জার্মানিতে জরিপ
যেসব নারীর একাধিক শয্যাসঙ্গী ছিল বা একাধিক পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন, এমন কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে চান না অধিকাংশ তরুণ। তবে, একাধিক শয্যাসঙ্গী থাকা পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ তরুণীর। সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য। জার্মানিতে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী এক হাজার তরুণ ও এক হাজার নারীর মতামতের ভিত্তিতে এই জরিপ চালিয়েছে
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল। মতামত নেওয়া হয়েছে অনলাইনে। এই জরিপের ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আ লিক সংবাদপত্র ওয়েস্টডয়েচে অ্যালজেমাইন জেতুংয়ে। জরিপে উঠে আসা সবচেয়ে উদ্বেগজাগানিয়া তথ্যটি হলো, দেশটির এক-তৃতীয়াংশ তরুণ নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাকে ‘গ্রহণযোগ্য’ বলে মনে করেন।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ৪৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, তারা প্রকাশ্যে সমকামী আচরণকে অপছন্দ করেন। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল জার্মানির এই জরিপের ফলাফলে উঠে আসা তথ্যগুলোকে ‘বেদনাদায়ক’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ‘ফেডারেল অর্গানাইজেশন ফর ইক্যুয়ালিটি’ নামে একটি জার্মান অধিকার সংগঠন। তাদের মতে, প্রতি তিন তরুণের একজন নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাকে ‘গ্রহণযোগ্য’ বলে মনে করেন, এটি দ্রুত পরিবর্তন হওয়া দরকার। জার্মানির ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশের তথ্য বলছে, দেশটিতে ২০২১ সালে অন্তত ১ লাখ ১৫ হাজার নারী তাদের সঙ্গীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফেমিসাইডের (নারী হওয়ার কারণে হত্যা) হারেও ওপরের দিকে রয়েছে জার্মানি। করোনাভাইরাস মহামারির সময় এই সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছে জার্মান পুলিশ। সূত্র: সিএনএন
নারীদের মারধর করা যেতেই পারে মত ৩৩ ভাগ পুরুষের: প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল জার্মানি নামের একটি সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি তিনজনে একজন অর্থাৎ অন্তত ৩৩ ভাগ জার্মান পুরুষ মনে করেন, কখনো কখনো নারীর গায়ে হাত তোলা বড় কিছু নয়। সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছে । শিশুদের আন্তর্জাতিক দাতব্য প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সি এক হাজারজন নারী এবং এক হাজারজন পুরুষের কাছে নারী-পুরুষের সমান অধিকার-সংশ্লিষ্ট কিছু প্রশ্নের জবাব চাওয়া হয়। এক প্রশ্নের জবাবে ৩৩ ভাগ পুরুষ জানান, ঝগড়ার একপর্যায়ে উত্তেজনাবশে নারীর গায়ে হাত তোলা ‘গ্রহণযোগ্য’। তাদের অনেকেরই সেই অভিজ্ঞতা আছে। কারণ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অন্তত ৩৪ ভাগ পুরুষ অতীতে এক বা একাধিকবার নারীর সাথে হিংসাত্মক আচরণ করেছেন।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল জার্মানির সমীক্ষা আরো জানাচ্ছে, জার্মানির অনেক পুরুষ ঘরের বাইরে অর্থাৎ অফিস-আদালতে কাজ করা নারীদের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল নন। কারণ, সমীক্ষায় অংশ নেয়া ৫২ ভাগ পুরুষ মনে করেন, সংসারের জন্য আয়-উপার্জন পুরুষদেরই করা উচিত। তারা আরো মনে করেন, নারীদের বিশেষত ঘরের কাজই করা উচিত।
পছন্দমতো যৌনজীবন যাপনের বিষয়ে জার্মানদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশের মানসিকতাও মানবাধিকার কর্মীদের বিস্মিত করেছে। সমীক্ষায় অংশ নেয়া ৪২ ভাগ মানুষ জানিয়েছেন, সমকামিতা নিয়ে কোনো প্রচার তারা পছন্দ করেন না।
নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজের জন্য পরিচিত ফেডারেল ফোরাম মেন-এর কারস্টেন কাসনার সমীক্ষার ফলাফলে খুব বিস্মিত। জার্মানির ফুঙ্কে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘৩৩ ভাগ পুরুষ নারীর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক ব্যবহারকে যে এভাবে দেখছে, এটা নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয়। জরুরি ভিত্তিতে এ অবস্থা পরিবর্তন করা দরকার।’ জার্মানিতে নারীর বিরুদ্ধে হিংস্রতা অবশ্য নতুন কিছু নয়। কেন্দ্রীয় পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে পুরুষ সঙ্গীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এক লাখ ১৫ হাজারেরও বেশি জার্মান নারী। হিসাব করে দেখা গেছে, ওই বছর প্রতি ঘণ্টায় নির্যাতিত হয়েছিলেন কমপক্ষে ১৩ জন নারী। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস