ঢাকার ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের কেলিয়া এলাকার একটি ভুট্টা ক্ষেতে খুন হওয়া ক্লুলেস মমতাজ হত্যার রহস্য উদঘাটন ও মূলহোতা শরীফ(৩৭)কে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) দুপুরের দিকে সিপিসি-২, র্যাব-৪ এর সাভার (নবীনগর) ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খান সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান। এর আগে গত সোমবার ১৩ ফেব্রুয়ারী রাজধানীর কালশী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মমতাজ হত্যা কান্ডের রহস্য উদঘাটনপূর্বক হত্যাকান্ডের মূলহোতা শরীফ(৩৭)কে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪। গ্রেপ্তারকৃত আসামী শরীফ(৩৭) কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাধীন কাচারীকান্দি পাঁচকিত্তা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তবে তিনি বিগত ২০ বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। সে পেশায় একজন গামেন্টস কর্মকর্তা ও বিবাহিত। ভিকটিম মমতাজ বেগম(৩৩) কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাধীন রঘুনাথপুর গ্রামের হারেজ মিয়ার ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় মেয়ে। তিনি আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। সংবাদ সম্মেলনে সিপিসি-২, র্যাব-৪ এর সাভার (নবীনগর) ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খান বলেন, ভিকটিম মমতাজ ও আসামী শরীফ সম্পর্কে বিয়াই-বিয়ান এবং দেশের বাড়ী একই এলাকায় হওয়ার সুবাদে ঘটনার এক মাস পূর্বে ভিকটিম মমতাজকে আশুলিয়ায় এনে গামেন্টসে চাকরী দিয়ে দেয় শরীফ। চাকরী দেওয়াসহ মমতাজকে আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া করে দেয়। সেখানে শরীফ নিয়মিত যাতায়াত করতো। পরে উভয়ের মধ্যে আর্থিক লেনদেন ও অভ্যন্তরীণ মনোমালিন্যের জেরে ভিকটিম মমতাজকে শরীফ হত্যা করার পরিকল্পনা শুরু করে। পরে শরীফ তার পরিকল্পনা মতে মমতাজের ভাড়া বাসা পরিবর্তন করে নতুন স্থানে বাসা ভাড়া করে দেয়, একই সাথে মমতাজের নিজের নামে রেজিষ্টারকৃত মোবাইল সীম দিয়ে শরীফ মমতাজের সাথে যোগাযোগ করে। এর পরে শরীফ মমতাজকে হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরাপদ একটি জায়গা খুঁজতে থাকে। ঘটনার আগের দিন ০৭ জানুয়ারি শরীফ ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের কেলিয়া এলাকার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উত্তর পাশের ঘটনাস্থল ভুট্টা ক্ষেত পরিদর্শন করে যায়। পর দিন ০৮ জানুয়ারি বিকাল বেলা মমতাজকে বেড়ানোর কথা বলে ধামরাই এলাকায় নিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক তারা ঘুরতে ঘুরতে ঘটনাস্থল ভুট্টা ক্ষেতের দিকে যায় এবং ঘটনাস্থলে পৌঁছালে শরীফ তার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার সাথে থাকা রশি দিয়ে প্রথমে ভিকটিমের গলায় পেঁচিয়ে ধরে ও ভিকটিম যেন চেঁচামেচি করতে না পারে সেজন্য ভিকটিমের পরিহিত ওড়না দিয়ে মুখে বেধে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। হত্যার পর শরীফ ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইলটি ঢাকা-আরিচা মড়াসড়কের সিএনবি নামক স্থানে ফেলে দিয়ে চলে যায় এবং কাউকে কোন কিছু বুঝতে না দিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করে। পরবর্তীতে র্যাব তার বিষয়ে অনুসন্ধান করছে বুঝতে পেরে শরীফ আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় শরীফ সিলেট, গাজিপুর, ঢাকা মালিবাগ, মোহাম্মদপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় পরিচয় গোপন করে পালিয়ে থাকে এবং সে তার নাম পরিবর্তন করে জোবায়ের নামে পরিচয় দেয়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি র্যাব-৪ রাজধানীর কালশী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাব-৪। উল্লেখ্য, গত ০৯ জানুয়ারী ২০২৩ তারিখ বিকাল ৩টার দিকে ঢাকার ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের কেলিয়া এলাকার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উত্তর পাশের একটি ভুট্টা ক্ষেত থেকে গলায় ওড়না পেছানো অজ্ঞাতনামা এক যুবতীর(৩৩) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। উদ্ধারকালে র্যাব-৪ এর একটি দল আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় উদ্ধারকৃত লাশটির পরিচয় সনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং এই হত্যা কান্ডের রহস্য ও আসামীকে গ্রেপ্তারের জন্য ছায়া তদন্ত শুরু করে।