শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩১ পূর্বাহ্ন

গ্যাসহীন চট্টগ্রামে অধিকাংশ শিল্পকারখানা-গণপরিবহন বন্ধ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩

ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে সাগরে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ রাখায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এরফলে বন্ধ হয়ে গেছে সিএনজি চালিত গণপরিবহন। বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ শিল্প-কারখানার উৎপাদন। চারদিক বিরাজ করছে এক ধরনের গুমোট পরিস্থিতি। জানা যায়, মহেশখালীর গভীর সাগরে থাকা এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ রাখায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। গত শুক্রবার রাত থেকে গ্যাস সংকট শুরু হলেও এ রিপোর্ট পর্যন্ত জানা যায়,গতকাল রোববার সকাল থেকে পুরো নগরীতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সকাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় খাবারের খোঁজে হোটেলে ছুটছে মানুষ। কিন্তু লাইনের গ্যাসনির্ভর হোটেলগুলোতে রান্না না হওয়ায় সিলিন্ডার দিয়ে যে ক’টি হোটেলে রান্না হয়েছে সেখানে মানুষের প্রচ- ভিড়।
নগরীর কাজীরদেউড়ি এলাকার খোয়াজা রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ফজরের নামাজের পর থেকে খাবারের খোঁজে আসছে মানুষ। কিন্তু গ্যাসলাইনে গ্যাস না থাকায় হোটেলে রান্না সম্ভব হয় নি। মানুষের ছুটাছুটি দেখে আমরা এখন সিলিন্ডার সরবরাহ করে রান্না করছি। তবে প্রতিদিন যে পরিমাণ রান্না হয়, গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে সে পরিমাণ সম্ভব নয়।’ এদিকে গ্যাস সংকট প্রকট হওয়ায় চট্টগ্রাম নগরীতে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ডিজেল চালিত পরিবহনগুলো চললেও তা যাত্রীর তুলনায় খুবই কম। গণপরিবহন না পেয়ে সকাল থেকে রিক্সা কিংবা পায়ে হেঁটে ছুটছেন অফিসগামী নারী-পুরুষ। এদিকে গ্যাস সংকটের কারণে শুক্রবার রাত থেকে চট্টগ্রামের বেশিরভাগ শিল্প-কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে ইমার্জেন্সি শিপমেন্টের অর্ডার থাকা পোশাক কারখানার মালিকরা।
বিজিএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাকিবুল আলম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে চট্টগ্রামের বেশির ভাগ পোশাক কারখানা শুক্রবার বিকেলের পর বন্ধ করে দিয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের ইমার্জেন্সি শিপমেন্ট আছে সেগুলো নিজ উদ্যোগে বিকল্প জ্বালানি দিয়ে কোনভাবে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে কারখানা মালিকরা।
গ্যাস সংকটের বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌ. মোঃ রফিকুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাবে মহেশখালিতে বিদ্যমান দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল গভীর সমুদ্রের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে গত ১২.০৫,২০২৩ তারিখ রাত ১১.০০ টা থেকে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালদ্বয় হতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চল ও এর আশেপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ দারুণভাবে বিঘ্ন ঘটেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো ৫-৬ দিন সময় লাগতে পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সকাল থেকে চট্টগ্রামের আকাশ মেঘলা রয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। তবে তা পরিমাণে খুবই কম এবং স্থায়িত্বও বেশিক্ষণ থাকছে না। বাতাসের গতিবেগও তেমন বেশি না। অনেকটা গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টা থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে সকাল ১০টা থেকে বৃষ্টিপাত এবং বাতাসের গতিবেগ বাড়বে বলে জানা গেছে। বিকেল ৩টার দিকে চট্টগ্রামে জোয়ার আরম্ভ হবে। এসময় পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকার চায়ের দোকানদার আলমাস হোসেন মানবজমিনকে বলেন,গতকাল থেকেই সাগর গরম। পর্যটক নেই বললেই চলে। প্রশাসন থেকে বারবার মাইকিং করা হচ্ছে সৈকতে না আসতে। আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। জেটি থেকে বড় জাহাজ বের করে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে লাইটার জাহাজকে কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতু এলাকায় নিরাপদে অবস্থান নিতে বলা হয়। এছাড়া মোখার কারণে শনিবার ভোর ৬টা থেকে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে চট্টগ্রাম শহর ও বিভিন্ন উপজেলা মিলিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন ৮৯ হাজার ৬৫ জন। এর মধ্যে ৩৮ হাজার ৫৯৫ পুরুষ, ৩৮ হাজার ৯৭৬ নারী, ১১ হাজার ৩৪৯ শিশু ও ১৪৫ প্রতিবন্ধী লোক রয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, জেলায় মোট ২৫০ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাধ আছে। তন্মধ্যে ১২ দশমিক ৭ কিলোমিটার বাদে বাকি অংশ সুরক্ষিত রয়েছে। জেলায় দুটি সিএসডি এবং ১৬টি এলএসডি রয়েছে। গুদামের অভ্যন্তরে পানি প্রবেশ ঠেকাতে বাফেল ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com