গাজীপুরের কালীগঞ্জে শিক্ষার প্রসারে ২০২১ সালের শেষের দিকে স্থানীয় সাংসদ মেহের আফরোজ চুমকি ও তৎকালীন ইউএনও মো. শিবলী সাদিকের উদ্যোগে স্থানীয়দের সহযোগীতায় প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করে কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগার। এরপর তিনি ২০২২ সালের শুরুর দিকে এ উপজেলা থেকে বিদায় নেন। যোগদেন বর্তমান ইউএনও মো. আসসাদিকজামান। শুরুর দিকে পাঠাগারটি প্রচুর পাঠক সমাগম হতে থাকে। পরে পাঠাগারে অজ্ঞাত কারণে পাঠক সমাগম কমতে থাকে। কিন্তু ইউএনও শিবলী সাদিকের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে পাঠাগারে পাঠক ফিরাতে নানা উদ্যোগ নেনইউএনও আসসাদিকজামান। তারই অংশ হিসেবে পাঠাগারের চারপাশের দেয়ালে লেখা হয় বই নিয়ে দেশি-বিদেশী মনিষীদের উক্তি। উদ্দেশ্যে নতুন প্রজন্ম পাঠাগার বা বই মুখি হবে। কালীগঞ্জ পৌর এলাকার পুরাতন ব্যাংকের মোড়ে কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগারে প্রবেশ করতেই দুই পাশের দেয়ালে দেশি-বিদেশী মনিষীদের অসংখ্য উক্তি। যেগুলো পড়লে বই থেকে দূরে সরে থাকা পাঠক কিছুটা হলেও পাঠাগার বা বই মুখি হবে। কারণ বই মানুষের জীবনে অনেক ক্ষেত্রে বন্ধু, শুভাকাঙ্খী, শিক্ষক এমনকি অভিভাবকদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষের ভিতরের অন্ধকার দূর করে কুসংস্কারমুক্ত, প্রগতিশীল, আলোকিত সমাজ, দেশ ও জাতি গঠনে বই হলো শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। পৃথিবীর ইতিহাস ঐতিহ্য ও আধুনিক বিশ্বকে উপলব্ধি করতে হলে বই পড়তে হবে। বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, জাতি, ভাষা গুষ্টির মানুষ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যায়। বই মানুষের হৃদয়ে দ্বার খুলে দিয়ে চিন্তার জগৎকে প্রসারিত করে এবং মানুষের আত্মার প্রসার ঘটায়। কালীগঞ্জ রাজা রাজেদ্র নারায়ণ (আরআরএন) পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রাশেদ্বীন সরকার রূপণ বলে, একটি সুস্থ ও সুন্দর জাতি গঠন করতে হলে অবশ্যই বই পড়তে হবে। বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বই মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটায়। বড় মনের মানুষ হওয়ার জন্য বইয়ের সান্নিধ্যে আসতেই হবে। একজন লেখক তার সুপ্ত ভাবনাকে লেখনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন। পাশাপাশি সাবেক ইউএনও শিবলী সাদিকস্যারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারে পাঠক ফেরাতে বর্তমান ইউএনও আসসাদিকজামান স্যারের উদ্যোগে দেয়াল লেখা জ্ঞানীগুণীদের উক্তি প্রসংশার দাবিদার। কালীগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া তাবাসসুম দিশা বলে, বিক্ষিপ্তভাবে উক্তিগুলো আমরা হরমেশাই পাই। কিন্তু ইউএনও স্যারের উদ্যোগে এক সাথে পুরো একটি প্যাকেজ সত্যি ব্যতিক্রম। এটি দেখে আমরা উৎসাহ পাই। যারা অযথা বেকার সময় নষ্ট করে তারা এখানে আসলে এগুলো দেখলে পাঠাগার বা বই মুখি হবে বলে আমার বিশ্বাস। সেন্টমেরিস স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী তানজিদা আক্তার সামিয়া বলে, প্রবেশের পথে লাইব্রেরীর দেয়ালে দেয়ালে যে লেখাগুলো রয়েছে, সেগুলো পড়লে আমাদের মাঝে বই পড়ার অনুপ্রেরণা জাগে। আমরা যখন আমাদের সাথে কোন ছোট ভাই-বোনদের নিয়ে লাইব্রেরীতে প্রবেশ করবো তখন তারা এই জ্ঞানী ব্যক্তিদের বানীগুলো যদি পড়ে তাহলে লাইব্রেরী বা বই সম্পর্কে তাদের আরো বেশি আগ্রহী হবে। তারা নিজে পড়বে এবং পরবর্তী প্রজন্মকেও বই পড়াতে আগ্রহী করবে। কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগারের লাইব্রেরীয়ান সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ইউএনও আসসাদিকজামান স্যারের উদ্যোগে পাঠাগারের সীমানায় বড় বড় মনিষীদের উক্তি দিয়ে যে দেয়াল লিখনগুলো লেখা হয়েছে তা দেখে পাঠাগারে আগের চেয়ে পাঠক সংখ্যা বেড়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মসলিন কটন মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর রহমান আরমান বলেন, এতে কোন সন্দেহ নেই, পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষজন বই পড়তে পছন্দ করে। এমন কিছু মানুষ আছে, যারা বই পড়া ছাড়া এক মুহূর্তও চলতে পারে না। ইউএনও মো. আসসাদিকজামানের উদ্যোগে কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগারের চৌহদ্দিতে বই নিয়ে দেশ-বিদেশের বড় বড় মনিষীদের বেশ কিছু উক্তি পুরো দেয়ালে লেখা হয়েছে। যা সত্যিই প্রসংশার দাবিদার। যারা সত্যিকারের বইপোকা বই নিয়ে ওই সমস্ত উক্তিগুলি তাদের অবশ্যই ভালো লাগবে। পাশাপাশি ওই সকল মনিষীদের কথাগুলো ভাল লাগলে তরুণ প্রজন্ম বইবা পাঠাগার মুখি হবে। দুর্বাটি এম.ইউ কামিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুফতি মো. রুহুল আমিন বলেন,আলো যেমন জাগতিক নিয়মে অন্ধকার দূর করে সব কিছু মূর্ত করে, তেমনি বই মানুষের মনের ভেতরে জ্ঞানের আলো এনে যাবতীয় অন্ধকারকে দূর করে চেতনার আলোকে সবকিছুকে উদ্ভাসিত করে দেখায়। আলো শুধু ভৌগোলিকভাবে ছড়িয়ে যেতে পারে।
আর বই অতীত থেকে ভবিষ্যৎ, নিকট থেকে দূরে, প্রান্ত থেকে অন্তে এমনকি যুগ থেকে যুগান্তরে জ্ঞানের আলোকে পৌঁছে দিতে পারে। তাই দেশ কালের সীমানা অতিক্রম করে জ্ঞানের আলোকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে একমাত্র বই। শ্রেষ্ঠ শিক্ষা হল আত্মশিখন। আর বই সেই আত্মশিখনের শ্রেষ্ঠ সহায়ক। বিনোদন থেকে শিক্ষা, অবসর যাপন থেকে নিঃসঙ্গতা দূর সবেতেই বই শ্রেষ্ঠ অবলম্বন হতে পারে। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসসাদিকজামান বলেন, স্থানীয় এমপি স্যার ও আমার পূর্ববর্তী ইউএনও স্যারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারে পাঠক ফিরাতে পাঠাগার চত্ত্বরে নিয়মিত বই মেলা ও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এখানে পাঠক যারা আসে তারা প্রবেশের সময় ও বের হওয়ার সময় দেয়ালিকায় মনিষীদের উক্তি বা বানীগুলো দেখে সেভাবে চিন্তা করতে পারবে। ইউএনও আরো বলেন, প্রতিটি সফল মানুষ নিয়মিত বই পড়তেন। ওয়ারেন বাফেট তার পেশা জীবনের শুরুতে প্রতিদিন ৬শ থকে ১ হাজার পৃষ্ঠা নিয়মিত পড়তেন, বিলগ্রেটস প্রতিবছর ৫০টি বই পড়তেন। বই পড়লে মানুষের চিত্ত প্রফুল্ল হয়। যুগে যুগে বই পড়ার গুরুত্ব বোঝাতে বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে বই পড়া নিয়ে উক্তি করেছেন। আর সেই উক্তি প্রজন্মের পর প্রজন্ম টনিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।