শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৮৭তম সভা অনুষ্ঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে দ্রুত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে -আমান শ্রীমঙ্গলে নারী চা শ্রমিক-কর্মজীবী নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য নিয়ে সংলাপ কালীগঞ্জে সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম : আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বগুড়ার শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত-নিহতদের স্মরণসভা দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে-রেজাউল করিম বাদশা দুর্গাপুরে আইনজীবীদের মানববন্ধন কয়রায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণ সভা ও সাংস্কৃতিক ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মুন্সীগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের প্রতিবাদে জলঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ দুর্গাপুরে শেষ হলো দুইদিন ব্যাপি কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ

জামালপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে পেটে গজ রেখেই অস্ত্রোপচারের পর সেলাই

এম এ কাশেম জামালপুর :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩

পিত্তথলির অসুখ নিয়ে জামালপুর ও ময়মনসিংহে দুটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসক ও চিকিৎসার অবহেলার শিকার হয়ে বর্তমানে মৃত্যুশয্যায় কাতরাচ্ছেন জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার রওশন আরা(২৮) নামের দুই শিশু সন্তানের মা। তিনি জামালপুরের মেলান্দহ পৌরসভার ফুলছেন্না গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাসুম আলীর স্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পুনরায় তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তার স্বামী মাসুম আলী স্ত্রীর জীবন-মৃত্যু নিয়ে দু:শ্চিন্তায় ভুগছেন। দুটি হাসপাতালেই চিকিৎসক ও চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগের পাশাপাশি তার স্ত্রীর সুচিকিৎসার আকুতি জানিয়েছেন ভুক্তভোগির স্বামী। জানা যায়, রওশন আরা(২৮) দীর্ঘদিন ধরে পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন। গত ১৯ জানুয়ারি তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে এবং বাইরের বেসরকারি ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে তার পিত্তথলিতে বড় আকারের পাথর শনাক্ত হয়। ৩১ জানুয়ারি জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে তার অস্ত্রোপচার করে পিত্তথলির পাথর অপসারণ করেন। গত ৩১ জানুয়ারি হাসপাতালে থাকা কর্তব্যরত সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও তার সহকারী চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারের কয়েক ঘন্টা পর রোগীর জ্ঞান ফেরার পর থকেই রোগীর পেট ফুলতে থাকে এবং রোগী অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন। একপর্যায়ে রোগীর পেট একজন গর্ভবর্তী নারীর পেটের মতো অস্বাভাবিক ফুলে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অস্ত্রোপচারের ছয় দিনের মাথায় ৬ ফেব্রুয়ারি রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। নিরুপায় হয়ে রোগীর স্বজনরা রোগীকে ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করান। রোগীর স্বামী মাসুম আলী জানান, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর হাসপাতালেই পুনরায় আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান ও অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রোগীর পেটে গজ ও প্রচুর পরিমাণ তরল পদার্থ শনাক্ত হয়। রোগীর পেট ফোলা অব্যাহত থাকে। রোগীর এরকম জটিল পরিস্থিতিতেও সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা জরুরি কোন সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় ভর্তির নয়দিনের মাথায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে করা অস্ত্রোপচারের স্থান সামান্য ফেটে দুর্গন্ধসহ তরল পদার্থ বের হতে থাকে। এ অবস্থায় সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অনেক অনুনয় বিনয় করেও পাত্তা না পেয়ে রোগীর স্বামী মাসুম আলী হাসপাতালের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে দেখা করে তার স্ত্রীকে জরুরি উন্নত চিকিৎসাসেবা দিয়ে বাঁচানোর জন্য আকুতি করেন। পরে ওই উর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে ১৭ ফেব্রুয়ারি রোগীর দেহে অস্ত্রোপচার করে প্রচুর তরল পদার্থ ও বেশ বড় আকারের গজকাপড় অপসারণ করেন। অস্ত্রোপচারের পর রোগীর দুই পাশের পেট ছিদ্র করে নলের সাহায্যে তরল পদার্থ বের হওয়ার পথ করে দেন। এই অবস্থায় রোগীর পেট ফোলা কমলেও খুবই অল্প সময়ের মধ্যে দুই দফা অস্ত্রোপচারের কারণে রোগী আরো বেশি দুর্বল ও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাসুম আলী আরো জানান, রোগী পরিপূর্ণভাবে সুস্থ না হয়ে উঠতেই ময়মনসিং মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ অস্ত্রোপচারের ১৩ দিনের মাথায় রোগীকে ছাড়পত্র দেন ২ মার্চ। এ অবস্থায় রোগীকে জামালপুরের মেলান্দহে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান রোগীর স্বজনরা। বাড়িতে নেওয়ার পর রোগী সামান্য তরল খাবার ছাড়া কিছুই খেতে পারছিলেন না। রোগী ফের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বজনরা তাকে ফের জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করান। ওই ওয়ার্ডের ২৩ নম্বর বিছানায় রোগী রওশন আরা মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। মাসুম আলী অভিযোগ করে বলেন, আমার স্ত্রী রওশন আরাকে চিকিৎসা করাতে এসে নি:স্ব হয়ে পড়েছি। ইতিমধ্যে অনেক টাকা খরচ হলেও স্ত্রীকে সুস্থ করতে পারছি না। জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে আমার স্ত্রীর পেটের একটা নালী লিক করে সেখানে গজকাপড় দিয়ে চাপা দিয়ে পেট সেলাই করেছে। এরপর থেকেই রওশন আরার পেট ফুলতে থাকে। ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিয়েও জরুরি চিকিৎসা পাই নাই। রওশন আরার পেট ফেটে যাওয়ার পর অস্ত্রোপচার করেছেন। সেখানেই পেটের ভেতের একটি নালীর লিকেজ ও বড় আকারের গজকাপড় পাওয়া গেছে। এরপরও পরিপূর্ণ সুস্থ না হতেই আমার স্ত্রীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল থেকে ছাড়পত্র দিয়েছে। বাড়িতে আনার পর আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে আবার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছি। আমার স্ত্রী বাঁচবে কি না জানিনা। সে মারা গেলে আমাদের দুই শিশু সন্তান এতিম হয়ে যাবে। আমার সংসারের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমার স্ত্রীর চিকিৎসার অবহেলার সুবিচার চাই। তার উন্নত চিকিৎসা চাই। জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান রোগী রওশন আরার স্বামীর অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, রোগী রওশন আরাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করার পর আমাদের সাধ্যমত তাকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। আমরা যতই সেবা দেই, রোগীর লোকজনদের অভিযোগ করা একটি ট্রেডিশন হয়ে গেছে। রোগী পুনরায় হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছে, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক-নার্সদের বলে দিয়েছি তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। অস্ত্রোপচারের পর রওশন আরার পেট ফুলে যাওয়া এবং ময়মনসিংহে অস্ত্রোপচারে পাকস্থলীর একটি নালীর লিকেজ ও গজ কাপড় পাওয়া যায়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com