মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
দৃষ্টিনন্দন নতুন সড়কে বদলে যাবে ফরিদগঞ্জ চান্দ্রা-সেকদি-টুবগি এলাকার সূর্যগিরি আশ্রম শাখার উদ্যোগে দক্ষ জনশক্তি গঠনের আলোকে সেলাই প্রশিক্ষণ উদ্বোধন নগরকান্দা ও সালথায় দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আজ রাউজানে সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবহিতকরণ সভা রাঙ্গামাটিতে ইউপিডিএফ’র ডাকা আধাবেলা অবরোধ পালিত শেরপুরে কলেজ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক সমাবেশ ও আলোচনা সভা সোনাগাজীতে স্কুল ভবন নির্মাণে বাধার অভিযোগে মানববন্ধন চট্টগ্রামে চুয়েটের সাথে তিনটি সংস্থার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কমিশন ভাবছে না: ইসি আলমগীর বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে কঠোরভাবে বাজার তদারকির নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

বিনয়ীর মর্যাদা

হাসান মুরাদ
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৪ জুন, ২০২৩

বিনয়, নম্রতা নবী-রাসূলদের স্বভাব। মু’মিনের ভূষণ। যার কাছে বিনয়ের গুণ নেই সে প্রকৃত মু’মিন নয়।
হজরত ফুজায়েল ইবনে ইয়াজ রা: বলেন, বিনয় হলো অকপটে সত্য স্বীকার করা। সত্য মেনে তা অনুসরণ করা যদিও তা অধীনস্থ, ছোট বা মূর্খের কাছে হয়। (আল-ইহইয়াউল উলুম-৩/৩৬২) হজরত হাসান রা: বলেন, বিনয় হলো নিজেকে ছোট মনে করা। অন্যকে নিজের ওপর প্রাধান্য দেয়া। (আত-তাওয়াজুওয়ালখুমুল-১৫৪) হজরত ইয়াহইয়া বিন কাছির রহ: বলেন, বিনয় তিন গুণের সমষ্টি- ১. উত্তম মজলিসে নিজেকে ছোট মনে করা; ২. আগে অন্যকে সালাম দেয়া; ৩. আত্মপ্রশংসা, খ্যাতি এবং নিজের কৃত কল্যাণকর কাজ প্রকাশ পাওয়াকে অপছন্দ করা। (আত-তাওয়াজুওয়ালখুমুল-১৫৫)
ইবনে মুবারক রহ: বলেন, বিনয় হলো পার্থিব-ঐহিক নিয়ামতে নিজেকে নি¤œস্তরের মানুষ থেকে তুচ্ছ জ্ঞান করা এবং উপরস্থ মানুষের তুলনায় নিজেকে তুচ্ছ মনে না করা।
বিনয়ীর মর্যাদা : হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা: বলেন, যে বিনয়ী হয় আল্লাহ তার হেকমত বৃদ্ধি করে দেন এবং বলেন উন্নীত হও, আল্লাহ তোমাকে উন্নতি দান করেছেন। আর যে অহঙ্কার, সীমা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে জমিনে নিচু করে দেন, আর বলেন- তুমি লাঞ্ছিত হও, আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছিত করেছেন। অহঙ্কারী নিজের চোখে বড়; কিন্তু অন্যের চোখে ছোট। এমনকি সে অন্যের চোখে শূকর থেকেও নিকৃষ্ট হয়ে যায়। (আল-ইহইয়াউল উলুম-২/২৫৪)
হজরত আবু হাতিম রা: বলেন, বিনয় মানুষের মানমর্যাদা বৃদ্ধি করে দেয়। মানুষের সম্মান উঁচু করে দেয়। (আযযুহুদলিল ইমাম আহমাদ-২০)
হজরত আয়েশা রা: বলেন, তোমরা উত্তম ইবাদতের ব্যাপারে খুবই উদাসীন। উত্তম ইবাদত হলো- নম্রতা-বিনয়। (বুখারি)
বিনয়ীর কিছু দৃষ্টান্ত : রাসূল সা:-এর সামনে বাসি খাবার এবং গমের রুটি দেয়া হলেও তিনি তা নিঃসঙ্কোচে খেতেন। (তিরমিজি)
হজরত আনাস রা: বলেন, রাসূল সা:-এর সামনে পোকাখাওয়া খেজুর পেশ করা হতো। তিনি তা বেছে বেছে খেতেন। (সহিহ জামে) এ ছাড়াও রাসূল সা: নিজের কাজ নিজে করতেন। ঘরের কাজে স্ত্রীদের সাহায্য করতেন।
ইবনু আছির রহ: বলেন, এর দ্বারা রাসূল সা: বিনয়ী হতে চাইতেন এবং অহঙ্কার দূর করতে চাইতেন। (মাদারিজুস সালিকিন-২৪৪ )
হজরত আবু মুলাইকা রা: বলেন, হজরত আবু বকর রা: উটের পিঠে ছিলেন। তার হাত থেকে উটের লাগাম পড়ে গেল। লাগাম উঠানোর জন্য তিনি উটকে বসালেন এবং লাগাম তুলে নিলেন। আবু মুলাইকা বলেন, আমি বললাম, হজরত আমাকে আদেশ করলে আমিই তা তুলে দিতাম। হজরত আবু বকর রা: বললেন, আমার হাবিব সা: আমাকে কারো কাছে কোনো কিছু চাইতে নিষেধ করেছেন। (সিফাতুস সফওয়া-১/২৩৫)
হজরত উরওয়া ইবনে জুবাইর রা: বলেন, আমি দেখলাম, হজরত ওমর রা: নিজ কাঁধে পানির মশক বহন করছেন। আমি বললাম, হজরত আপনি নিজে মশক বহন করছেন কেন? উত্তরে বললেন, গত দিন বিভিন্ন প্রতিনিধিদল এবং শ্রোতারা আমার কাছে এসেছিল। এতে আমার অন্তরে কিবির অনুভব হচ্ছে। তাই আমি তা দূর করছি। (মাদারিজুস সালিকিন-২/৩৩)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: কোনো প্রয়োজনে বের হলেন। তখন কিছু মানুষ তার পেছনে হাঁটতে লাগলেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বললেন, তোমরা আমার পেছনে হাঁটছ, তোমাদের কোনো উদ্দেশ্য আছে? তারা বলল, না। আমরা আপনার সাথে চলার ইচ্ছা করেছি। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বললেন, তোমরা ফিরে যাও। এতে অনুসারীরা নিচুতা অনুভব করে এবং অনুসৃত ফিতনায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে। (সিফাতুস সফওয়া-১ : ৪০৬)
মুবারক ইবনে ফুজালা রহ: বলেন, ওমর রা: এক ব্যক্তির সাথে কোনো বিষয়ে কথা বলছিলেন। কোনো কারণে লোকটি ওমর রা:-কে বললেন, ওমর আল্লাহকে ভয় করো! এ কথা শুনে পাশে থাকা লোকগুলো অবাক হলেন! লোকটিকে বললেন, তুমি ওমরকে বলছ; আল্লাহকে ভয় করো? ওমর রা: তখন তাদের বললেন, তোমরা তাকে বলতে দাও! শুনে রাখো, তোমাদের মধ্যে এমন কথা বলার মানুষ না থাকলে তোমাদের কোনো কল্যাণ হবে না। আর এমন কথা না শুনলে আমাদেরও কোনো কল্যাণ হবে না। (তারিখু ওমর লি ইবনুজাওঝি-১৭৬)
বিনয়ীদের বর্ণিত দৃষ্টান্তে আমাদের ভাববার যথেষ্ট অবকাশ আছে। আমরাও মানুষ। আল্লাহর সেরা সৃষ্টি। কিন্তু আমরা কি বিনয়ী? আমরা কি নিজেদের তুচ্ছজ্ঞান করি? সফল তারাই যারা রবের সন্তুষ্টির জন্য বিনয়ী হয়। বিনয়ীদের মর্যাদা আল্লাহ দুনিয়াতে দান করেন। আর আখিরাতেও দেবেন নিরবছিন্ন পুরস্কার। আমরা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনয়ী হতে পারি। আমিন!




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com