আসন্ন রমজান উপলক্ষে দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, বাজারে কৃত্রিম সংকটরোধ, পণ্য মজুতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নতুন কৌশল প্রণয়ন করা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি মাঠে সক্রিয় থাকবে র্যাব-ভোক্তা অধিকার অধিদফতর, পাশাপাশি বাড়ানো হবে গোয়েন্দা নজরদারিও। তবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সম্ভাব্য তৎপরতার মধ্য দিয়ে বাজারে কতখানি প্রভাব পড়বে, এ নিয়ে এখনও শঙ্কায় রয়েছেন ক্রেতারা। রমজানে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিনগুণ জনবল নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করবে ডিএমপি। প্রথমবারের মতো ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে মাঠে নামবে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে ডিএমপির পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের পরামর্শ দিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, কিছুদিন আগে ডিএমপির পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ডিএমপির অনুকূলে যেন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। যদি আমরা ম্যাজিস্ট্রেট পেয়ে যাই, তাহলে তাদের সহায়তায় এবং পুলিশের সহায়তায় ঢাকা মহানগরের প্রত্যেকটি স্থানে প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করা হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এসব অভিযান পরিচালনা করা হবে। সম্ভাব্য অভিযানে নতুন নতুন উদ্যোগ যুক্ত করা হবে উল্লেখ করে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অবশ্যই এবার ভিন্নভাবে ও ভিন্ন কৌশলে অভিযান পরিচালিত হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সেই ভিন্ন কৌশল এখনই আমরা প্রকাশ করছি না।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তদারকিতে থাকবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে এবার আমাদের একাধিক টিম মাঠে কাজ করবে। র্যাব মূলত ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। মার্কেট-শপিংমলে আমাদের যে ক’জন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন, তাদের নির্দেশনা মোতাবেক নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
আসন্ন পবিত্র রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে কোনও মহল যাতে কোনোধরনের ইস্যু তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে, সেজন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দেওয়া নির্দেশনায় তিনি ‘ছাত্র ও শ্রমিক সংশ্লিষ্ট বিষয়’, ‘যে কোনও দুর্ঘটনা’, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ ও ‘নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট’কে কেন্দ্র করে কোনও মহল যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকেও সতর্ক থাকতে বলেছেন। এর আগে, চলতি মাসের শুরুর দিকে পুলিশ সদর দফতর থেকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খাদ্যের অপর্যাপ্ততা ইত্যাদি বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন কোনোধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। নিত্যপণের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নতুন তৎপরতা শুরু হলেও সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। কেউ-কেউ মনে করছেন, সাধারণত বাজার নিয়ন্ত্রণে নানামুখী আলোচনা হলেও বাস্তবে কার্যকরিতা দেখা যায় না। সেক্ষেত্রে আসন্ন রমজানেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ অসাধ্য হতে পারে। শুক্রবার (১৭ মার্চ) সকালে রাজধানীর শুক্রাবাদ কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী মুজাহিদ মিয়া। তার মন্তব্য, ‘গত বছরের নভেম্বর থেকে বাজারদর ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। এ বিষয়টি আমরা বাজারে যারা আসি, সবাই জানি। বাজার আসলে নিয়ন্ত্রণ করছে কারা, ব্যবসায়ীরা। সরকারের কতটুকু হস্তেক্ষেপ আছে বা আমাদের করণীয় কী- এগুলো যতটুকু টিভি-টকশোতে আলোচনা হয়, বাজারে এসে এর কোনও প্রতিফলন আমরা পাই না।’
‘বাজারে এসে যখন মানিব্যাগ থেকে টাকাগুলো বেরিয়ে যায় তখন বুঝতে পারি যে— আমরা কতটুকু অসহায়, কতটা কষ্টের মধ্যে আছি। শুধু সরকারকে দোষারোপ করলে হবে না। এ সমস্যা সমাধান করতে হলে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে’, বলছিলেন মুজাহিদ মিয়া। আরেক ক্রেতা শুক্লা ভট্টাচার্য বলেন, ‘যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে সেভাবে তো মানুষের আয় বাড়ছে না। ৫০ টাকার চিনি এখন ১৫০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। বাজারে প্রশাসন এসে অভিযান চালাবে শুনলাম, কিন্তু এসবে তো কাজ হয় না। অভিযানের পর থেকে আবারও একই কাজ শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। আসলে আমাদের নীতির ঠিক নেই। নীতি ঠিক হলে সব ঠিক হবে।’ ক্রেতাদের আশঙ্কা থাকলেও ভোক্তা অধিদফতর থেকে বলা হচ্ছে, এবার সংস্থাটির প্রস্তুতি ভালো রয়েছে। বিশেষ অভিযানের মধ্য দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাসুম আরেফিন বলেন, ‘উপরের নির্দেশ অনুযায়ী অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার আমাদের প্রস্তুতিটা ভালো রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে, আমাদের যেখানে যেখানে গ্যাপ রয়েছে সেগুলো পূরণ করার জন্য কাজ করছি।’ তিনি আরও জানান, বাজারের মনিটরিং করতে এবার স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দেশজুড়ে ভোক্তা অধিদফতরের তিনগুণ কর্মী মাঠে থাকবে। এবার বিশেষভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে।