ন্যায্য মূল্য না পাওয়া ও সঠিক সময়ে মূল্য পরিশোধ না করায় জামালপুরের জিল বাংলা সুগার মিলে আখ সরবরাহ করছেন না কৃষকরা। এর ফলে দেশে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যঘাত ঘটছে।কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জিল বাংলা সুগার মিলে আখ সরবরাহ করলে ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায় না এবং সঠিক সময় মূল্য পরিশোধ করে না মিল কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া চিনির চেয়ে গুড় উৎপাদন করলে লাভ বেশি হয়, তাই ক্রাশার পাওয়ার মিল মালিকদের আখ দিচ্ছেন চাষিরা। আবার অনেক চাষি নিজেরাই ক্রাশার পাওয়ারের মাধ্যমে গুড় তৈরি করছেন। কৃষক মানিক তালুকদার বলেন, “আমরা গরীব মানুষ। আমরা ঋণ করে আবাদ করি। ওই জায়গা থেকে নগদ টাকা দিবো। আমরা ঋণ শোধ করবো। মিল আমাদের ২ থেকে ৩ মাস পর টাকা দেয়। এটা দিয়ে ঋণও শোধ হয় না। আমরা পরিবার নিয়েও চলতে পারি না। এ সমস্যার কারণে আমরা ক্রাশার মিলে আখ দেই।”বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের আখ চাষি ফজর আলী বলেন, “আখের আবাদ আসে এক থেকে দেড় বছরে। মিল যদি আখের দাম ঠিক মতো না দেয়, তাহলে মিলে আখ কীভাবে দেব। গুড়ওয়ালাদের দিলে গাড়ি ভাড়াও লাগে না। ৪০ মণ আখে আমরা ১১ হাজার টাকা পাই। আর মিলে ৪০ মণ আখ দিলে সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এর মধ্যে আবার গাড়ি ভাড়াও আছে।”বকশীগঞ্জের মেরুরচর ইউনিয়নের গুড় উৎপাদনকারী ফজর আলী বলেন, “মেরুরচর ইউনিয়নেই ২০টি কলে আখ মাড়াই হয়। প্রতিদিন ২ হাজার ৫০০ মণ আখ মাড়াই করা হয়। এ অবস্থা চলে চার থেকে পাঁচ মাস মাড়াই করে গুড় প্রস্তুত করে বছরজুড়েই বিক্রি করা হয়। এ ছাড়াও দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ক্রাশার পাওয়ারের মাধ্যমে গুড় প্রস্তুত করা হয়।”এ বিষয়ে জিল বাংলা চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বিক হাসান জানান, চাষিদের নানা প্রলোভনসহ অতিরিক্ত মুনাফার ফাঁদে ফেলছে ক্রাশার পাওয়ারে গুড় প্রস্তুতকারীরা। ফলে কৃষকরা তাদের ফাঁদে পা দিয়ে মিলে আখ সরবরাহ বন্ধ করে দেন। বিভিন্ন সময় এসব অবৈধভাবে গুড় উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও গোপনে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।রাব্বিক হাসান আরও বলেন, “কৃষকদের নতুন করে সচেতন করা হচ্ছে। আগামীতে চাষিরা উৎসাহ নিয়ে আখ মিলে সরবরাহ করবে। যথাসময়ে যেন চাষিরা সঠিকভাবে মিলে আখ সরবরাহ করে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”