জ্যৈষ্ঠের তীব্র খরতাপে একটু স্বস্তি পেতে সাধারন মানুষের কাছে কদর বেড়েছে তালের শাঁসের। সহজলভ্য ও মুখরোচক হওয়ায় এ সময় বিভিন্ন বয়সী মানুষের পছন্দের তালিকায় এটি বেশ জায়গা করে নিয়েছে। মাধবদী পৌর শহর সহ আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজার ও এলাকাগুলোতে বিক্রি হচ্ছে এই তালের শাঁস। গরমে প্রশান্তি দেয়া একটি ফলের নাম তালের শাস। মাধবদীর স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় তালের আষাঢ়ী। সোমবার এমনি একটি তালের শাসের দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা গেছে মাধবদীর হাটে আসা দুর দুরান্তের সাধারণ ক্রেতাদের। বিশেষ করে আষাঢ় মাসে এ ফলের মৌসুম বলে স্থানীয় ভাষায় এর নাম আষাঢ়ী বলে থাকেন স্থানীয়রা। যদিও আষাঢ় মাসের এখনো অনেক বাকী। এবার যেন জৈষ্ঠ মাসেই এ ফলটি নামতে শুরু করেছে। আষাঢ়ী বা তালের শাস হলো তাল পাকার আগে তালের প্রাথামিক অবস্থার নাম। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেজবুকের বিভিন্ন ওয়ালে একটি প্রশ্ন পোষ্ট করে থাকেন কোন ফলের কাঁচা অবস্থায় এক নাম, পাকা অবস্থায় আরেক নাম?” এর উত্তর হলো তালের শাস বা আষাঢ়ী ফল। প্রচন্ড তাপদাহের গরমে মাধবদীতে বেড়েছে তালের শাঁসের কদর। একটু স্বস্তি পেতে রাস্তার পাশে ফুটপাতে বিক্রি হওয়া রসালো এই ফলের স্বাদ নিচ্ছেন অনেকে। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এই ফলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এর বেশির ভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় এটা খেলে দ্রুত শরীরে পানিশূন্যতা দূর হয়। মাধবদী পৌর শহরের বাজারসহ বিভিন্ন ছোট-বড় বাজারে ও ঢাকা সিলেট মহা সড়কের আশপাশে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের তালের শাঁস বিক্রি করতে দেখা যায় আষাঢ়ী বিক্রেতাদের। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পরিবারের সবার জন্য তালের শাঁস কিনছিলেন মাধবদী পৌর এলাকার একজন শিল্প মালিক সালমা টেক্সটাইলের মালিক বাবুল মিয়া তিনি বলেন, “বর্তমানে ফরমালিন বা কেমিক্যাল ছাড়া কোনো ফল পাওয়া মুশকিল। সেখানে তালের শাঁস সর্বোৎকৃষ্ট। কোনো ধরনের ভেজাল নেই। এ ছাড়া এই গরমে তালের শাঁস খেতে মজাই লাগে। মাধবদী পৌরসভা মোড়ে তালের শাঁসের খুচরা বিক্রেতা নুরালাপুর এলাকার বাচ্চু মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে তালের শাঁস বিক্রি করছেন তিনি। আগে এক-দুই টাকায় তালের শাঁস বিক্রি করলেও এখন তা ২৫/৩০ টাকা প্রতিটি বেচাকেনা হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক তিন-চার’শ টাকা লাভ থাকে। গরম যত বাড়ে তালের শাঁসের চাহিদাও বাড়ে। গাছ থেকে তালের বাদি কেটে তা আবার নামানো, বাজারে বয়ে আনা, তারপর কাটাকুটি করে তবেই ক্রেতার হাতে দিতে হয়। কষ্ট হলেও বেশ লাভ হয়, আর লাভের কথা মনে হলে এতে কস্ট কমে যায়। মাধবদী হাই স্কুলের মাঠের পাশে আরেক খুচরা তালের শাঁস বিক্রেতা রাইনাদী এলাকার আবুল হোসেন জানান, প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ বাদি (ছড়া) তাল বিক্রি হয়। তালের শাঁসের মৌসুম এলে প্রতি বছরই তিনি এ এলাকায় তালের শাঁস বিক্রি করেন। কেউ একটু তরল, আবার কেউ একটু শক্ত শাঁস পছন্দ করেন। যদিও এতে অনেক শ্রম দিতে হয়। এ প্রসঙ্গে মাধবদী প্রাইম জেনারেল হাসপাতালের ডা. তমাল সাহা জানান, তীব্র গরমে শরীর ও পেট ঠান্ডা রাখে তালের শাঁস। তালের শাঁসে রয়েছে আয়োডিন, খনিজ, পটাশিয়াম, জিংক ও ফসফরাস। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে তালের শাঁস নানা রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। গরমে শরীরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে তালের শাঁস খুবই উপকারী।