চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা বদন দে’র ঘরে এখন থেকে সুইচ টিপলে জ্বলবে বিদ্যুতের আলো। বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন সরেজমিন পরিদর্শন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা বদন দে’র ঘরে তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ মিটার লাগানোর ব্যবস্থা করেন। ইউএনও’র এ উদ্যোগে সংবাদকর্মিরা সহ স্থানীয় জনসাধারণ। এতদিন বিদ্যুত বিহীন ছিলেন মৃত্যু পথের যাত্রী বদন দে। স্থানীয় প্রভাবশালী একলোকের বাঁধার কারণে শতচেষ্টায়ও আপন গৃহে বিদ্যুতের বাতি জ্বালাতে পারেননি তিনি। আপন গৃহে বিদ্যুতের বাতি না জ্বালানোর দুঃখ নিয়ে হয়তো পরপারে যেতে হবে এই আক্ষেপ ছিল গুণী শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা বদন দে’র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হলে বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মামুন স্বউদ্যোগে সরেজমিনে গিয়ে মিটার লাগানোর উদ্যোগ নেন। বোয়ালখালীতে শতভাগ বিদ্যুতায়িত এলাকা প্রচারিত হলেও আলো জ্বলে না মুক্তিযোদ্ধার ঘরে। উপজেলার পশ্চিম শাকপুরা সদারাম পাড়া এলাকার ননী গোপাল দে’র ছেলে বদন দে। স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা নন একজন গুণী শিল্পীও। অন্য দশজনের মতো মোটা অংকের টাকার চিন্তা কখনো ছিলোনা তার । দু’বেলা, দু’মুঠো খেয়ে কোন রকমে বেঁচে থাকাটাই একমাত্র ইচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎবিহীন ঝুঁপড়ি ঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে অন্ধকারে জীবন যাপন করে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম দফায় যে কয়েকটি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করেন তার মধ্যে বোয়ালখালী অন্যতম। শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণায় এক বুক আশা নিয়ে বদন দে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করেন বোয়ালখালী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসে। আবেদন করে জানতে পারেন বৈদ্যুতিক খুটি ঘরের কাছে না থাকায় নতুন খুটি নিতে হবে। শুরু হয় খুটি লাগানোর দৌড়ঝাপ। পটিয়া অফিস থেকে অনেক দৌড়াদৌড়ি করে বৈদ্যুতিক খুটি অনুমোদনের পর খুঁটি স্থাপন করা হয়। মিটারের জন্য বোয়ালখালী বিদ্যুৎ অফিসে টাকা-পয়সা জমা করা হলে অনুমোদন হয় মিটারও। কিন্তু স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বাধায় মিটার সংযোগ দিতে পারেনি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। অথচ বদন দে’র আবেদনে স্থাপিত খুঁটি থেকে অনেকে সংযোগ নিয়ে ঘর আলোকিত করেছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হলে তিনিও পরিষদের প্যাডে বদন দে’র ঘরে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার জন্য সুপারিশ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বললেও বদন দে’র ঘর মিটার সংযোগের অভাবে আলোকিত না হওয়া খুবই দুঃখজনক। শাকপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মোনাফ বলেন, বদন দে’র ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বিদ্যুৎ অফিসে লিখিতভাবে সুপারিশ করেছি। তারপরও তার ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে না দেয়া লজ্জাজনক। বীর মুক্তিযোদ্ধা বদন দে জানান, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। যুদ্ধের সময় শরীরে লাগা বুলেটের আঘাতের চিহৃ এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। কিন্তু স্বাধীনতার এতো বছর পরে এসেও ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য দিনের পর দিন, বছরের পর বছর বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছি। আশপাশের সকলের ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বললেও আমার ঘরে আলো জ্বলছে না। জন্মটাই না আমার আজন্ম পাপ! বোয়ালখালী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) রফিকুল আজাদ বলেন, বদন দে’র আবেদনের প্রেক্ষিতে বৈদ্যুতিক খুটি স্থাপন করা হয়েছে এবং তার ঘরে মিটার সংযোগ দিতে গেলে স্থানীয় একব্যক্তি তার ঘরের উপর দিয়ে তার যাচ্ছে বলে বাধা দেয়। তাই সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি।