বিসিসি নির্বাচন
বিএনপি ছাড়াই বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনী মাঠ দিন দিন বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছে। একাধিক প্রার্থী থাকায় অনেকটাই নির্বাচনী আবহ পরিবেশ তৈরি হয়েছে বরিশাল শহর জুড়ে। এরইমধ্যে মনোনয়নপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় তথ্যের কাগজপত্র জমা দিয়ে বরিশালি সিটি নির্বাচনে ৬ জন মেয়র প্রার্থী বৈধ হয়ে এবং প্রতীক বরাদ্দের অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে তার আগেই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে হলফনামার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রাপ্ত হলফনামার তথ্যানুযায়ী, বৈধ ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে বাৎসরিক আয়ের দিক থেকে এগিয়ে থাকা জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপসের বিরুদ্ধে বর্তমানে দুটি ফৌজদারী মামলা রয়েছে। তবে ঢাকায় দায়ের হওয়া মামলা দুটির বিরুদ্ধেই স্থগিতাদেশ বহাল রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা থাকলেও নির্বাচন কমিশন না চাওয়ায় সে তথ্য তিনি দেননি বলে হলফনামায় উল্লেখও করেছেন। ইকবাল হোসেন তাপস একইসাথে অনেকগুলো ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত রয়েছেন। হলফনামায় তিনি ইওকোহামা লেবেলস্ এন্ড প্রিন্টিং (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাউথ এ্যাপোলো মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতাল লিমিটেডের পরিচালক, সাউথ এ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স (প্রা) লিমিটেড এবং সাউথ এ্যাপোলো প্রোপার্টিজ লিমিটিডেরও পরিচালকের কথা উল্লেখ করেছেন। ব্যবসা বা পরিচলনা সন্মানী থেকে ইকবাল হোসেনের বাৎসরিক আয় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, চাকুরির বেতন-ভাতা থেকে আয় ৭৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯২৭ টাকা এবং সঞ্চয়ী আমানতের মুনাফা ১ হাজার ১৯৬ টাকা। যা নিয়ে বছরে তার আয় দাড়ায় ৮০ লাখ টাকার ওপরে। এছাড়া প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় রয়েছে ২৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের হিসেবে নিজের নগদ টাকা ২ কোটি ২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত ৬ লাখ ৫৩ হাজার ২২৩ টাকা রয়েছে। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ১২৫০ টি ডায়াগনস্টিকের শেয়ার, ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকার ৩৪৩৪ টি মেডিক্যাল কলেজের শেয়ার, ১৫ লাখ টাকার ১৫০০ টি প্রোপার্টিজ শেয়ার রয়েছে। এছাড়া ৩৮ লাখ টাকার মোটরগাড়ি, ৬০ তোলা স্বর্ণসহ মূল্যবান ধাতুর অলংকার, ইলেকট্রিক সামগ্রীর মধ্যে ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওভেন এবং আসবাবপত্রের মধ্যে ৫১ হাজার ৫৬৫ টাকার খাট, আলমিরা, সোফা, ড্রেসিংটেবিলসহ বিভিন্ন জিনিসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অস্থাবর সম্পত্তিতে স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত ১০ লাখ ও নির্ভরশীলদের নামে ৭২ হাজার টাকার কথা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তাপস। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে এই প্রার্থীর ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া জমি ও ৫ তলা ভবনের অংশ রয়েছে। এছাড়া যৌথ মালিকানায় ২ একরের ওপরে কৃষিজমি রয়েছে। অপরদিকে এই প্রার্থীর একটি বেসরকারি ব্যাংকের কাছ থেকে ১৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৫৫ টাকার গৃহ সংস্কার ঋণ নেয়া রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী জাকের পার্টির মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চুরও অতীতে এবং বর্তমানে কোন ফৌজদারী মামলা নেই। তার বাৎসরিক আয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। যারমধ্যে ঘরভাড়া থেকে ৬ লাখ ৬ হাজার ৯৮০ টাকা, দোকান ভাড়া থেকে ৬ লাখ ২৩ হাজার ৬৬০ টাকা এবং হোটেল ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫০ টাকা বছরে আয় করেন তিনি। এছাড়া প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের চাকুরি থেকে বছরে আয় রয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে প্রার্থীর নিজের একটি প্রাইভেট কার, একটি মোটরসাইকেল, কিছু ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে। এছাড়া ব্যবসার মূলধন ৫১ হাজার ১৯ হাজার ৭ শত টাকার কথা অস্থাবর সম্পদের হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। এছাড়া এ খাতে তার স্ত্রীর নগদ ৩ লাখ টাকা ও ছেলের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং উভয়ের ১৮ ভরি স্বর্ণালংকার থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে স্থাবর সম্পদে নিজ, স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের কিছু অকৃষি জমি, ইয়াকুব আলী সুপার মার্কেটের ৩ ভাগের ১ ভাগের মালিকানার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে বাড়ির কথা হলফনামার সংযুক্ত বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া দোকান ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে অগ্রিম জামানতের টাকা ছাড়া প্রার্থীর কোন দায়-দেনাও নেই। াঅপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) বর্তমানে ও অতীতে কোন ফৌজদারী মামলা ছিলো না। তবে সকল প্রার্থীর মধ্যে তার দেয়া হলফনামার তথ্যানুযায়ী তিনি ও তার পরিবার অন্য প্রার্থীদের থেকে বেশি সম্পদের মালিক। যদিও অনেক প্রার্থী কিছু সম্পদের কথা বললেও মূল্যের কথা বলেনি তাদের তথ্যে। হলফনামার তথ্যানুযায়ী ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজের অংশীদারী ও খুলনা ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর বাৎসরিক আয় সাড়ে ১০ লাখ টাকারও পরে।যেখানে এপার্টমেন্ট থেকে বছরে ৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৫০ টাকা, যৌথ ব্যবসার ১০ শতাংশ লভ্যাংশ থেকে ১ হাজার ৬৭২ টাকা ও ব্যাংক আমানত থেকে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭২ টাকা আয় রয়েছে তার। এদিক প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের এপার্টমেন্ট থেকে বছরে ৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৫০ টাকা আয় রয়েছে। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে প্রার্থীর নিজের নগদ ২ কোটি ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭২ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭২ টাকা, কোম্পানির ২০ লাখ টাকার শেয়ার, ৩২ লাখ মূল্যের ১ টি মোটরগাড়ি, উপহার হিসেবে প্রাপ্ত ১০ ভড়ি স্বর্নালংকার, ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকার আসবাবপত্র ও লাইসেন্সকৃত দুইটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। এছাড়া প্রার্থীর স্ত্রীর রয়েছে নগদ ১ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত ১২ হাজার ৩৯৭ টাকা, ৪৯ লাখ মূল্যের ১ টি মোটরগাড়ি, উপহার হিসেবে প্রাপ্ত ২০ ভড়ি স্বর্নালংকার, ৫০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী এবং আড়াইলাখ টাকার আসবাবপত্র। তবে স্থাবর সম্পদে স্ত্রীর কোনকিছু না দেখালেও প্রার্থীর নিজের নামে খুলনায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ৪ তলা একটি ভবন, ঢাকার ধানমন্ডিতে ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ১ টি এপার্টমেন্ট ও উত্তরায় ১৪ লাখ টাকা মূল্যের ৬ টি এপার্টমেন্ট রয়েছে। অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মোঃ ফয়জুল করীম এর বিরদ্ধে বর্তমানে কোন ফৌজদারী মামলা না থাকলেও অতীতে হওয়া ৫ টি মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার কথা হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষকতা পেশা থেকে বছরে সর্বোচ্চ আয় ৭ লাখ ৬ হাজার টাকা, এছাড়াও তিনি এপার্টমেন্ট থেকে বছরে ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা আয় করেন। যা নিয়ে বছরে তার আয় দাড়ায় ১৪ লাখ টাকার ওপরে। প্রার্থীর নিজের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫১৬ টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত ১ লাখ ২১ হাজার ৭৬৯ টাকা। এছাড়া ইলেকট্রিক সামগ্রীর মধ্যে তার ফ্রিজ, এসি, ফ্যান, ওভেন ও মোবাইল এবং আসবাবপত্রের মধ্যে খাট, আলমিরা, চেয়ার, টেবিল, সুকেজ এর কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। অপরদিকে স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১ টি বাড়ি, ২ টি এপার্টমেন্ট এবং বেশকিছু কৃষি ও অকৃষি জমি রয়েছে। তবে তিনি স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের নামে কোন সম্পদের কথা হলফনামায় উল্লেখ করেননি। এছাড়া তিনি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে দেনা বা ঋণগ্রস্থ নন বলে প্রকাশিত হলফনামা সূত্রে জানাগেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে অতীতে এবং বর্তমানে কোন ফৌজদারী মামলা নেই। মেসার্স আলী এন্ড ব্রাদার্সের মালিক এই ব্যবসায়ীর বছরে আয় সাড়ে ৬ লাখ টাকার মতো। যারমধ্যে বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে পান ২ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে পান ৬ লাখ ৩৭ হাজার ১৩ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে প্রার্থীর নিজের নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত ১৮ লাখ টাকা রয়েছে। এছাড়া তার দুটি ট্রাক, একটি মোটরগাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল রয়েছে। ১০ ভরি স্বর্ণালংকারের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী হিসেবে টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, এসি এবং আসবাবপত্র হিসেবে খাট, সোফা, সোকেজ, ওয়াড্রোফ, ড্রেসিং টেবিল রয়েছে তার। এছাড়া দোকানঘর স্থাপন করার জন্য ৯ লাখ টাকা বিনিয়োগের কথাও অবস্থাবর সম্পদের হিসেবে দেখিয়েছেন তিনি। এছাড়া প্রার্থীর স্ত্রীর ১০ ভড়ি স্বর্নালংকার রয়েছে। স্থাবর সম্পদে স্ত্রীর কোনকিছু না দেখালেও প্রার্থীর নিজের রয়েছে দোতলা একটি বিল্ডিংসহ পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কৃষি ও অকৃষি আড়াই একরের ওপরে জমি। অপরদিকে এই প্রার্থীর একটি বেসরকারি ব্যাংকের কাছ নিজ প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে ৯ কোটি টাকার সিসি লোন নেয়া রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রুপনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ও অতীতে কোন ফৌজদারী মামলা ছিলো না বলে হলনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে রুপন নিজেকে ব্যবসায়ী দাবি করে বছরে আয় দেখিয়েছেন ৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫ টাকা এবং ব্যাংক সুদ থেকে ১ হাজার ৯৩৬ টাকা। যা নিয়ে বছরে তার আয় দাড়ায় ৪ লাখ ৩২ হাজার ২২১ টাকা। এই প্রার্থীর নিজ নামে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ও ব্যাংকে ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৪০৫ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ১২ হাজার ১৬৫ টাকা। এছাড়া রিভার আইল্যান্ড ইন্টিগ্রেশন লিঃ এর ১ কোটি টাকা মূল্যের ১ লাখ শেয়ার রয়েছে তার। ২৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মাইক্রোবাস, ৭ লাখ ৮ হাজার ৫৪৫ টাকা ব্যবসায়ীক পুজি ও পিতাকে লোন বাবদ ৫০ লাখ টাকা হলফনামায় অস্থাবর সম্পদের হিসেবের কোঠায় দেখিয়েছেন কামরুল আহসান রুপন। আর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রিভার আইল্যান্ড ইন্টিগ্রেশন লিঃ এর ১৬৫৪.৮৮ শতাংশ কৃষি জমির মধ্যে ৫ ভাগের একভাগ এবং একই প্রতিষ্ঠানের ৬.২৫ শতায়শ অকৃষি জমির মধ্যে ৫ ভাগের একভাগের মালিক তিনি বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তার স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের নামে কোন সম্পদের কথা হলফনামায় উল্লেখ করেননি তিনি। এছাড়া ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে ঋণগ্রস্থ না থাকলেও এই প্রার্থীর মা হোসনে আরা বেগম ও বোন মালিহা সাবরিনের নিকট ২৫ লাখ টাকার দেনা রয়েছেন।