গত বছর এই মৌসুমে যে জমিতে ছিল নলখাগড়াসহ বিভিন্ন আগাছার স্তূপ, এবছর সেই জমিতে সোনালী ধানে ভরপুর। শত বছরের অনাবাদি জমিতে কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে করা হয়েছে বোরো আবাদ। আর এই অনাবাদি জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার শত শত কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। অনাবাদি জমি নিয়ে এ সকল কৃষকেরা নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। গত বছর এ উপজেলায় ২৫হাজার ৫শত ২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছিল। এ বছর সেখানে ২৬হাজার ৪শত ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। যার ফলে গত বছরের চেয়ে এ বছর ৯শত ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ বেড়েছে। এই ৯শত ৫০ হেক্টর জমিই শত বছর ধরে অনাবাদি ছিল। এ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ও কৃষি অফিসের সহযোগিতায় অনাবাদি এ সকল জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে। এদিকে বুধবার ওই ৯শত ৫০ হেক্টর জমির ধান আনুষ্ঠানিক ভাবে কর্তন শুরু হয়েছে। উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের ধারাবাশাইল বিলে কৃষক সজল বালার ৬৫ শতাংশ জমির ধান রিপার মেশিন দিয়ে কর্তনের মাধ্যমে নতুন করে আবাদি এই ৯শত ৫০ হেক্টর জমির ধান কর্তন শুরু হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে এই ধান কর্তন আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন। এ সময় উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নিটুল রায়, কান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিন্দ্রনাথ রায়, কান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তুষার মধুসহ এলাকার কৃষকগণ উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছিলেন যে ‘এক ইঞ্চি জমিও অনবাদি রাখা যাবে না’। তাঁর সেই নির্দেশ পালনে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উন্নয়ন প্রতিনিধি সাবেক সিনিয়র সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকারের দিক নির্দেশনায় আমরা অনাবাদি জমিতে আবাদ করার জন্য মাঠে নামি। সে লক্ষ্যে আমরা এবছর ৯শত ৫০ হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আনতে পেরেছি। এ সকল জমি শত বছর ধরে অনাবাদি ছিল বলে বিভিন্ন কৃষকদের সাথে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা আগামীতে বাকি অনাবাদি জমি আবাদে আনতে সক্ষম হবো। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, শত বছরের এই অনাবাদি জমি আবাদে আনার জন্য স্থানীয় কৃষকদের সাথে ৩২টি উদ্বুদ্ধকরণ সভা করা হয়েছিল। অনাবাদি জমি ও খালের জলাবদ্ধতা নিরসনসহ আগাছা পরিস্কার করার জন্য গ্রহণ করা হয়েছিল নানা পদক্ষেপ। এছাড়াও কৃষকদেরকে বিনামূল্যে সার বীজ ও শ্রমিক দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছিল। যার ফলে এই ৯শত ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি এই ৯শত ৫০ হেক্টর জমির ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারলে গত বছরের চেয়ে এ বছর ৬হাজার মেট্রিক টন ধান বেশী উৎপাদন হবে। তিনি আরো বলেন, এই উপজেলায় আরো ৮১৭ হেক্টর জমি অনাবাদি রয়েছে। আমরা আগামীতে এই জমি গুলোও আবাদের আওতায় আনতে পারবো। কান্দি ইউনিয়নের ধারাবাশাইল গ্রামের কৃষক সজল বালা বলেন, বিগত প্রায় ১শত বছর ধরে আমরা যে জমিতে চাষাবাদ করতে পারিনি এ বছর সেই জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। এ জন্য উপজেলা কৃষি অফিস আমাদেরকে বিনামূল্যে সার বীজ ও শ্রমিক দিয়ে সহযোগিতা করেছে। আমাদের সকল জমিতেই বাম্পার ফলন হয়েছে। যার জন্য আমরা খুবই আনন্দিত। কান্দি ইউপি চেয়ারম্যান তুষার মধু বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সাড়া দিয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উন্নয়ন প্রতিনিধি সাবেক সিনিয়র সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ গত নভেম্বর মাস থেকে অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনার জন্য মাঠে কাজ করেছেন। তাই এ উপজেলায় শত বছরের অনাবাদি ৯শত ৫০ হেক্টর জমিতে এ বছরই প্রথম বোরো আবাদ হয়েছে। এ সকল জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় শত শত কৃষকের মুখে এখন হাসি ফুটেছে।