রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১০ অপরাহ্ন

মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলাই শাহজাহান মিয়ার কাজ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩

একাত্তরের রণাঙ্গণে মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়া। উনার বয়স একাত্তর বছর। এই বৃদ্ধ বয়সেও একটি কাজে নেই কোনো ক্লান্তি। তাহলো বর্তমান প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা। তার কাছে যিনিই যান, তাকেই শোনান মুক্তিযুদ্ধের গল্প। এতেই আত্মতৃপ্তি খুঁজে পান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
সম্প্রতি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং বাজার এলাকার ‘মুক্তি ভবন’ গেলে কথা হয় শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে। জীবনের শেষ সময়ে এসে স্ত্রী, সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে এখানেই বসবাস করছেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়ার জন্ম ১৯৪৯ সালের ১ জুলাই কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের বাট্টা গ্রামে। বাবা সৈরত আলী ও মাতা আমেনা আক্তার খাতুনের তিন ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে বড় শাহজাহান মিয়া। ১৯৬৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি কনস্টেবল পদে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ওয়্যারলেস অপারেটরের দায়িত্বে ছিলেন শাহজাহান মিয়া। ভয়াল রাতে পাকসেনাদের সেই আক্রমণের বর্ণনায় শাহজাহান মিয়া বলেন, আক্রমণের বিষয়ে আমরা আগে থেকেই কিছুটা অনুমান করেছিলাম। ২৫ মার্চ রাত তখন প্রায় সাড়ে ১১টা। পাকিস্তানি সৈন্যরা এরই মধ্যে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আক্রমণ শুরু করে দিয়েছে। আমি ওই সময় তাৎক্ষণিকভাবে পুরো পূর্ব পাকিস্তানের সকল বিভাগ ও জেলা শহরের পুলিশ স্টেশনগুলোতে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ইংরেজিতে একটি বার্তা লিখে পাঠাই। বার্তাটি ছিল- ‘বেইজ ফর অল স্টেশন্স অব ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ, কিপ লিসেন অ্যান্ড ওয়াচ, উই আর অলরেডি অ্যাটাকড বাই পাক আর্মি। ট্রাই টু সেভ ইয়োরসেল্ভস, ওভার।’ মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখায় শাহজাহান মিয়াকে সাব-ইন্সপেক্টর পদে পদন্নোতি দেওয়া হয়। শাহজাহান মিয়া বলেন, পাকসেনাদের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে সেখানে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা। আমিও অংশ নিয়েছিলাম। পাকিস্তানি সৈন্যরা ওই রাতে বেশ কয়েকজনকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আমিও ছিলাম তাদের মধ্যে। আমাদের ওপর চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। চার দিন পর নির্যাতনের চিহ্ন শরীরে নিয়ে পাকসেনাদের নির্যাতনখানা থেকে ২৮ মার্চ বেরিয়ে আসি এবং ৩০ মার্চ আমার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার উদ্দেশে পায়ে হেঁটে রওনা দিই।
তিনি বলেন, বাড়িতে এসে নিজের চিকিৎসা করাই। বাড়িতে কিছুদিন থাকার পর ছোট ভাই নুরুল ইসলাম নুরুকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতে চলে যাই। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে ১১ নম্বর সেক্টরে অধীনে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি। এ সময় ১১নং সেক্টরের অধীনে থাকা সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকায় পাক বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন সম্মুখ সমরে অংশ নিয়েছি। একপর্যায়ে ৬ ডিসেম্বর নেত্রকোনার দুর্গাপুর থানার বিজয়পুর বিওপি আক্রমণের সময় মাইন বিস্ফোরণে আমিসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হই। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৯ ডিসেম্বর পাকসেনা মুক্ত হয় নেত্রকোনা। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য শাহজাহান মিয়াকে সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) পদে পদন্নোতি দেওয়া হয়। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট থেকেও শাহজাহান মিয়াকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। নিজ এলাকায়ও তিনি পেয়েছেন বহু সম্মাননা। বর্তমান সরকারের কাছে বীরোচিত এই মুক্তিযোদ্ধার দাবি, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে পাঠ্যপুস্তকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাকিস্তানিদের প্রথম আক্রমণ এবং পুলিশের প্রতিরোধ যুদ্ধের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।-সূত্র সারাবাংলা ১৫, ডিসেম্বর,২০২০




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com