রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
আমার কথা বলে চাঁদা-সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করলে পুলিশে দিন : আসিফ নজরুল তিস্তার পানি দ্রুত বাড়ছে আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন মাহমুদুর রহমান ঢাকার খাল দিয়ে ব্লু নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার : পানিসম্পদ উপদেষ্টা শিক্ষাব্যবস্থায় হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদ বরদাস্ত করা হবে না : মামুনুল হক নৌকা থাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন হতে পারে : উপদেষ্টা আদর্শিক ভিন্নতা থাকলেও সবাই একসঙ্গে জাতি গঠনে কাজ করবে: মঞ্জুরুল ইসলাম জাতিসংঘে ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা মাহমুদ আব্বাসের মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুরের দাফন ছাত্র-জনতার অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয় স্বৈরাচার থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছে

ফটিকছড়ির দাঁতমারায় দৌলতের আম্রপালির বাগান দেখে মন জুড়াবে পর্যটকদের

আলমগীর নিশান (ফটিকছড়ি) চট্টগ্রাম :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩

ফটিকছড়ির দাঁতমারা ইউনিয়নের দৌলতের আম্রপালি আমের বাগান দেখে মন জুড়াবে যে কোন পর্যটকদের। প্রায় ৫ একর টিলা ভুমির দৃষ্টি নন্দন বাগানের এক হাজারেরও বেশী আম গাছে শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা আম্রপালি আম। প্রত্যেকটি আম গাছে ঝুলছে রসালো ও সুসাদু এসব আম । প্রতিদিন তাঁর আম বাগানে ভিড় করছে ফটিকছড়িসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ও খুচরা আমের ক্রেতাসহ ভ্র্রমন পিয়াসিরা। মো. এয়াকুব দৌলত। দৌলত নামেই এলাকায় পরিচিত এ তরুন কৃষক ছিলেন প্রবাসী। দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে তেমন উন্নতি করতে পারছিলেননা। এক সময় ফেরত আসেন প্রবাস থেকে। দেশে এসে বেকারত্বের কারণে অনেকটা হতাশায় ভুগছিলেন তিনি । একদিকে বেকারত্ব অন্যদিকে পরিবারের চাপ সব মিলিয়ে অনেকটা মানষিক যন্ত্রনায় দিক হারা হয়ে পড়েন তিনি। পার্শ্ববর্তী রামগড় উপজেলায় এক আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে গেলে তাকে খেতে দেয়া আমের প্রতি কৌতুহল জাগে দৌলতের। এত সুসাদু আম আমাদের দেশের মাটিতে কিভাবে উৎপাদন হয়। কৌতুহল থেকেই শুরু পথচলা। বাড়ীতে এসে পরিকল্পনা করে আম্রপালির চারা সংগ্রহ করে নিজের কিছু পরিত্যক্ত জমিতে শুরু করে ছোট পরিসরে আম্রপালির চাষ। দৌলতের এমন কর্মকান্ড দেখে পরিবারসহ এলাকার লোকজন তাকে অনেকটা পাগল আখ্যায়িত করে। দেশীয় ভুমিতে কি এ ধরনের আমের চাষ হবে? এমন প্রশ্ন ছিল সকলের। কিন্তু সকলের অবজ্ঞা আর অবহেলাকে শক্তি আর অনুপ্রেরনায় পরিণত করে সামনে এগিয়ে চলেন দৌলত। সল্প পরিসরে প্রথম বছরের সফলতাকে অনুপ্রেরনা হিসেবে নিয়ে শুরু করেন বড় পরিসরে আম চাষ। এখন দাঁতমারা ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর ফকিরটিলা এলাকায় ৫ একর টিলা ভুমিতে তাঁর বিশাল আম্রপালির বাগান। যেখোনে রয়েছে প্রায় এক হাজার আম্রপালির গাছ। আম্রপালি আম আমের একটি জাত। ১৯৭১ সালে এই হাইব্রিড জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। ভারতীয় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ড. পিযুষ কান্তি মজুমদার ‘দশেরী’ এবং ‘নিলম’ জাতের দুটি আমের সংস্করায়নের মাধ্যমে নতুন এ জাতটি উদ্ভাবন করেন। যার নাম দেয়া হয় আম্রপালি। তারপর থেকে এই আমটি সারা ভারতের খামার এবং বাগানগুলিতে রোপন করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার চাকদহে আম্রপালি আম প্রথম রোপণ করা হয়। ভারতীয় আমের এ জাতটি বাংলাদেশে আসে ১৯৮৪ সালে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ এনামুল হক এবং চুয়াডাঙ্গার আজাদ হাইব্রিড নার্সারির কর্ণধার আবুল কালাম আজাদের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে এই জাতটি আমদানি করা হয়। এই জাতের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উন্নত জাতের আম এক গাছে এক বছর ফলে, পরের বছর ফলে না। কিন্তু আম্রপালি প্রতিবছর ফলে। এর মিষ্টতার পরিমাণ ল্যাংড়া বা হিমসাগরের চেয়ে বেশি। আম গাছটি গঠন ছোট, গাছে ছোট আকারের আমের গুচ্ছ ধরতে দেখা যায়। আমের রং কমলা-লাল এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক জাতের আমের তুলনায় এতে প্রায় ২.৫-৩.০ গুণ বেশি বিটা ক্যারোটিন থাকে। তবে এই গাছের জীবনকাল সংক্ষিপ্ত। গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ১৬ টন। এদিকে এ বছর প্রায় ২০ টন আম বিক্রির প্রত্যাশা করছেন তিনি। যা বিক্রি করার পর শ্রমিকের মজুরীসহ আনুসাঙ্গিক খরচ মিটিয়ে প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ আয় হবে বলে আশা করছেন তিনি। সরকারীনিয়ম অনুযায়ী গত ১২ জুন থেকে শুরু হয়েছে গাছ থেকে আম সংগ্রহ ও বাজার জাত। এ ভচর সাইজ অনুযায়ীআমের বাজার দর নির্ধারন করা হয়েছে বড় সাইজের আম ৮০ টাকা,মাঝারি আম ৬০ টাকা এবং ছোট সাইজের আম ৫০ টাকা। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে দৌলতের বাগানের প্রায় ১০ জনেরও বেশী নারী ওপুরুষ শ্রমিক গাছ থেকে আম সংগ্রহ করে বাজারজাত করার জন্য ক্যারেট ভর্তি করছেন। স্থানীয় দাঁতমারা বাজারে অস্থায়ী স্টল দিয়ে স্থানীয়ভাবে খুচরা বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাইকারীভাবে সরবরাহ করছেন তিনি। দৌলতের আম্রপালির বাগান দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী পুরুষরা ভিড় করছেন তাঁর বাগানে। চলছে বেচাকেনাও। তবে কৃষিকর্মকর্তাদের কাছ প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে আরো বৃহৎ আকারের আম্রপালির চাষ করা সম্ভব বলে জানান এ কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, এ বছর আবহাওয়া প্রতিকুলে থাকায় ভাল মুকুল আসলেও ফলন আশানুরুপ হয়নি। এ ছাড়া আমের মুকুলে বিভিন্ন ধরনের পোকা ও ছত্রাকের আক্রমনের কারণে অনেক আম পরিপক্ষ হওয়ার আগেই জড়ে গেছে। এতে করে বিপুল পরিমাণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন বলে জানান দৌলত। তরুন এ কৃষি উদ্যোক্তা জানান, ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের টিলা ভুমিতে তার বাগান হওয়ায় কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ?ৃকষি পরামর্শ দেয়না। ফলে তাঁর মত অনেক উদ্যোক্তাই আমের মুকুলে পোকার আক্রমন প্রতিরোধে সময়মত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেননা। এ ছাড়া সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী সল্পসুদে কৃষি ঋনও পাননা তাঁর মত অনেক তরুন কৃষি উদ্যোক্তা। দৌলতের পিতা আবুল কাসেম বলেন, প্রথম দিকে ছেলের আম্রপালির চাষের উপর পরিবারের অনিহা থাকলেও পরবর্তীতে তাঁর সফলতা দেখে সবাই খুশি। জীবনের এখন শেষ বয়সে এসে নাতি নাতনি নিয়ে বাগানেই ঘুরে বেড়ান তিনি। দাঁতমারা ইউপি চেয়ারম্যান মো. জানে আলম বলেন, দৌলতের মত শিক্ষিত বেকার যুবকরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পরিত্যক্ত জমিতে আম্রপালিসহ নানা ধরনের ফলজ বাগান করছে। এটি খুবই ইতিবাচক একটি উদ্যোগ। তিনি বলেন এসব তরুন কৃষি উদ্যোক্তাদের আরো উৎসাহিত করতে পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতাকরা হবে। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ পড়ে থাকা ইউনিয়ন কৃষি অফিস চালুর বিষয়ে আগামী উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, আম্রপালি মিষ্টিজাতের আম। এটি ইন্ডিয়ান একটি জাত। আমাদের দেশে এই আমটিকে আমরা মডিফাই (উন্নতকরণ) করে ‘আম্রপালি’ নাম দিয়েছি। এটি বারি আম-৩। এই আম সাইজে ছোট এবং আঁশবিহীন। প্রবাসী দৌলত আম্রপালি চাষে সফল হচ্ছেন। তাকে দেখে অন্যরা উৎসাহিত হচ্ছে। আমরা সকল চাষীদের সহযোগিতা করছি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com