রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ অপরাহ্ন

রুটিন কার্যক্রমেই আটকে আছে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩

এখনও ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু না হলেও প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। ঢাকা শহরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশন নানা কর্মসূচি হাতে নিলেও প্রতিবছরই এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাক মৌসুম জরিপে চলতি বছর ডেঙ্গু ব্যাপক আকার ধারণ করার পূর্বাভাস দিলেও এবারও দুই সিটির ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ রুটিন কার্যক্রমেই আটকে আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। মানুষের অসচেতনতা ও গৎবাঁধা কার্যক্রমের কারণেই এ সমস্যার কোনও সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) অংশীদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছে। এ জন্য তারা সরকারের কাছে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছে। এর বাইরে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রতি ওয়ার্ডে ১৩ জন করে দৈনিক ৯৭৫ জন মশকনিধন কর্মী কাজ করছেন। সকালে লার্ভিসাইডিং প্রয়োগ করা হয় এবং বিকালে ফগিং করা হয়। আগামীকাল রবিবার (১৮ জুন) থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করবে সংস্থাটি। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) দুই বেলা লার্ভিসাইডিং এবং ফগিংয়ের মতো রুটিন কার্যক্রমের বাইরে স্কাউট ও বিএনসিসির সদস্যদের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া কোনও প্রকার কীটনাশক ছাড়াই বিটিআই ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগের সিদ্ধান্ত হলেও বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
দুই সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মশার লার্ভা নিধনে প্রতিদিন সকালে টেমিফস নামের ওষুধ ব্যবহার করছে তারা। বিকালে ফগিং কার্যক্রমে ব্যবহার করা হচ্ছে মেলাথিওন ও ডেল্টামাইথিন। লর্ভি সাইডিংয়ের সময় টেমিফস ওষুধটি ৪০ লিটার পানির সঙ্গে ৬০ মিলিলিটার পরিমাণ ব্যবহার করা হয়। এ ওষুধ ছিটানো হলে মশা আর ডিম পাড়তে পারে না এবং লার্ভা থাকলে সেগুলো নিশ্বাস নিতে না পেরে মারা যায়। অ্যাডাল্টিসাইডিং বা ফগিংয়ের সময় ব্যবহৃত মেলাথিওন ও ডেল্টামাইথিন ডিজেলের সঙ্গে মিশিয়ে ফগার যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়। এসব ওষুধের ব্যবহার প্রসঙ্গে কীটতত্ত্ববিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে লার্ভিসাইডিং ও অ্যাডাল্টিসাইডে যে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, এগুলোর নির্দিষ্ট ডোজ ও মাত্রা রয়েছে। এর জন্য মশকনিধনে কাজ করা কর্মীদের যে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার ঘাটতি রয়েছে।
সিটি করপোরেশন প্রতি ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানোর জন্য ১৩ জন করে টিম গঠন করে দিলেও এ সংখ্যা ওয়ার্ডগুলোর আয়তনের তুলনায় কম। এ কারণে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নিজস্ব তত্ত্বাবধানে স্বেচ্ছাসেবক টিমের মাধ্যমেও ডেঙ্গু নিধনে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালান বলে জানা গেছে।
ডিএসসিসির ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, আমরা সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত স্কুল-কলেজ পর্যায়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করি। আমাদের সোসাইটিগুলোতে যারা কেয়ারটেকার ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন, তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিই। এ ছাড়া নিয়মিত মাইকিং করার পাশাপাশি সচেতনতামূলক লিফলেটও বিতরণ করা হয়। সিটি করপোরেশনের ১৩ জনের টিমের বাইরেও আমাদের স্বেচ্ছাসেবক টিম নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিবছর ঠিক একই ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হলেও প্রতিবছর চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে মশা। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশাবাহিত এই রোগ নিয়ে দেশে গবেষণার অপ্রতুলতা রয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে কোনও সক্রিয় নীতিমালাও নেই। এর বাইরে ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও মানুষের অসচেতনতা তো আছেই।
ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, আমাদের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে কীটতত্ত্ববিদ ও বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি রয়েছে। কমিটি বছরে দুবার বৈঠক করে। এ বৈঠকের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে মিটিং করেছে। সে মিটিংয়ে ওষুধ সিলেক্ট করে সে অনুযায়ী ক্রয়প্রক্রিয়াসহ যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ব্যবস্থা ভালোভাবেই কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে ড. কবিরুল বাশার বলেন, আমাদের যেসব সংস্থা ও সংগঠন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করে, তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমাদের যে গবেষণা দরকার, তারও ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া দেশের মানুষও পর্যাপ্ত সচেতন নয়। এ অবস্থায় মশাসহ অন্যান্য কীটপতঙ্গ নিয়ে গবেষণা করা এবং মাঠপর্যায়ে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে কাজ করার জন্য একটা আলাদা কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন।- বাংলা ট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com