সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১১:৩৫ অপরাহ্ন

অপবিত্র বস্তুকে পবিত্র করার উপায়

মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ মে, ২০২৩

অপবিত্র বস্তু থেকে পবিত্রতা অর্জন করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য। অপবিত্র জিনিস গায়ে বা জামায় লাগলে তা ধুয়ে পবিত্র করা অত্যাবশ্যক। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘অবশ্যই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।’ (সূরা আল বাকারা-২২২) আরো ইরশাদ করেন- ‘আর আপনার জামা পবিত্র করুন। ’(সূরা মুদদাসসির-৪) মহানবী সা: বলেছেন, (পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ)। অপবিত্র বস্তুকে পবিত্র করার উপায়গুলো হলো-
১. পবিত্র তরল বস্তু ঢেলে দেয়া : পবিত্র প্রবাহিত বস্তুর যেমন পানি বা অন্য কোনো পবিত্র তরল বস্তু অন্য বস্তুকে পবিত্র করতে সক্ষম। কোনো স্থানে ময়লা বা এ জাতীয় কোনো বস্তু দৃশ্যমান হলে পবিত্র তরল বস্তু ঢেলে দিলে সে জায়গা পবিত্র হয়ে যাবে। হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, একদিন এক বেদুইন নওমুসলিম মসজিদে পেশাব করে দেয়, তখন লোকেরা তাকে ঘিরে ধরে। মহানবী সা: তখন তাদের বললেন, ‘তোমরা তাকে ছেড়ে দাও এবং পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও।’ রাসূল সা: আরো বললেন, ‘তোমরা সহজ করার জন্য প্রেরিত হয়েছ, জটিল করার জন্য নয়।’ (বুখারি, মিশকাত-৪৫১) ২. ঘষা দেয়া : জুতার মধ্যে ময়লা বা অপবিত্র কোনো জিনিস লাগলে ঘষা দিয়ে ময়লা দূরীভূত করলে জুতা পবিত্র হয়ে যাবে। মহানবী সা: বলেছেন- যখন তোমাদের কেউ জুতা দিয়ে কোনো নাপাক বস্তু মাড়ায়, তবে মাটিই হলো তার জন্য পবিত্রকারী।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
৩. সূর্যের আলোতে শুকানো : জমিনে পেশাব বা এ জাতীয় তরল নাপাকি পতিত হলে ওই জায়গা সূর্যের আলোতে শুকিয়ে নিয়ে তা পবিত্র হয়ে যাবে।
৪. মসৃণ বস্তু মুছে ফেলা : মসৃণ বস্তু যেমন- আয়না, ছুরি, চাকু, তরবারি, নখ, হাড়, কাচ, তৈলাক্ত পাত্র ইত্যাদিতে অপবিত্র জিনিস পতিত হলে তা কাপড় দিয়ে মুছে ফেললে পবিত্র হয়ে যায়। সাহাবায়ে কেরাম যুদ্ধের সময় রক্তমাখা তরবারি মুছে তা নিয়ে নামাজ পড়তেন।
৫. টুকরা বা অংশ করা : কাঠ বা এ জাতীয় বস্তু টুকরা বা বিভিন্ন অংশ বিভক্ত করলে পবিত্র হয়ে যায়।
৬. বীর্য খুঁচিয়ে ফেলে দেয়া : পুরনো জামার মধ্যে বীর্য পতিত হলে তা খুঁচা বা টুকা দিয়ে ফেলে দিলে জামা পবিত্র যায়। তবে শর্ত হলো- পেশাব করার পর বীর্য বের না হওয়া এবং জামা নতুন না হওয়ার কারণ পেশাব করার পর বীর্য বের হলে বীর্যের সাথে পেশাব লেগে থাকতে পারে। আর নতুন জামা বীর্যকে চুষে তার সাথে সম্পৃক্ত করবে। হজরত আয়শা রা: বলেন, আমি মহানবী সা:-এর জামা থেকে খুঁচিয়ে বীর্য ফেলে দিতাম।’ (মুসলিম, মিশকাত-৪৫৫)
৭. ভেজা কাপড় দিয়ে শিঙ্গা লাগানোর স্থান মুছে ফেলা : শিঙ্গা লাগানো একটি প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতি। মহানবী সা:-এর সময় এর প্রচলন ছিল। তিনি শিঙ্গা লাগাতেন। এরপর ভেজা কাপড় দিয়ে শিঙ্গা লাগানোর জায়গা মুছে ফেলতেন।
৮. আগুন দিয়ে পোড়ানো : আগুন দিয়ে গোবর ইত্যাদি পোড়ানো হলে তা ছাই হয়ে যায়। তখন সেই ছাই পবিত্র।
৯. মূল জিনিসকে পরিবর্তন করা : কোনো বস্তুতে অপবিত্র জিনিস পতিত হলে যদি মূল জিনিস পরিবর্তন করা হয়, তবে তা পবিত্র হয়ে যাবে।
১০. চামড়া দাবাগাত বা পরিশোধন করা : কাঁচা চামড়া অপবিত্র। কিন্তু যদি কাঁচা চামড়াকে লবণ কেমিক্যাল ইত্যাদি দিয়ে রোদে শুকানো হয়, তবে তা পবিত্র হয়ে যায়। মহানবী সা: বলেছেন, ‘যখন কাঁচা চামড়া পরিশোধন করা হয় তখন তা পবিত্র হয়ে যায়।’ (মুসলিম, মিশকাত-৪৫৭)
১১. অপবিত্র বস্তুসহ কিছু বস্তু ফেলে দেয়া : ঘি বা অন্য কোনো জমাট বস্তুতে অপবিত্র বস্তু যেমন ইঁদুর ইত্যাদি পতিত হলে ইঁদুরসহ কিছু ঘি ফেলে দিলে অবশিষ্ট ঘি পবিত্র হয়ে যাবে এবং যা ব্যবহার করা বৈধ হবে। হাদিস শরিফে রয়েছে- মহানবী সা:-কে ঘি’র মধ্যে ইঁদুর পতিত হলে তার বিধান প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘যদি তেল জমাট হয়, তবে ইঁদুর ও তার চারপাশের কিছু ঘি ফেলে দিলে অবশিষ্ট তেল পবিত্র হয়ে যাবে। আর যদি তেল তরল হয়, তবে তা খাওয়া যাবে না, তা দিয়ে উপকৃত হওয়া যাবে।
১২. পশু জবাই করা : কোনো পশুর মালিক বা মালিকের অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে পশু জবাই করে, তবে ওই পশুর গোশত খাওয়া হালাল হবে। জবাই করা ব্যতীত পশুর গোশত খাওয়া হালাল নয়। তদ্রƒপ অনুমতি ব্যতীত একজন অন্যজনের পশু জবাই করা জায়েজ নয়।
১৩. কূপ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি ফেলে দেয়া : কূপের মধ্যে যদি কবুতর, মুরগি, বিড়াল ইত্যাদি প্রাণী পড়ে মারা যায় এবং তা না ফুলে ও না ফাটে, তবে প্রাণীটি ফেলে দেয়ার পর ৪০ বালতি পানি ফেলে দিতে হবে। এগুলোর চেয়ে ছোট প্রাণী পড়ে মারা গেলে ২০ বালতি পানি ফেলে দিতে হবে। এরপর কূপের অবশিষ্ট পানি পবিত্র হবে।
১৪. এক দিক দিয়ে পানি প্রবেশ করিয়ে অন্যদিক দিয়ে বের করে দেয়া : খাল বা নালায় অপবিত্র বস্তু পতিত হলে খালের একদিকে দিয়ে পানি প্রবেশ করিয়ে অন্যদিক দিয়ে বের করে দিলে খাল বা নালার অবশিষ্ট পানি পবিত্র হয়ে যাবে।
১৫. মাটি পরিবর্তন করা : মাটির উপরের অংশে অপবিত্র বস্তু পতিত হলে, উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে আনলে ওই মাটি পবিত্র হয়ে যাবে।
১৬. মূল বস্তুকে বিভক্ত করা : একই জাতীয় বস্তুর স্তূপে অপবিত্র বস্তু পতিত হলে স্তূূূপকে কয়েক ভাগে ভাগ করলে কোন ভাগে অপবিত্র বস্তু রয়েছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না, হলে ওই বস্তু দিয়ে উপকৃত হওয়া জায়েজ। তবে পবিত্র হবে না। (আল আশক ওয়ান নাজাইব-দ্বিতীয় খ-, তাহারাত অধ্যায়, পৃষ্ঠা: ১৬৭-১৬৮)
১৭. মাটি দিয়ে ঘষা ও পানি দিয়ে ধৌত করা : কুকুর কোনো পাত্রে মুখ দিলে ওই পাত্র প্রথমবার মাটি দিয়ে ঘষা দিলে, তারপর সাতবার পানি দিয়ে ধৌত করলে ওই পাত্র পবিত্র হয়ে যাবে। (আল আশবা ওয়ান নাজাইর, দ্বিতীয় খ-, তাহারাত অধ্যায়) । লেখক : প্রধান ফকিহ,আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com