নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপির সাথে সংলাপ বিষয়ক যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আপাতত আমলে নিচ্ছে না বিএনপি। তবে বিষয়টির আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেলে জবাব দিতে ভাববে দলটি।
গতকাল বুধবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একথা জানান। গত মঙ্গলবার ১৪ দলের এক সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, প্রয়োজনে জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় আমরা তাদের সাথে মুখোমুখি সংলাপ করতে চাই। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সংলাপের মাধ্যমে সবকিছু সমাধান হতে পারে। আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। সাংবাদিকরা এ বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তার ভাষ্য, ‘এতেই বুঝা যায় আওয়ামী লীগের কী অবস্থা।’ বিষয়টি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোথায় কোন সমাবেশে কে কী বলছে সেটার জবাব দেয়া আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না। আমরা রাজনীতি পরিবর্তন করছি। আমাদের কাছে কেউ লিখিত প্রস্তাব দিলে সেটার জবাব দেয়ার জন্য ভাববো।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কেনো সিদ্ধান্ত হয়নি: কাদের বলেন, “জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করবে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট এই স্বাধীন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হয়নি।” সরকারবিরোধী ‘আন্দোলন’ নিয়ে মাঠে থাকা বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বিষয়ে আওয়ামী লীগ এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, “আলোচনার বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নিইনি। আমাদের নিজেদের সমস্যা আমরা আলোচনা করব, প্রয়োজন হলে নিজেরাই সমাধান করব।“ এর আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে বিএনপিকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং দুইবার দলটির সঙ্গে সংলাপ করেছেন, সে কথাও বলেন কাদের। ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে ধানম-িতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে কাদের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।সেখানেই সংলাপের প্রসঙ্গ আসে।
দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর কথায়।
বিএনপির সঙ্গে এবার আলোচনার কথা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বার বার নাকচ করে আসছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার এক সমাবেশে আমু বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন,”আসুন, গণতন্ত্রকে অব্যাহত রাখার স্বার্থে আমরা আপনাদের সঙ্গে বসতে রাজি আছি। শেখ হাসিনা বলেছেন, আলোচনার দ্বার খোলা। তিনি বলেছেন, যে কোনোভাবে তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে প্রস্তুত।”
প্রয়োজনে আগের মত জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রতিনিধির ‘মধ্যস্থতায়’ সংলাপ হতে পারে জানিয়ে আমু বলেন, “আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই। কোথায় ফারাক? সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনে বাধা কোথায়? কীভাবে সেটা নিরসন করা যায়। এটা আলোচনার মধ্য দিয়েই সুরাহা হতে পারে। অন্য কোনো পথে নয়।” এ প্রসঙ্গে কাদের বলেন “এখন বাইরের বিষয়টা কেন বার বার আসে? জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করবে? জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করবে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট এই স্বাধীন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হয়নি।“ ‘সংকট’ সমাধানে সংবিধান কাজে দিতে পারে জানিয়ে কাদের বলেন, “সংবিধান যদি কোনো দেশের সংকটের সমাধান দিতে না পারে, সে দেশে গণতন্ত্র হবে কীভাবে?”
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংলাপের মধ্যস্থতা করতে এসেছিলেন জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তিনি দুই পক্ষকে নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করলেও বরফ গলেনি। সেবার দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে। তারপর একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলে। সেই নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে গণভবনে সংলাপে অংশ নেন বিএনপি নেতারা।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংলাপের কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, সংলাপ চলমান থাকবে। সংলাপের বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সবকিছুই সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। গতকাল বুধবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের সদরদফতরে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৩ উদযাপন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে গত মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ১৪ দলের সমাবেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রয়োজনে জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধির মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে বলে জানান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ একটি পপুলার পার্টি। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতায় চলতে হবে। জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সাথে আলোচনা করতে হবে। তাই সংলাপ বা আলোচনার বিকল্প কিছু নেই।