শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন

সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৫ জুলাই, ২০২৩

গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সুনামগঞ্জ জেলা শহরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত রোববার দুপুর পর্যন্ত সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
মুষলধারে বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পৌর প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসনের তড়িৎ সমন্বিত উদ্যোগে এই জলাবদ্ধতা থেকে পৌরবাসী দ্রুত মুক্তি চায়। বিশেষ করে শহরের দখলকৃত খাল পুনরুদ্ধার এবং খনন করা এখন এ শহরের মানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কাউকে দোষারোপে নয়, সবার সম্মেলিত সহযোগিতায় এখন জলাবদ্ধতা নিরসন করা অতি প্রয়োজন বলে মনে করেন পৌরবাসী। জামাইপাড়া, বাঁধনপাড়া ,নতুনপাড়া, জামতলা, শিল্পকলা পয়েন্ট, ষোলঘর কাজির পয়েন্টসহ কিছু স্থানে খুবই বিষাদময় অবস্থা। বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টিতে বাসা বাড়িতে পানি উঠা এখন নিত্যদিনের বিষয়। এই দুর্ভোগ থেকে পৌর নাগরিকরা মুক্তি চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি জানিয়েছে।
এদিকে সুনামগঞ্জের ছাতক পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার প্রধান নদী সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা ও কালনী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে এখন পানি বাড়তে শুরু করায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
অধিক বৃষ্টির কারণে সুনামগঞ্জ শহরের কাজির পয়েন্ট, উকিলপাড়া, নতুনপাড়া, বড়পাড়া সাহেববাড়ি ঘাট, ষোলঘর হাজিপাড়া, জামতলা, সুলতানপুর, পাঠানবাড়ি ও নবীনগরসহ পৌর এলাকার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানি ঘরে উঠায় সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষজন বন্যার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
অপর দিকে জেলা শহরের সাথে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিপুর ও দিরাই শাল্লার একমাত্র সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মাঝারি বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে বড় ধরনের বন্যার কোনো আশঙ্কা আপাতত নেই। এদিকে দুপুরে দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় আসন্ন বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সকল জনপ্রতিনিধিকে নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী।

টাঙ্গাইলের অভ্যন্তরীণ নদীতে বাড়ছে পানি, ভাঙছে বাড়িঘর
টাঙ্গাইলে যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত কয়েকদিন যমুনার পানি ১-৩ মিলিমিটার করে কমতে থাকলেও রোববার (২ জুলাই) থেকে আবার বাড়তে শুরু করেছে। এর প্রভাবে জেলার ধলেশ্বরী, নিউ ধলেশ্বরী, বংশাই, ঝিনাই, ফটিকজানী, পৌলী, এলেংজানীসহ অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতেও পানি বাড়ছে। ফলে কোনো কোনো এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল ৯টা থেকে সোমবার (৩ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত যমুনার পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ০.০৩ মিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৭৮ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে বংশাই নদীর পানি কাউলজানী পয়েন্টে ০.০৮ মিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২ দশমিক ২৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে ধলেশ্বরীর এলাসিন পয়েন্টে ০.০১ মিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২ দশমিক ১৬ মিটার, ঝিনাই নদীর জোকারচর পয়েন্টে ০.০১ মিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৪৬ মিটার, ফটিকজানী নদীর নলছোপা পয়েন্টে ০.০১ মিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২ দশমিক ১২মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর পানি বাড়ায় নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি ও সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে মির্জাপুরের ফতেপুর ইউনিয়নে ঝিনাই (স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষায় বউমরা) ও বংশাই নদীর তীব্র ভাঙনে বাজার, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে রয়েছে। কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটিও হুমকির মুখে রয়েছে। নদীতে পানি বাড়ায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে নদী তীরবর্তী মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, ভাঙনের ফলে গত কয়েক বছরে ফতেপুর ইউনিয়নের এলাকার একটি মন্দিরসহ ২০০ একর জমি ও দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় মির্জাপুরের একাব্বর হোসেন সেতু, চাকলেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়, থলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাটাখালী বাজার ঝুঁকিতে পড়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, ঝিনাই নদীর বাদ্যকর পাড়া, হিলড়া, থলপাড়া, ফতেপুর বাজার, কাটাখালী বাজার, চাকলেশ্বর এবং বংশাই নদীর গোড়াইল, ত্রিমোহন, কুমারজানী ও দেওহাটা এলাকায় ভাঙন চলছে। এরমধ্যে ঝিনাই নদীর ফতেপুর ও থলপাড়া এবং বংশাই নদীর গোড়াইল ও কুমারজানীতে ভাঙনের তীব্রতা বেশি। মির্জাপুরের কুর্ণী-ফতেপুর সড়কের ফতেপুর বাজারের দক্ষিণ পাশে প্রায় ৩০০ ফুট পাকা সড়ক ভেঙে গেছে।
কাটাখালী বাজারের পূর্ব পাশের বাসিন্দা তায়েব হোসেন জানান, গত বছর ভাঙনের কারণে সেখানে থাকা তিনটি খুঁটির মধ্যে একটি ঝিনাই নদীতে পড়ে গেছে। বর্তমানে বিদ্যুতের তিনটি ট্রান্সফরমারসহ আরও কয়েকটি খুঁটি ঝুঁকিতে রয়েছে। ওই খুঁটি বা তার নদীতে পড়ে গেলে থলপাড়া, ফতেপুর, সুতানড়ী, পারদিঘী, হিলড়া, আদাবাড়িসহ আশপাশের অন্তত ১৫টি গ্রাম বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
স্থানীয়রা জানায়, নদীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছর খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হয়। বর্ষার শুরুতে নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে।
স্থানীয় শিক্ষার্থী তপু চন্দ্র দাস, সুজন চন্দ্র দাস, হরিমোহন দাসসহ এলাকার অনেকেই জানান, শুকনো মৌসুমে নদীতে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হয়। এ কারণে অনেকের বসতভিটা নদীর পেটে চলে গেছে। বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য তারা অনেকের কাছে ধরণা দিয়েও কোন লাভ হয়নি।
তারা জানায়, নদীর ভাঙনে গত তিন বছরে এলাকার কমপক্ষে ৭৫টি বাড়ি বিলীন হয়েছে। অন্তত ২৫ একর জমি নদীর পেটে গেছে। ওই এলাকায় বিদ্যুতের একটি খুঁটি, মন্দির, বসতঘর, পামওয়েলসহ বিভিন্ন বনজ ও ফলদ গাছ, আবাদি জমি ঝুঁকিতে রয়েছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, জেলার অভ্যন্তরীণ নদীর পানি বাড়তে থাকায় বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বেশি ভাঙন এলাকা চিহ্নিত করেছেন। জনগুরুত্বপূর্ণ ভাঙন কবলিত এলাকায় ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com