়ে থাকে। টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর এবং উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কলা, আনারস, পেঁপে, মালটা চাষিদের বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। যাতে চাষিরা আরও লাভবান হতে পারে।