১৭ এপ্রিল সোমবার। ঘড়িতে সময় সকাল ৯টা ১০ মিনিট পেরিয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে গিয়ে কৃষি কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। অথচ ৯টা থেকেই অফিসে তার দায়িত্ব পালন করার কথা। শুধু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাই নয় এ সময় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফরিনা পারভীন ও জাহাঙ্গীর আলমেরও দেখা মেলেনি। ওই অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী রাজশাহীতে বসবাস করেন। ১০ টার দিকে তিনি অফিসে আসবেন। ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার আগে তিনি অফিসে আসেন না বলে একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ইচ্ছেমতো অফিস করছেন উপজেলা কৃষি বিভাগের বেশির ভাগ কর্মকর্তা। এতে ভোগান্তির শেষ নেই কৃষক ও সেবাপ্রত্যাশীদের। ৯টা ২০ মিনিটে মহাদেবপুর সদর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের অফিসের দরজা বন্ধ, ঝুলছে তালা। ৯ টা ৩৮ মিনিটে খাজুর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র। খাজুর ইউপির হিসাব সহকারি মতিউর জানান, এ ইউনিয়নে তিনজন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তার স্থলে কর্মরত আছে দুইজন। ১১টা, ১২টার দিকে তারা আসতে পারে। তবে তারা কখন আসে, কখন যায় এর কোনোই ঠিক নেই। প্রকৃতিতে এখন চলছে তীর্ব্র তাপদাহ। হিটশকে (তাপজনিত ক্ষতি) ধানের শীষ চিটা হয়ে যাওয়া ও বাষ্ট রোগের আক্রমণে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে দেখা মিলছে না; চাষিরা পাচ্ছে না সঠিক পরামর্শ। অফিস ফাঁকি দেয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের জারি করা এক পরিপত্রে জানানো হয়, সকল সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের সকাল ৯ টায় নিজ দপ্তরে উপস্থিত হতে হবে। এরপর হাজিরা দিয়ে বাইরে যদি অফিসের কোনো কাজ থাকে ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত দপ্তরে অবস্থান করে সেই কাজে যেতে হবে। কিন্তু এ নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না কেউই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি কর্মচারি শৃঙ্খলা আইন ২০১৪-এ বলা হয়েছে, কোনো কর্মকর্তা কর্মচারি পরপর দুইদিন দেরিতে কার্যালয়ে আসলে তার এক দিনের মূল বেতন কাটা যাবে। অফিসের সময় শেষ হওয়ার আগে বের হয়ে গেলেও এক দিনের বেতন কেটে নিবে সরকার। কিন্তু এই আইন এর প্রয়োগ নেই। আইনটি কাগুজে আদেশে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল। উপজেলার দক্ষিণ উড়াও গ্রামের কৃষক আব্দুল গফ্ফার, নাটুয়াপাড়া গ্রামের আজাহার আলী ও দেবীপুর নীচপাড়া গ্রামের একরামুলসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ১৫-২০ জন কৃষক জানান, কৃষি অফিসের লোকজনের কখনই ফসলের মাঠে দেখা মিলে না। চাষাবাদের বিষয়ে তাদের কোনোই পরামর্শ দেওয়া হয় না বলে দাবি করেন তারা। এ ব্যাপারে কৃষকরা সংশ্লিষ্ট ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। অফিস ফাঁকির বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোমরেজ আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি মিটিং-এ ব্যস্ততার কথা জনান। জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের অফিস ফাঁকির বিষয়ে তার জানা নেই। কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের মাঠে দেখা না পাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। সরকারি অন্যান্য দপ্তরের চেয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মাঠে বেশি কাজ করেন বলে দাবি করেন এই কৃষিবিদ।