স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধণের পর বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগের একসময়ের নৌরুট ও আকাশপথে দিন দিন যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। সড়কপথে পদ্মা সেতু হয়ে বরিশাল থেকে যেকোন পরিবহনে স্বল্পভাড়ায় মাত্র তিন ঘন্টারমধ্যে ঢাকার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে। বিভিন্ন নামিদামী কোম্পানীর বিলাসবহুল বাসের প্রতিযোগিতার বাজারে ক্রমেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের একসময়ের বহুল ব্যস্ততম নৌরুটে যাত্রীবাহি লঞ্চ চলাচল। সবশেষ ৫০ জনেরও কম যাত্রী হওয়ায় গত ২৭ মার্চ বিকেল থেকে ঝালকাঠী-ঢাকা নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। তবে লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে নৌরুটে যাত্রীর চাঁপ বাড়লে লঞ্চ চলবে, ঈদের পর আবারও রুটটি বন্ধ রাখা হবে। এরআগে ঢাকা-টরকী রুটসহ কয়েকটি নৌপথে যাত্রীবাহি লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে যাত্রী সংকটের কারণে ঢাকা-বরিশাল আকাশ পথেও কয়েক দফায় বিমান চলাচলের সিডিউল পরিবর্তন করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর সুফলের কারণে সড়কপথে চাঁপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আকাশ ও নৌপথে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের খ্যাতনামা অসংখ্য বেসরকারি পরিবহন কোম্পানী তাদের নতুন নতুন পরিবহন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যুক্ত করেছেন। সূত্রমতে, পদ্মা সেতুর সুফলের কারণে এবারও আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের সময় বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নদী ও আকাশপথের চেয়ে সড়কপথে ভিড় থাকবে বেশি। সেই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে ঈদকে সামনে রেখে বরিশালে পুরোনো বাস মেরামতের পর রঙ করে নতুন করার হিড়িক পরেছে। ওয়ার্কশপগুলোতে দিন-রাত চলছে লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা বাস মেরামত ও রঙের কাজ। অধিক মুনাফালোভী একশ্রেণির অসাধু পরিবহন মালিক তাদের লক্কড়-ঝক্কড় বাস সড়কে নামানোর অপতৎপরতায় মেরামত ও রঙের কাজ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশাল কে›ন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল ও রূপাতলী টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার রুটে সহ¯্রাধিক বাস চলাচল করছে। পদ্মা সেতু চালুর পর সড়কপথে যাত্রীদের চাঁপ বাড়ায় গত ছয় মাসে বরিশালে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ রুটে নতুন করে দুই শতাধিক বাস নেমেছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এ রুটে চলাচল করা অনেক পরিবহনেরই ফিটনেস নেই। গত কয়েকদিন থেকে নগরীর রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকার ওয়ার্কশপগুলোতে দেখা গেছে, পুরনো বাস মেরামতের কাজে মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ওয়ার্কশপগুলোর মিস্ত্রি ও শ্রমিকরা। এসময় বাস মেরামতের পর রঙ তুলির আঁচড়ে মুহুর্তেই পুরাতন বাস হয়ে উঠছে নতুন। মোহাম্মদ আলম নামের এক ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি বলেন, ঈদের কারণে এখন কাজের চাঁপ বেশি। সারাদিন বাসগুলো মেরামতের পর রঙের কাজ করতে হয়। ঈদের আগে সব ডেলিভারি দিতে হবে। তাই কাজের চাঁপে এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। রফিকুল ইসলাম নামের এক শ্রমিক বলেন, পরিবহনের ইঞ্জিনের কাজ, রঙের কাজ, সবশেষ সিট পাল্টানোর কাজও চলছে। যেকারনে আমাদের দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সংস্কারকরা অধিকাংশ পরিবহনের ফিটনেস নেই। পাশাপাশি অদক্ষ চালক দিয়ে এসব পরিবহন ঈদ উৎসবে যাত্রী পরিবহনের জন্য যুক্ত করা হলে বরিশাল থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত সরু মহাসড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি বাস মালিক সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। আর কাউন্টার ম্যানেজারদের দাবি, ফিটনেস ছাড়া গাড়ি নামানো হয়না। যাত্রীসেবায় ঈদের আগে এখন খুঁটিনাটি হালকা মেরামতের কাজ করানো হচ্ছে। তবে আগেভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোন নজরদারি না থাকলেও প্রায় প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনার পর গাড়ির ফিটনেস না থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসছে। এ ব্যাপারে বরিশাল বিআরটিএ’র পরিচালক মো. জিয়াউর রহমান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, সড়কে লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা বাস চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া উৎসবের সুযোগে কেউ ফিটনেসবিহীন বাস নামানোর পাঁয়তারা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ফিটনেস ও যথাযথ কাগজপত্র না থাকায় ছয় মাসে মেট্রোপলিটন এলাকায় ২৫০টি মামলা হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই আমাদের অভিযান চলছে। ঈদকে ঘিরে আমরা আরও কঠোর অবস্থানে রয়েছি। অপরদিকে পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে সড়কপথে যাত্রীদের নির্বিঘেœ যাতায়াত ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য হাইওয়ে পুলিশের সাথে সমন্বয় করে বরিশাল জেলার প্রবেশদ্বার গৌরনদীর ভূরঘাটা থেকে বাকেরগঞ্জ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার মহাসড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন জেলা পুলিশ। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণস্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের জন্য চেকপোস্ট ও রাতে পাহাড়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম।