রোগাক্রান্ত গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন প্রাণীর চিকিৎসা নিতে এসে অপেক্ষায় কৃষক- খামারিরা। কেউ বসে আছেন, কেউবা ডাক্তারকে না পেয়ে হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে। কেউ ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থেকে প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার কক্ষে চেয়ারে বসেই ঘুমাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের অবস্থা। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের ডিউটি ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট চিকিৎসায় ব্যস্ত সময় পার করেন উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম। জানা যায়, প্রতিদিন সকালে অফিসে এসে স্বাক্ষর করে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। এরপর তিনি নিজ কর্মস্থলে ডিউটি না করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেট ভাবে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ফি নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ডিউটি করার কথা থাকলেও তা তোয়াক্কা না করে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম অধিক টাকার লোভে প্রাইভেটে ব্যস্ত সময় পার করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পল্লী চিকিৎসক জানান, তিনি (প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা) সকালে এসে অফিসে স্বাক্ষর করে একজন পল্লী চিকিৎসককে সাথে নিয়ে বের হয়ে যান। ওই পল্লী চিকিৎসকের মোটরসাইকেল যোগে রাত দিন চষে বেড়ান উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে নেন ভিজিট। বিভিন্ন সময়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তার নিজ কর্মস্থলে নেই। তিনি কোথায় আছেন জিজ্ঞেস করলে অফিসের লোকজন জানান স্যার বাহিরে আছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের ডিউটি ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেটে ভিজিট করতে বের হয়েছেন। কথা হয় উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের গৃহস্থ বায়তুল্লার সাথে। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় লাম্পি স্কিন রোগ ব্যাপকহারে হানা দিয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লোকজনকে খবর দিয়েও পাওয়া যায় না। খবর দিলে বাড়িতে যায় না ডাক্তার। বাধ্য হয়ে আসি প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে। হাসপাতালে এসে অনেক সময় অপেক্ষা করে ফেরত আসি। দেখা পাইনি বড় ডাক্তারের (প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার)। উনার অফিসে গিয়ে দেখি আমার মতো অনেকেই ঘুরে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকায় ১০ থেকে ১৫ টি গরু মারা গিয়েছে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে। পরে কয়েকদিন ঘুরাঘুরি করে আমার গরুর চিকিৎসা করাই। তবে চিকিৎসা পেতে ভোগান্তির শেষ নেই। এবিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা যার কোন ভিত্তি নেই। এপ্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, অফিস টাইমে বাহিরে প্রাইভেট চিকিৎসা দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুমারী খাতুন বলেন, অনেক সময় মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ থাকে, যে কারণে অফিস ছেড়ে বাহিরে যেতে হয়। তবে অফিস চলাকালীন সময়ে প্রাইভেটে ভিজিট নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।