সিরাজগঞ্জের তাড়াশের চারজন পিছিয়ে পড়া নারী জীবনে সংগ্রাম করে সব বাধা বিপত্তি কাটিয়ে সফল হয়েছেন। এ সফলতায় তারা ২০২২ সালে জয়িতার সম্মাননা পেয়েছেন। যাদের জয়িতা হওয়ার পেছনে রয়েছে দুঃখ কষ্টের করুণ কাহিনি! জয়িতা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, দরিদ্র পরিবারে জন্ম আমার। কিন্তু পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রবল ইচ্ছে ছিলো। ১৯৯৮ সালে আমি এসএসসিতে প্রথম বিভাগে পাশ করি। তারপর ১৯৯৯ সালে আমার বিয়ে দিয়ে দেয়। সংসার জীবনেও আমি থেমে থাকি নাই। সংগ্রাম ও নিদারুণ কষ্ট করে এইচএসসি পাশ করি। শেষ অবধি আমার গুল্টা আদিবাসী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকার চাকরি হয়। আমার বড় ছেলে ডিপ্লোমা পড়ছে। আমি পরিবার নিয়ে স্বচ্ছল জীবন যাপন করছি। নিলুফা ইয়াসমিন তালম ইউনিয়নের গোলাপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী। জয়িতা পারভীন খাতুন বলেন, সংসারে অভাবের তারনায় আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। আমি দেখতে ছিলাম কালো। সংসার জীবনের একপর্যায়ে আমাকে পরিবারের সবাই অপছন্দ করতে শুরু করে। এরই মধ্যে আমি গর্ভ ধারণ করি। তারপরও আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো। নির্যাতন সইতে না পেরে বাবার বাড়িতে ফিরে আসি। এখন আমার দশ বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। আমি দর্জির কাজ, কৃষি শ্রমিকের কাজ ও লোকজনের বাড়িতে দিন মজুর খেটে সংসার চালিয়েছি। তারপর একটি সেলাই মেশিন কিনে উপার্জন শুরু করি। টাকা জমিয়ে একটি গরু কিনি। সেই গরু থেকে ছয়টি গরু হয়েছে। শেলাইয়ের কাজের উপার্জন ও দুধ বিক্রির টাকা দিয়ে আর্থিক সফলতা লাভ করেছি। পারভীন খাতুন তাড়াশ সদর ইউনিয়নের শ্রীকৃষœপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের মেয়ে। জয়িতা হাসি খাতুন বলেন, আমাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিলনা। সাত ভাইবোনের সংসারে সব সময় অভাব অনটন লেগেই থাকতো। অভাবের দুরুণ আমার অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়। স্বামীর সংসারও অভাব অটনের। তারপর আমি গরু-ছাগল ও হাঁস মুরগী পালন শুরু করি। আমার চার মেয়েই উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লক্ষে পড়ালেখা করছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে এখন আমার সুখে দিন কাটে। সে তাড়াশ সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের সেলিম প্রামানিকের স্ত্রী। জয়িতা সুমি খাতুন বলেন, আমি ৫ম শ্রেণিতে পড়ার পাশাপাশি চাচির কাছ সেলাইয়ের কাজ শিখি। ৯ম শ্রেণিতে পড়াকালীন আমার বিয়ে দিয়ে দেয়। কিন্তু আমাকে চার বছরেও স্বামীর বাড়িতে নেয়না। এরই মধ্যে আমার স্বামী অন্য মেয়েকে বিয়ে করে। বাধ্য হয়ে স্বামীকে ডিভোর্স দেই। তারপর আমার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পরে জানতে পারি আমার স্বামী মাদকাসক্ত। মাদক ছাড়তে বললে সে আমাকে মারধর করত। এক পর্যায়ে আমি মা হই। তারপরও নির্যাতন করত। নিরুপায় হয়ে আমি বাবার বাড়িতে চলে আসি। তারপর ভুল স্বীকার করে আমাকে স্বামীর বাড়িতে নিয়ে যায়। হঠাৎ আমি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ি। কিন্তু আমার স্বামী চিকিৎসার টাকা দেয়না। এরকোম নানা ঘটনার পর আমাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য করে। জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ। নিজে শেলাইয়ের কাজের পাশাপাশি অন্য মেয়েদেরও সেলাইয়ের কাজ শেখানো শুরু করি। আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে দুই বিঘা জমি বন্ধক রেখেছি। চারটি গরু রয়েছে আমার। আমি ছেলেকে নিয়ে সুখে আছি। সুমি খাতুন মাধাইনগর ইউনিয়নের সরাপপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে। এদিকে জীবনে সংগ্রাম করে সব বাধা বিপত্তি কাটিয়ে সফল হওয়ার জন্য চার জয়িতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খাদিজা নাছরিন। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম দৈনিক খবরপত্রকে বলেন, জয়িতারা স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।