বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘’আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনের আগে হয়রানিমূলক মামলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’’ তার এই কথায় প্রমাণিত হয়েছে, গত ১৫ বছর ধরে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিএনপি নেতাকর্মীসহ বিরোধী মত ও সরকারের রোষানলে পড়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নিপীড়ণ করার জন্য সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (৯ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শুধুমাত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্যই রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা, হামলা, অত্যাচার, উৎপীড়ন, খুন, গুম, লুণ্ঠন, দুঃশাসন চালিয়ে আসছে এ সরকার। জবরদস্তিমূলক ক্ষমতা ধরে রেখে গত ১৫ বছরে দেড় লাখ হয়রানিমূলক মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানসহ প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গণতন্ত্র-ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলনের অপরাধে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে এখনো কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে বাড়ি-ঘর ছাড়া করা হয়েছে, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়ের, পাইকারিহারে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নির্যাতন চালিয়ে দেশটাকে নরকে পরিণত করেছে আওয়ামী সরকার।’
তিনি বলেন, ‘অবৈধ ক্ষমতা কন্টকমুক্ত করতে তারা হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা এবং কমপক্ষে এক হাজার ২০৪ জনকে গুম করেছে। তারা প্রাইভেট বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ১২ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গুরুতর জখম ও চিরতরে পঙ্গু করে দিয়েছে। ছয় বছরের শিশু থেকে মায়ের পেটের বাচ্চাকেও গুলি করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তি, কোলের বাচ্চা, বিদেশে অবস্থানকারী মানুষ, জেলখানায় থাকা লোককে নাশকতা, ককটেল বিস্ফোরণ, সরকারি কাজে বাধা দেয়া ইত্যাদি গায়েবি অভিযোগে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিশ্ব-রেকর্ড গড়ে তোলা হয়েছে। তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত কেউই এ গায়েবি মামলা ও সরকারি নির্যাতন-নিপীড়ণ থেকে রেহাই পায়নি। আজ এত দিন পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের স্বীকারোক্তিতে দালিলিক সত্যতা নিশ্চিত হলো যে, আইন আদালত, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিভিল প্রশাসন,নির্বাচন কমিশন-সব গিলে খেয়েছে নিশিরাতের সরকার।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘জনবিচ্ছিন্ন ভোটারবিহীন ব্যর্থ সরকার অস্থির উদ্ভ্রান্ত বেপরোয়া হয়ে গেছে। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন দেখলেই তা ছিন্নভিন্ন করার জন্য হামলে পড়ছে তাদের দমন বাহিনী। নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, গ্রেফতার, দমন-নিপীড়ণ, সাঁড়াশি আক্রমণ করছে। আপনারা দেখেছেন যে অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎখাতে ব্যাপক দুর্নীতির প্রতিবাদে সারাদেশে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বিএনপির অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিলে কিভাবে বর্বরোচিত কায়দায় হামলা করেছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। তীব্র গরম ও লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনগণের ওপর পাবনায় পুলিশের নেতৃত্বে নারকীয় হামলা করেছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। তাদের হামলায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, জেলার সিনিয়র যুগ্ম- আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ খান মন্টুসহ প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের দাগী সন্ত্রাসী পাবনা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম সোহেলের নেতৃত্বে যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশ শেষে ফেরার পথে লতিফ টাওয়ারের সামনে এলে পৈশাচিক হামলা চালায়। পাবনা সদর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধুবালা, ওসি তদন্ত শহিদুল ইসলাম শহীদ, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল ইসলাম রুমন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সীমান্ত ওই নারকীয় হামলার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।’
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ জানান, ‘৮ জুন দেশে অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎখাতে ব্যাপক দুর্নীতির প্রতিবাদে সারাদেশে সকল জেলা শহরের বিদ্যুৎ অফিসে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে ৩২ জনসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। গত ১৯ মে থেকে মোট ১৭১টি মামলায় গ্রেফতার ৮০২ জনের বেশি, মোট আসামি ছয় হাজার ৯১৫ জনেরও বেশি নেতাকর্মী।’