শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ১১:১৫ অপরাহ্ন

ফটিকছড়িতে অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তপ্ত শাহনগর, দানা বাধছে নানা প্রশ্নের

আলমগীর নিশান (ফটিকছড়ি) চট্টগ্রাম :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২ মে, ২০২৩

ফটিকছড়ির শাহ নগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। গত ২৭ এপ্রিল বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সহ সভাপতি শহীদুল্লাহ্ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলমকে লাঞ্চিত করেন। এতে অপমানিত হয়ে মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন তিনি। শহীদুল্লাহ্ বর্তমান স্কুল পরিচালনা কমিটির কেউ না হয়েও কেন স্কুল প্রধানকে প্রকাশ্যে নাজেহাল করলেন এটি নিয়ে রহস্য দানা বেধেঁছে। এর আগে মুটোফোনে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি রাকিব বিন তৌহিদ চৌধুরী কর্তৃক নিগৃহীত হওয়ার পর দুটি ঘটনায় মানষিক চাপ সইতে না পেরে (স্ট্রোক) হৃদযন্ত্রের ক্রীড়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর পর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির সাথে মুটোফোনে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ফাঁস হলে এলাকায় সর্ব মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে তাৎক্ষনিক স্কুল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় তারা বিতর্কিত স্কুল পরিচালনা কমিটি বাতিলের দাবি জানান। এ দিকে এ ঘটনার পর শাহনগর এলাকায় স্থানীয়দের মধ্যে পক্ষে বিপক্ষে দুটি বলয় সৃষ্টি হয়েছে। দুটি পক্ষই পরস্পরের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে একটি পক্ষ পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ কমিটির কয়েকজন সদস্যকে নির্দোষ দাবী করে ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাহনগর এলাকায় পুলিশি টহলসহ গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার বিকালে বিদ্যালয়ের সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষাভ সমাবেশে সাবেক শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার পিছনে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানান। এসময় সাবেক শিক্ষার্থী ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এ বিদ্যালয়ে বিগত ২৫ বছরের ইতিহাস খুবই দুঃখ জনক। বিগত ২৫ বছরে বহু প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক অপমানিত হয়ে বিদায় নিয়েছেন। যাদের অধিকাংশই পরিচালনা কমিটির সদস্যদেও দ্বারা নিগৃহীত হয়েছেন। শারীরিক এবং মানষিক ভাবে লাঞ্চনার শিকার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন মাষ্টার ইব্রাহিম, মাষ্টার দিলীপ, আলী আবদুল্লাহ, মাস্টার হারুনসহ আরো বেশ কয়েকজন। তবে এদের বেশীর ভাগই লাঞ্চিত হয়েছেন কমিটির সাবেক সদস্য ও সহ সভাপতি শহিদুল্লাহ’র হাতে। লাঞ্চনা আর অপমান সইতে না পেরে জাহাঙ্গীরের মত অকালে স্ট্রোক করে মারা গেছে মাস্টার দীলিপ ও ইব্রাহীম। চাকুরী ছেড়েছেন আলী আবদুল্লাহ ও হারুন। এসব নিয়েও তখনকার সময় আন্দোলন করেছিল বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুও পর পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্যের ভয়ে এখনো কোন প্রতিক্রিয়া জানাননি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকরা। আবার একটি পক্ষ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে অন্দোলন থেকে দুরে সরানোর প্রচেষ্টা করছে। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন, সিনিয়র শিক্ষক মহিউদ্দিন, কলেজ শিক্ষক আতাউল স্থানীয় চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে মুঠোফোনে শিক্ষার্থীদেরকে মানববন্ধনে আসতে বাধা প্রদান করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব বিষয় অস্বীকার করেছেন সিনিয়র শিক্ষক মহিউদ্দিন। তিনি বলেন বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এ জন্য এসএসসি পরীক্ষার্থীদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এদিকে বর্তমান সভাপতি রাকিব বিন তৌহিদ চৌধুরীকে সাবেক সহ সভাপতি শহীদুল্লাহ্ অন্তরালে পরিচালনা করছেন বলে স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি রয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল বিদায় অনুষ্ঠানে সাবেক সভাপতি এমরান চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক ব্যানার না টাংগানোর অজুহাতে শহীদুল্লাহ অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীরকে প্রকাশ্যে নাজেহাল এবং বর্তমান সভাপতি রাকিব চৌধুরী মুঠোফোনে বকাবকি একই সুত্রে গাঁথা বলে মন্তব্য স্থানীয়দের। তবে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানায় শহীদুল্লাহ্ স্কুলের অফিস সহকারীকে ব্যানার তৈরি এবং টাংগানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে স্কুল কমিটির সাথে সম্পৃক্ত না থাকায় অফিস সহকারী বিষয়টি প্রধান শিক্ষকসহ কমিটির দু একজন সদস্যের কাছে যাচাই করেন। এতেই ক্ষিপ্ত হন শহীদুল্লাহ্। সুত্র জানায় সাবেক সভাপতি এমরান চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ব্যানার টাংগানো হয়েছিল। তবুও এতে ক্ষিপ্ত হন শহীদুল্লাহ্। স্থানীয় একটি অপর একটি সুত্র জানায়, শহীদুল্লাহ বর্তমান কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় তাঁর ভাতিজা রাকিবকে দিয়ে স্কুলের সব বিষয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাকিব চৌধুরীকে ক্ষেপিয়ে তোলেন। এদিকে ঐ সুত্রের দাবী, এসব কিছুর পিছনে কলকাটি নাড়ছেন স্কুলের বায়োলজি শিক্ষক মাহবুল আলম প্রকাশ মাহবুব ভান্ডারী। দীর্ঘ ৩৪ বছর যাবৎ এ স্কুলে শিক্ষকতার সুবাদে তিনি এখানে একটি বলয় গড়ে তোলেছেন বলে জানা গেছে। সাবেক সহ সভাপতি শহীদুল্লাহ’র সাথে ব্যক্তিগত সখ্যতার কারনে শিক্ষক হয়েও তিনি সেখানে প্রধান শিক্ষকের চেয়েও বেশী প্রভাব বিস্তার করেন। শহীদুল্লাহ্’র হাতে অতীতে স্কুলের যেসব শিক্ষক নাজেহাল হয়েছেন সবকিছুর পিছনে মাহবুব মাষ্টারের ইন্ধন রয়েছে বলে দাবী সাধারণ শিক্ষার্থীসহ এলাকার সাধারণ মানুষের। সাধারণ শিক্ষক হয়েও স্কুলের প্রায়ই কাজে তাঁর সম্মতি নিতে হয়। সুত্র জানায় তিনিই স্কুলের অঘোষিত প্রধান শিক্ষক। তবে এসব বিষয় অস্বীকার করেছেন সিনিয়র শিক্ষক মাষ্টার মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন কমিটির নির্দেশেই স্কুলের স্বার্থে বিভিন্ন কাজে ভুমিকা রেখেছেন তিনি। একটি পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে জানান তিনি। এদিকে এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রাকিব চৌধুরী এবং সাবেক সহ সভাপতি শহীদুল্লাহ্ মুটোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তাঁদের দুজনই ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি যাই হোক স্থানীয় সাধারন বাসিন্দারা এ ঘটনায় অনেকটা বাকরুদ্ধ। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতির এমন আচরন কেউই মেনে নিতে পারছেননা। তারা এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানান। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম (বাবেশিকফো)। বিবৃতিতে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুর সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি ব্যবস্থার জোড় দাবি জানান। এদিকে বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হাইদচকিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ এবিএম গোলাম নুর বলেন, ‘আমরা আসলে এবিয়য়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। একজন স্কুল প্রধানের সাথে পরিচালনা কমিটির সভাপতির এমন আচরণে আমরা মর্মাহত। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবী করেন। এ ঘটনার পর মঙ্গলবার বিকালে অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলমের পরিবার মামলা করার জন্য এজাহার নিয়ে ফটিকছড়ি থানায় গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন নিহতের ছেলে তারেক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com