বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

তিন মাসে ব্যাংকগুলোর গ্রামীণ আমানত কমেছে ৪,২৯৪ কোটি টাকা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০২৩

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি পার করছে বাংলাদেশ। দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাংকে থাকা স য়ও ভেঙে ফেলতে হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব দেখা যাচ্ছে ব্যাংক আমানতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ব্যাংক খাতে শ্লথ হয়ে এসেছে আমানতের প্রবৃদ্ধি। বিশেষ করে শহরা লের তুলনায় গ্রামে ব্যাংকের আমানত কমছে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশের ব্যাংক খাতে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট আমানত ছিল ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ লাখ ৪১ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা ছিল গ্রামীণ আমানত, কিন্তু ডিসেম্বরে এসে এর পরিমাণ ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর গ্রামীণ আমানত কমে গেছে ৪ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। গত সোমবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিডিউলড ব্যাংকস স্ট্যাটিসটিকসে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি খারাপ না হলে দেশের ব্যাংক খাতে আমানত সবসময়ই প্রবৃদ্ধির ধারায় থাকে। আবার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। গ্রামে ব্যাংকের আমানত না বেড়ে উল্টো কমে যাওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। গ্রামা ল থেকে ব্যাংকের আমানত সংগ্রহের প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। বিশেষ ধরনের এ সেবা চালুর পর থেকেই প্রবৃদ্ধির ধারায় ছিল গ্রামীণ আমানত। কিন্তু গত বছরের শেষ তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আমানত স্থিতি ৫০৫ কোটি টাকা কমে গেছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এজেন্টদের মাধ্যমে ৩০ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ হয়। ডিসেম্বর শেষে সেটি ৩০ হাজার ১৫৭ কোটি টাকায় নেমে আসে। এজেন্ট ব্যাংকিং আমানতের ৭৯ শতাংশই গ্রামা লের।
দেশে গত বছরের শুরু থেকেই দ্রব্যমূল্য ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে পেট্রল, অকটেন, ডিজেলসহ জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় সরকার। হঠাৎ করে জ্বালানির অপ্রত্যাশিত মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশে প্রতিটি পণ্য ও সেবার দামও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। সরকারি হিসাবেই গত বছরের আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর ডিসেম্বরে হয়েছে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। যদিও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে ১০০ শতাংশেরও বেশি।
জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব গ্রামের মানুষের স য়ের ওপর পড়েছে বলে মনে করেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘আগে রেমিট্যান্সের অন্তত ২০ শতাংশ অর্থ ব্যাংক হিসাবে আমানত হিসেবে জমা থাকত। কিন্তু এখন রেমিট্যান্সের ৫ শতাংশ অর্থও ব্যাংকে আমানত হিসেবে থাকছে না। বিদেশ থেকে অর্থ আসার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রাহক পুরো টাকাই তুলে নিচ্ছেন। জীবনধারণের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছি।’
দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংকের এ শীর্ষ নির্বাহী জানান, ইসলামী ব্যাংকে এমন অনেক গ্রাহক আসছেন, যারা তাদের দীর্ঘদিনের স য় ভেঙে ফেলছেন। অনেকে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই দীর্ঘমেয়াদি আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট/ডিপিএস) তুলে নিতে আসছেন। কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলছেন, দৈনন্দিন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় স য় ভেঙে ফেলতে হচ্ছে। তবে অল্প কিছু গ্রাহক আতঙ্কিত হয়েও আমানত তুলে নিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, দেশের মোট ব্যাংক আমানতের ৭৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ শহরা লের। বাকি ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ এসেছে ব্যাংকের গ্রামীণ শাখাগুলোর মাধ্যমে। গত বছরের শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানত বেড়েছে ১১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। ওই সময় শহরা লে ১৫ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা বাড়লেও গ্রামে ৪ হাজার ২৯৪ কোটি টাকার আমানত কমে গেছে। আবার অন্যসব শ্রেণীর ব্যাংকে আমানত বাড়লেও গত বছরের শেষ তিন মাসে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোয় কমেছে ১০ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। সূচনালগ্ন থেকে এই প্রথম ইসলামী ব্যাংকিংয়ের আমানত কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ব্যাংকে আমানত কমলে স য়পত্র বিক্রি বাড়ার কথা। কিন্তু এতেও ভাটার টান। গত জানুয়ারিতে মাত্র ৩৭ কোটি টাকার নিট স য়পত্র বিক্রি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত স য়পত্র বিক্রির চেয়ে নগদায়নই হয়েছে বেশি। এ সাত মাসে স য়পত্রের নিট বিক্রি কমেছে ৩ হাজার ৬৯ কোটি টাকার। জানুয়ারি শেষে স য়পত্র থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯৪০ টাকায় নেমে এসেছে। গত জুন শেষে স য়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের ঋণ ছিল ৩ লাখ ৬৪ হাজার ১০ কোটি টাকা।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিজস্ব আয় দিয়ে সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে না। এ কারণে মাস শেষে হাতে কোনো স য়ও থাকছে না। অনেকে তাই ব্যাংকে থাকা স য় ভেঙে ফেলছে। ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধিতে এর বিরূপ প্রভাব দৃশ্যমান। আমানতের মুনাফার ওপর সরকার বাড়তি কর আরোপ করেছে। ব্যাংক খাতে আমানত কমে যাওয়ার পেছনে এর ভূমিকাও আছে।’
অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দেশের ব্যাংক খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতা বেড়েছে। এ কারণে গত বছরের জুন থেকেই ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে নেয়ার প্রবণতা অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নোট ইস্যু করতেও বাধ্য হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬২ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল আরো বেশি।
তারল্য সংকটে পড়লে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করত। কিন্তু এক বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোই তারল্য সংকটে ভুগছে। তাদেরই এখন প্রতিনিয়ত মুদ্রাবাজার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে চলতে হচ্ছে। তারল্য সংকটের কারণে কলমানি বাজারে সুদহার রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। গতকাল একদিন মেয়াদি কলমানির সুদহার ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর সাতদিন মেয়াদি আমানতের সুদহার ৯ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। আমদানি দায়ের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি খাতের বিদেশী ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য অব্যাহতভাবে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে প্রায় সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করা হয়েছে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার। এর মাধ্যমে শুধু চলতি অর্থবছরেই ১ লাখ ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকা বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে। দেশের ব্যাংক খাতে আমানত ও তারল্য সংকটের পেছনে বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতারও ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।-বণিকবার্তা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com