ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলে রাতভর নির্যাতনের ঘটনার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফুলপরী শনিবার (৪ মার্চ) ক্যাম্পাসে ফিরবেন। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ক্যাম্পাস ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন। ক্যাম্পাসে ফিরে নতুন আবাসিক হলে উঠার জন্য আবেদন করার পাশাপাশি সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলবেন তিনি। দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের পরিবর্তে তিনি উঠতে চান বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে। নির্যাতনের শিকার হওয়া শিক্ষার্থী ওই রাতের ঘটনার ভয়ে তার গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার শিবপুর গ্রামে চলে যান। শনিবার তিনি সেখানেই থেকে আসবেন। ওই ঘটনায় ক্যাম্পাসে অভিযোগ করার পর তদন্ত কমিটি ডাকলে গ্রামের বাড়ি থেকে তিনবার ক্যাম্পাসে এসেছিলেন তিনি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফুলপরী জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাকে ফোন দিয়েছিল। নিরাপত্তার জন্য দুই জেলার পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়েছে বলে জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে। আগামীকাল (শনিবার) আমি ক্যাম্পাসে যাব। দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল থেকে মাইগ্রেশন করে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকব।’ এ বিষয়ে ভিসির দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক ড. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। তার নিরাপত্তার জন্য রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের গণরুমে ডেকে নিয়ে ওই ছাত্রীকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ নেত্রীর নাম সানজিদা চৌধুরী অন্তরা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার সহযোগী তাবাসসুম ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী ছাত্রীও একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন নির্যাতনের শিকার ছাত্রী।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম রাত ৮টায় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রজাপতি-২ রুমে যেতে বলেন। অসুস্থ থাকায় সেদিন তিনি যেতে পারেননি। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রীকে হল থেকে নামিয়ে দেয়ার হুমকি দেন তাবাসসুম। ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রথম দফায় র্যাগিং করে তাকে হল থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে হলের প্রভোস্টের সহযোগিতায় তখন সেটা সম্ভব হয়নি। পরদিন রোববার ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৭-৮ জন মিলে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে গণরুমে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। এ সময় তাকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারা হয় এবং মুখ চেপে ধরে গালিগালাজ করা হয়। এমনকি তাকে ময়লা গ্লাস মুখ দিয়ে পরিষ্কার করতে বলেন সানজিদা। পরে ওই ছাত্রীকে জামা খুলতে বলেন অভিযুক্তরা। জামা না খুললে পুনরায় মারতে থাকেন তাকে। এরপর জোর করে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেন তারা। এ ঘটনা কাউকে বললে হত্যার হুমকিও দেয়া হয় ভুক্তভোগীকে।