রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৬ অপরাহ্ন

শয়তানের পদাঙ্ক

মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
  • আপডেট সময় শনিবার, ২০ মে, ২০২৩

শয়তান একবচন, বহুবচন- শায়াতিন। অর্থ অভিশপ্ত, অবাধ্য, বিতাড়িত। শয়তান এমন এক সম্প্রদায়, যারা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অমান্য করে অভিশপ্ত ও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর খুতওয়াত শব্দটি খুতয়া শব্দের বহুবচন। অর্থ পদাঙ্ক, পদচিহ্ন, দু’পায়ের মধ্যবর্তী স্থান, পথচারীর পদচিহ্ন। খা অক্ষরে জবর যোগে পাঠ করলে এর অর্থ হবে একবার পদ ফেলার কাজ করা। খুতওয়াতিত শায়াতিন অর্থ- শয়তানের পদাঙ্কগুলো।
শয়তানের পদাঙ্কগুলো কী : বেশির ভাগ মুফাসসির বলেন, শয়তানের পদাঙ্কগুলো হলো- তার কার্যাবলি। হজরত ইবনে আব্বাস রা: বলেন, শয়তানের খুতওয়াত হলো- তার ভ্রান্ত কার্যাবলি। মুজাহিদ বলেন, শয়তানের খুতওয়াত হলো তার ভ্রান্ত নীতিগুলো।
হজরত কাতাদা বলেন, খুতওয়াতিত শায়াতিন হলো তার ভ্রান্ত নীতিগুলো। হজরত জাহহাক বলেন, খুতওয়াতিত শায়াতিন হলো শয়তানের ওই ভ্রান্ত নীতিগুলো যা দিয়ে সে আদেশ-নিষেধ করে থাকে। সাদি বলেন, খুতওয়াতিত শায়াতিন অর্থ- তার আনুগত্য করা। কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, খুতওয়াতিত শায়াতিন অর্থ অন্যায় কাজের জন্য দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করা। কারো মতে, এর অর্থ গুনাহের কাজে ইচ্ছা পোষণ করা। বেশির ভাগের মতে এর অর্থ- শয়তানের কার্যক্রম, তার পথ বা নীতি।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘হে মানুষ তোমরা জমিনে যা কিছু হালাল ও পবিত্র বস্তু রয়েছে তা ভক্ষণ করো এবং (হালাল ও হারামের ব্যাপারে) শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। অবশ্যই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।’ (সূরা আল-বাকারাহ-১৬৮) অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং কোনো অবস্থাতেই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, অবশ্যই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা আল-বাকারাহ-২০৮) ‘আল্লাহ তোমাদেরকে যা দান করেছেন তা তোমরা খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, অবশ্যই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা আল-আনয়াম-১৪২) আরো ইরশাদ করেন- ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা কখনো শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। তোমাদের মধ্যে যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, সে তো তাকে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ দেয়।’ (সূরা আন-নূর-২১)
শয়তান মানুষের শত্রু : শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘অবশ্যই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’। (সূরা ইউসুফ-৫) ‘অবশ্যই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’। (সূরা ইসরা-৫৩) অন্যত্র বলেন- ‘শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ করো।’ (সূরা ফাতির-৬) আরো বলেন- ‘শয়তান যেন তোমাদেরকে নিবৃত্ত না করে। সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা জুখরুফ-৬২) শয়তান মানবচক্ষুর আড়ালে থাকলেও সে খুবই শক্তিশালী। আড়ালে থেকে প্রকাশ্য শত্রুর মতো শত্রুতা করে।
শয়তানের উদ্দেশ্য : শয়তানের উদ্দেশ্য হলো মানবজাতিকে পথভ্রষ্ট করা। শয়তান আল্লাহ তায়ালাকে বলেছে- ‘আমি অবশ্যই তাদেকে পথভ্রষ্ট করব, বৃথা আশ্বাস দেবো, তাদেরকে নির্দেশ দেবো, যার ফলে তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবে এবং তাদেরকে নির্দেশ দেবো, অতঃপর তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে।’ (সূরা নিসা-১১৯)
অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘আর শয়তান তাদেরকে চরমভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়।’ (সূরা নিসা-৬০) আরো বলেন- ‘নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদেরকে খারাপ ও অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেবে। আর যেন আল্লাহর ওপর এমন কথা বলো না যা তোমরা জানো না।’ (সূরা আল-বাকারাহ-১৬৯)
শয়তান চালেঞ্জ করে বলেছে- ‘আপনি আমাকে যেমন উ£ান্ত করেছেন, আমিও অবশ্য তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকব। অতঃপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছনের দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ (সূরা আল-আরাফ : ১৬-১৭) শয়তান আরো বলেছে- ‘হে আমার পালনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করব। আপনার খালেস বান্দারা ছাড়া (তাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারব না)।’ (সূরা আল-হিজর : ৩৯-৪০)
মহানবী সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের শিরায়-উপশিরায় বিচরণ করে’। (বুখারি-১২৮৮, মুসলিম-২১৭৪) রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন, ‘শয়তান তোমাদের কারো কাছে এসে বলে, এটি কে সৃষ্টি করেছে? ওটি কে সৃষ্টি করেছে? এমনকি শয়তান এরূপ প্রশ্নও করে থাকে যে, তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছে? সুতরাং শয়তান যখন এ পর্যায়ে পৌঁছে তখন ওই ব্যক্তির কর্তব্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা এবং শয়তানের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায় : শয়তানের চক্রান্ত ও ধোঁকা খুবই প্রবল ও শক্তিশালী। ফলে এর থেকে বাঁচা খুবই কঠিন। একমাত্র আল্লাহই শয়তানের কবল থেকে রক্ষা করতে পারেন। শয়তানের অনিষ্ট ও ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর আশ্রয় কামনা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যখন কুরআন পাঠ করো, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো।’ (সূরা আল-নাহল-৯৮) নিয়মিত পাঠ করতে হবে- ১. আউজুবিল্লাহি মিনাস শাইতানির রাজিম- আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করছি; ২. সুবহানাল্লাহ- আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি; ৩. আসতাগফিরুল্লাহ- আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি; ৪. লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লাহ বিল্লাহি- আল্লাহর সাহায্য ও শক্তি ছাড়া কোনো সাহায্য ও শক্তি নেই; ৫. আল্লাহু আকবার- আল্লাহ মহান। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমিন। লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com