টানটান উত্তেজনার ম্যাচে শ্বাসরুদ্ধকর জয় পেল বাংলাদেশ। প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে খেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেও হাসি মুখে মাঠ ছাড়া হলো না আইরিশদের। ২৭৫ রান তাড়া করতে নেমে তারা থেমেছে ২৭০ রানেই। ফলে নাটকীয় এই ম্যাচে ৫ রানে জয় পেয়েছে টাইগাররা। সেই সাথে ২-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজটাও নিজেদের করে নিয়েছে তামিম বাহিনী।
আলোচনা কত সমালোচনা, লোকমুখে মোস্তাফিজ আর চলে না। এমনকি শেষ চার ওয়ানডেতেও একাদশে ঠাঁই হয়নি তার। তবে প্রত্যাবর্তনটা নিজের মতোই রাঙালেন এই কাটার মাস্টার। যেন বলতে চাইলেন ‘আমাকে এখনো আছে দরকার।’ শেষ ২৪ বলে যখন আইরিশদের প্রয়োজন ৩৫ রান, তখন মোটে ৩ রান দিয়ে ফেরান ভয়ংকর হয়ে উঠা লরকান টাকারকে। শুধু টাকারকে নয়, আরো তিন-তিনটি উইকেট নিয়েছেন তিনি। তাছাড়া পুরো ইনিংসজুড়ে এদিন আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিলেন তিনি। ম্যাচ শেষে তার পারফরম্যান্স ১০ ওভারে ৪৪ রানে ৪ উইকেট। সেই সাথে ইনিংসের অর্ধেকের বেশি বল ডট দেন তিনি, সংখ্যায় যা ৩৬টি! মূলত এখানেই ম্যাচে টিকে যায় বাংলাদেশ। মোস্তাফিজকে নিয়ে বলতে হলে বলতে হবে হাসান মাহমুদকে নিয়েও। আগের ওভারেই যেখানে মৃত্যুঞ্জয় দিয়েছিলেন ১৪ রান, সেখানে শেষ ওভারে এসে ১০ রান যেভাবে ডিফেন্স করেছেন তিনি; কে বলবে মাত্র ২৩ বছর বয়স তার, আর অভিজ্ঞতা মোটে ১০ ম্যাচের! ৯ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন তিনি। এর আগে মাত্র ১৭ রানে ভাঙে আয়ারল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি। প্রথম উইকেটের পতন হয় ৫.২ ওভারে। স্টিফেন ডুহানিকে সাজঘরের পথ দেখান মোস্তাফিজুর রহমান। ১৬ বল থেকে মাত্র ৪ রান আসে তার ব্যাটে। দ্রুত প্রথম উইকেট হারালেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় আইরিশরা। বেশ জমে উঠে পল স্টার্লিং ও এন্ড্রি বালবির্নির জুটি।
বালবির্নি মাঠে নামার পরই যেন আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় আয়ারল্যান্ড। সাচ্ছন্দ্যেই খেলতে থাকে এবাদত, মৃত্যুঞ্জয়, মোস্তাফিজদের। যদিও একটা সুযোগ তৈরি করেছিলেন মৃত্যুঞ্জয়, তবে স্লিপে বালবির্নির সহজ ক্যাচ মিস করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। যার খেসারত দিতে হয় দলকে, শতাধিক রানের জুটি আসে তাদের ব্যাট থেকে।
১২৬ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেটের পতন হয় আইরিশদের, ফেরেন বালবির্নি। ৭৮ বলে ৫৩ রান করেন তিনি। অর্ধশতক তুলে নেন পল স্টার্লিংও, ৭৩ বলে ৬০ রানে মেহেদী মিরাজের শিকার হন। তবে এরপর ফের দাঁড়িয়ে পড়েন হ্যারি টেক্টর ও লরকান টাকার। ৬৬ বলে ৭৯ রানের আগ্রাসী এক জুটি গড়েন তারা। এই জুটিই মূলত শঙ্কা জাগিয়ে তুলে বাংলাদেশীদের মনে
২২৫ রানে ভাঙে এই জুটি, জয় থেকে আয়ারল্যান্ড তখন মাত্র ৫০ দূরে। ৪৮ বলে ৪৫ করে নাজমুল হোসেন শান্তর প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট বনে যান হ্যারি টেক্টর। এরপর ১০ রান যোগ করতেই আরো ২ উইকেট হারায় দলটা। কার্টিস ক্যাম্ফার ৪ বলে ১ ও জর্জে ডকরেল আউট হন ৫ বলে ৩ রান করে। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন টাকার।
একটা সময় ৫১ বলে অর্ধশতকও তুলে নেন তিনি। সঙ্গী তখন ম্যাকবির্নি। তবে তাকে আর দৌঁড়াতে দেননি মোস্তাফিজ, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে স্ট্যাম্প ভেঙে দিয়েছেন তার। আর তাতেই ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। ৪৬.৪ ওভারে ২৪২ রানে ৭ উইকেট নেই তখন আইরিশদের।
সুবাদে শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন হয় ৩২ রান। সেখান থেকে শেষ ওভারে ১০। এই রান ডিফেন্স করতে এসে জোড়া উইকেট নিয়ে দলকে ৫ রানের জয় এনে দেন হাসান মাহমুদ। ৯ উইকেটে ২৭০ করেই শেষ হয় আইরিশদের ইনিংস।
এদিকে, ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডের এ ম্যাচে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে বড় ইনিংস খেলতে না পারাই কাল হয় বাংলাদেশের। ভালো শুরু পেয়েও তাল ধরে রাখতে পারেনি কেউ। পাঁচজন ব্যাটার ত্রিশের ঘর পেরোলেও পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস ছিল কেবল একটা! ফলে পুরো ৫০ ওভারও খেলে আসতে পারলো না টাইগাররা, থেমেছে ৪৮.৫ ওভারর ২৭৪ রানে। যেখানে শেষ ১৩ রানেই হারিয়েছে ৫ উইকেট! সর্বোচ্চ রান তামিমের, ৬৯।
অবশ্য ইনিংসের শুরুতেই জীবন পেয়েছিলেন তামিম, সুযোগটা কাজেও লাগিয়েছেন তিনি। যদিও বহুল কাঙ্ক্ষিত শতক দেখা দেয়নি, তবে ১০ ইনিংস পর অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন তামিম ইকবাল খান। ৮২ বলে ৬৯ রান করে থামতে হয়েছে বাংলাদেশ অধিনায়ককে। ফিরেছেন দলীয় ৩৩.৩ ওভারে ১৮৬ রানে।
এর আগে যথারীতি আজও বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমেছিলেন তামিম। তবে এইদিন পরিবর্তন হয় সঙ্গী, অভিষিক্ত রনি তালুকদার ছিলেন সাথে। কিন্তু অভিষেকটা রাঙাতে পারেননি রনি, ফেরেন চতুর্থ ওভারেই ১৪ বলে ৪ রান করে। ১৮ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।
এদিকে আগের ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন, আজ সেখান থেকেই যেন শুরু করে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দারুণ ছন্দেই একের পর এক শট খেলতে থাকেন। তবে ইনিংসটা এইদিন আর টেনে নিতে পারেননি, তামিমকে রেখেই ৩২ বলে ৩৫ রান করে থামতে হয়েছে তাকে।
এরপর লিটন দাসের সাথে ৭০ রানের জুটি গড়েন তামিম। তাদের ব্যাটে লড়াই করছিল বাংলাদেশ, ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল বড় সংগ্রহের পথে। পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটিও গড়ে তুলেছিল তারা। তবে আবারো আশাহত করে সাজঘরের পথে যাত্রা লিটনের। আরো একবার বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ তিনি। ৩৯ বলে ৩৫ করে আউট হন লিটন।
দারুণ ছন্দে থাকা তাওহীদ হৃদয় এদিন আর হৃদয় জিততে পারেননি, ১৬ বলে ১৩ করেই থামেন তিনি। বন্ধু মুশফিকের সাথেও এদিন বোঝাপড়াটা জমে উঠেনি। জমে উঠার আগে মুশফিককে ফেলে সাজঘরের পথ ধরেন তামিম। ১৮৬ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর এবার মিরাজকে সাথে নিয়ে ইনিংস গুছানোর চেষ্টা করে মুশফিক।
তাদের জুটিতে আড়াই শ’ পেরিয়েছে দলীয় সংগ্রহ। দারুণ খেলতে থাকেন দুজনে, ইনিংস সর্বোচ্চ ৭৪ বলে ৭৫ রানের জুটি আসে তাদের ব্যাটে। তবে পরপর দুই ওভারে দুইজন ফিরলে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ৪৬তম ওভারে ৫৪ বলে ৪৫ করে আউট হন মুশফিক, পরের ওভারে ৩৯ বলে ৩৭ করে ফেরেন মিরাজ।
রনি তালুকদারের মতো হতাশ করেন আরেক অভিষিক্ত মৃত্যুঞ্জয়ও, শেষ উইকেট হিসেবে ১১ বলে ৮ রান করে ফেরেন তিনি। ফলে ৭ বল বাকি থাকতেই ২৭৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। যেখানে শেষ ১৩ রানেই ৫ উইকেট হারায় টাইগাররা। যার তিনটাই নেন মার্ক অ্যাডায়ার।