মামলার একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় তাকে নগরীর বিশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকার তার ভগিনীপতির বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে রংপুর নগরীর বিশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকার ভগ্নিপতির বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। শিপলু রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং তাজহাট থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এর আগে বিকাল ৫টায় পুলিশ নগরীর বিশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকার কাছে শিপলুর ভগ্নিপতির বাসাটি পুলিশ ঘিরে ফেলে। তাকে দফায় দফায় বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য পুলিশ অনুরোধ জানালেও তিনি রাজি হননি। উল্টো বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তার লোকজন বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তারা বাড়ির সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখায় সেখানে রায়ট কারসহ শতাধিক পুলিশ অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে রাত ১০টা ৫ মিনিটে ওয়ার্ড কাউন্সিলর শিপলু পুলিশের সঙ্গে থানায় যেতে সম্মতি জানিয়ে নিজের প্রাইভেট কারে কোতয়ালি থানায় আসেন। তার গাড়ির সামনে ও পেছনে পুলিশের ভ্যান থানায় আসে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাউন্সিলর কার থেকে নেমে পায়ে হেঁটে থানার ওসি মাহফুজার রহমানের রুমে যান। এরপর সেই রুমের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, ওয়ার্ড কাউন্সিলর শিপলুর বিরুদ্ধে ৯টি মামলা আছে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করা মামলায় তিনি এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এ ছাড়াও তিন মামলায় তার নামে আদালত কর্তৃক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরেও তিনি আদালতে হাজির হয়নি। সে কারণে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ অনুযায়ী তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হোসেন আলী বলেন, ‘তিনটি মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। আদালতের নির্দেশ মতো তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ তিনি আর কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশের কোনও কর্মকর্তাই ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে সহকারী পুলিশ সুপার আরিফ হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আপাতত কিছু বলা যাবে না।’ এদিকে, শিপলুর শতাধিক সমর্থক থানার সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়া ইসলাম শিপুলুর বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ক্রাইম সিন অনুষ্ঠানে মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া, জমি দখল, সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করার ঘটনায় আদালত কর্তৃক এক বছরের সাজা হওয়াসহ ৯টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলায় দু বছর ধরে গ্রেফতারি পরোয়ানা আদালত কর্তৃক জারি হওয়ার পরেও তাকে গ্রেফতার না করা, নির্বাচন কমিশনে মিথ্যা তথ্য দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে ৪৩ মিনিট ব্যাপী প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। এ ঘটনায় গত বুধবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা শিপলু বাদী হয়ে যমুনা টেলিভিশনের রংপুর ব্যুরো প্রধান সরকার মাযহার মান্নানসহ তিন জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আদালতের বিচারক ড. আব্দুল মজিদ বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি তদন্ত করার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
এদিকে, সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রংপুর প্রেস ক্লাবের সামনে গণমাধ্যমকর্মীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। এই কর্মসূচিতে প্রেস ক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব, সিটি প্রেসক্লাবসহ সব সংগঠন অংশ নেয়। প্রতিবাদ সমাবেশে অভিযোগ করা হয়– ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যে আদালত কর্তৃক তিনটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকার পরেও কোন ক্ষমতা বলে তিনি প্রকাশ্য দিবালোকে আদালতে পুলিশের নাকের ডগায় এসে মামলা দায়ের করে বীর দর্পে চলে যান।’ পুলিশ কেন তাকে গ্রেফতার করেনি, বিষয়টি জানতে চান গণমাধ্যমকর্মীরা। এ সংক্রান্ত খবর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও অনলাইনে পোর্টালে প্রচারিত হওয়ার পর আসামি শিপলুকে গ্রেফতার করার অভিযান চালায় পুলিশ। সাংবাদিকদের অভিযোগ, অভিযানের সময় বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শিপলু তার সমর্থকদের নিয়ে বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে গ্রেফতার না করার ব্যাপারে হুমকি-ধামকি, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশের গাড়িতে নয়, নিজের গাড়িতে করে থানায় আসার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুব রহমান বলেন, ‘আমরা দাবি করে আসছিলাম, তিনটি মামলার আসামি কী করে ঘুরে বেড়ায়? আমাদের দাবির সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলো।’ সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানান তিনি।