চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতার ওই কারখানার পরিচালক পারভেজ উদ্দিন সন্টুকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করায় শিল্প পুলিশের এক সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে। অরুণ কান্তি বিশ্বাস নামে শিল্প পুলিশের ওই এসআইকে সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সুলাইমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার শিল্পপতি সন্টুকে কোমরে রশি বেঁধে আদালতে নেওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় এসআই অরুণ কান্তি বিশ্বাসকে ক্লোজড করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যদি এ বিষয়ে সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া না যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, সীমা অক্সিজেন কারখানার মালিক শিল্পপতি সন্টুকে কোমরে রশি বেঁধে আদালতে হাজির করার ছবিটি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এরপর শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর আগে, মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে হোটেল পেনিসুলার সামনে থেকে সীমা অক্সিজেন কারখানার পরিচালক সন্টুকে গ্রেফতার করে শিল্প পুলিশ।
চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক জাকির হোসাইন মাহমুদ বলেন, ‘সীমা অক্সিজেন কারখানার পরিচালক পারভেজ উদ্দিন সন্টুকে বুধবার আদালতে সোপর্দ করে শিল্প পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমীর আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’ চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের এসপি বলেন, ‘সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় করা মামলাটি শুরু থেকে তদন্ত করে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ। গত ১৩ মার্চ শিল্প পুলিশ এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে। মামলার তদন্তভার নেওয়ার পরদিন ১৪ মার্চ এ মামলার অন্যতম আসামি পারভেজ উদ্দিন সন্টুকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় করা মামলাটি তদন্ত করছে শিল্প পুলিশ। ১৩ মার্চ শিল্প পুলিশের কাছে মামলাটি হস্তান্তর করা হয়।’ গত ৪ মার্চ সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে সাত জন নিহত হন। আহত হন ৩০-৩৫ জন। এ ঘটনায় কারখানার শ্রমিক মো. কাদের মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম গত ৬ মার্চ রাতে ১৬ জনের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা করেন। মামলায় সীমা অক্সিজেন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মামুন উদ্দিনকে প্রধান আসামি, কারখানার পরিচালক পারভেজ উদ্দিন সন্টুকে দুই নম্বর আসামি এবং অপর পরিচালক আশরাফ উদ্দিন বাপ্পীকে তিন নম্বর আসামি করা হয়। বাকি ১৩ আসামি কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারী, তারা দুর্ঘটনার সময় কর্মরত ছিলেন। এদিকে, ঘটনার দিনই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক। সোমবার রাতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিস্ফোরণের জন্য মালিকপক্ষ দায়ী। কারখানা ব্যবস্থাপনায় তাদের ত্রুটি ছিল।