লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ফজলে এলাহী শামীম নামে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে এক অসহায় পরিবারের দোকানঘর দখলচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, ভুয়া স্ট্যাম্প সৃজনের মাধ্যমে গত আড়াই মাস ধরে অসহায় ওই পরিবারের ফজুমিয়ারহাট বাজারের দোকানঘর দখলে নিতে তিনি বিভিন্নভাবে পাঁয়তারা করছেন। শুক্রবার কমলনগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা এসব অভিযোগ করেন। অভিযুক্ত ফজলে এলাহী শামীম উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজুমিয়ারহাট এলাকার ছায়েদুল হকের ছেলে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তালিকাভুক্ত ইলেকট্রিশিয়ান মো. ইউছুফ গেল বছরের ৩ আগস্ট বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যান। মৃত্যুর পর ইউছুফের নিঃসন্তান স্ত্রী তাছলিমা বেগমের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে কয়েক মাস আগে তাছলিমা স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যান। এর পর থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফজলে এলাহী শামীম ইউছুফের রেখে যাওয়া ফজুমিয়ারহাট বাজারের একটি দোকানঘরের মালিকানা দাবি করে দখলচেষ্টা করছেন। ইউছুফের স্ত্রী তাছলিমার কাছ থেকে দোকানঘরটি কিনে নেওয়ার দাবি করে তিনি এ দখলচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা হওয়ায় শামীমের প্রভাবে তাঁরা এখন চরম আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁদের দাবি, ইলেকট্রিশিয়ানের পাশাপাশি ফজুমিয়ারহাট বাজারে ইউছুফের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল। ইউছুফের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য নিয়ে ইউপি সদস্য শামীম ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মালামাল আত্মসাৎ করেছেন। এনিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এ সময় তাঁরা ইউপি সদস্য শামীমের এ অপতৎপরতা বন্ধে প্রশাসনের সহযোগিতার দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে মৃত ইউছুফের মা হাজেরা খাতুন, ভাই জহিরুল ইসলাম, সৈয়দ আহাম্মদ, বোন শাহীনুর বেগম, আজিমা খাতুন ও রাবেয়ার বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা ফজলে এলাহী শামীম জানান, ওই দোকানঘরটি ইউছুফ মারা যাওয়ার আগে স্ত্রী তাছলিমাকে স্ট্যাম্পে লিখিতের মাধ্যমে দান করেন। এর মাধ্যমে মালিকানা পেয়ে তাছলিমা আড়াই মাস আগে ওই দোকানঘরটি ছয় লাখ টাকা মূল্যে তাঁর কাছে বিক্রি করে গেছেন। তাছলিমার সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি স্ট্যাম্পও তাঁর কাছে রয়েছে। তিনি বলেন, নিজের টাকায় ক্রয়করা দোকানঘর দখলে নেওয়ার চেষ্টা দোষের কিছু না। অপরদিকে ইউছুফের স্ত্রী তাছলিমা আক্তার জানান, ইউপি সদস্য শামীমকে তিনি কোনো স্ট্যাম্প দেননি। এমনকী শামীমের কাছে তিনি দোকানঘরটি বিক্রিও করেননি। তবে, স্বামী মারা যাওয়ার পর শ^শুর পক্ষের লোকজন তাঁকে স্বামীর সম্পদ থেকে বঞ্চিতের অপচেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্য শামীমের সহযোগিতায় নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা চালাচ্ছেন। চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেননি। তবে, খোঁজ-খবর নিবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, ভুক্তভোগী পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণীত হলে ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।