মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫০ অপরাহ্ন

মহাকালগড়ে শাহ মখদুম রুপোশ (রহ.)

এসএম রশিদ :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০২৩

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ইসলাম ধর্মের পতাকা হাতে যে আউলিয়ারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে সবার আগে উচ্চারিত হয় যে নামটি তিনি হযরত শাহ মখদুম রুপোশ (রহ.)। গবেষক প্রতœতত্ত্ববিদ মৌলভী শামসুদ্দিন আহমদ তার ইন্সক্রিপশনস অব বেঙ্গল গ্রন্থে তাকে শাহ দরবিশ নামে সম্বোধন করেছেন। উল্লেখ্য, শাহ মখদুম (রহ.)-এর সমাধি ভবনের প্রবেশপথে মির্জা আলী কুলী বেগ কর্তৃক স্থাপন করা শিলালিপিতেও ‘শাহ দরবিশ’ নামটি উল্লেখিত আছে। ‘রুপোশ’ শব্দটি ফার্সি, এর অর্থ মুখ আবরণকারী ব্যক্তি। এটি আসলে তার উপাধি। অনেক প-িতের মতে, তার মূল নাম সৈয়দ আবদুল কুদ্দস। বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘বিদ্যার্জনের পর তিনি ‘কুদ্দুশা শারাহ’ নামে অভিহিত হন। ‘কুদ্দুশা শারাহ’ মানে চিরস্থায়ী হোক তার রহস্য। তিনি ৬১৫ হিজরির ২ রজব বাগদাদ শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। হযরত শাহ মখদুম রুপোশ (রহ.) ছিলেন বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর পুত্র আজাল্লা শাহের মেঝ পুত্র। শাহ মখদুম রুপোশ (রহ.) যখন রাজশাহী এসেছিলেন, তখন এ শহরের নাম ছিল মহাকালগড়। পরবর্তী সময়ে তা রামপুর-বোয়ালিয়া নামে পরিচিত হয়। কথিত আছে, বর্তমান দরগাপাড়া এলাকায় মহাকাল দিঘী নামে একটি বড় দিঘী ছিল। এখানে ছিল দেও রাজার বাড়ি। তাদের মধ্যে নরবলি দেয়ার প্রচলন ছিল। একসময় কয়েকজন মুসলিম ধর্মপ্রচারক এখানে এলে তাদের বলি দেয়া হয়। এ খবর বাগদাদ শরীফে পৌঁছলে হযরত তুরকান শাহকে রামপুর-বোয়ালিয়ায় প্রেরণ করা হয় ধর্মপ্রচারের জন্য। সময়টা ছিল ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষার্ধ্ব। মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া লিখেছেন, ‘সে সময়ে ওই স্থানের তান্ত্রিক রাজা অংশুদেও চন্ডবন্দী বর্মভোজ এবং তার ভাই অংশুদেও খের্জুরচন্ড খড়গ বর্মগুজভোজ তাদের দেবতা মহাকালদেবের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য মানুষ ও শিশুদের বলি দিতেন। দরবেশদের সঙ্গে রাজার সংঘর্ষ বাঁধে এবং যুদ্ধে দরবেশরা বহু হিন্দুকে হত্যা করেন। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে অসমযুদ্ধে দরবেশরা সবাই নিহত হন। কথিত আছে, রাজার অনুসারীরা শাহ তুরকানের দেহ দেবোদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতে চেষ্টা করে, কিন্তু বহু চেষ্টা সত্ত্বেও তা স্থানান্তর করতে ব্যর্থ হয়। অতঃপর তারা তার দেহ সেখানেই সমাহিত করে। কবরস্থানটি শাহ তুরকান শহীদের আস্তানা নামে খ্যাত হয়। আনুমানিক ৬৭৭ হিজরিতে (১২৮৮ খ্রি) শাহ তুরকান নিহত হন। রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসের পশ্চিমে একটি সাধারণ ভবনে তার মাজার অবস্থিত।’
হযরত তুরকান শাহের নিহত হওয়ার খবরে হযরত শাহ মখদুম রুপোশ (রহ.) রামপুর-বোয়ালিয়ায় আসেন। কথিত আছে, সঙ্গীসহ তিনি চারঘাটের বাঘায় অবস্থান নেন ও পদ্মার তীরে কেল্লা নির্মাণ করেন। এখান থেকে বেশ কয়েক দফা লড়াই করে তিনি স্থানীয় শাসকদের পরাজিত করেন। বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া লিখেছেন, ‘মহাকালগড়ের যুদ্ধের শহীদদের কবর মখদুম মাজার প্রাঙ্গণে আজও বিদ্যমান, যা সে যুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। মখদুম (রহ.) বিজয়ীর বেশে মখদুম নগরে ফিরে গেলেন। এ শুভ সংবাদে মখদুম নগরে আল্লাহ রাসুলের জয়ধ্বনী পড়ে গেল। এ বিজয়ের স্মৃতি রক্ষার্থে দ্বীন ইসলামের নামে ৭২৬ হিজরিতে এক প্রকা- ও অতি উচ্চ বিজয়ী সদর দরজা প্রস্তুত করা হলো। ওই দরজার পাথরফলকে সে বৃত্তান্ত লেখা ছিল। এ তোরণের ধ্বংসাবশেষ কালের সাক্ষী হয়ে আজও মখদুম নগরে পদ্মার তীরে বিদ্যমান। মখদুম রুপোশ (রহ.)-এর বাহন ছিল দুটি কুমির ও দুটি বাঘ। এ কুমির দুটি বোঁচা-বুচি নামে পরিচিত ছিল। এ কুমিরের পিঠে চেপে তিনি জলপথে যাতায়াত করতেন। এ কুমিরের কবর আছে শাহ মখদুমের মাজার প্রাঙ্গণে। মহাকালগড়ের বিজয়ের পাঁচ বছরের মাথায় ৭৩১ হিজরির ২৭ রজব হযরত শাহ মখদুম রুপোশ (রহ.) ইন্তেকাল করেন। স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে তার ব্যবহূত খড়ম, বসার পিঁড়ি, পাগড়ি ও কোরআন শরীফ সংরক্ষিত আছে। প্রতি বছর ওরসের দিন এগুলো প্রদর্শন করা হয়। – সূত্র: দৈনিক বণিকবার্তা, সিল্করোডএসএম রশিদ: লেখক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com