দুর থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই এটি বিদ্যালয়ের মাঠ নাকি মাছ ধরার কোনো ডোবা। সামান্য বৃষ্টিতেই বিদ্যালয়ের মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। মাঠে পানি বেড়ে এক পর্যায়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে। চারপাশে বসতবাড়ি হওয়ায় ও পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় চরম ভোগান্তি আর দূর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। ফলে সমস্যা আরও প্রকট হয়ে ওঠেছে। নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে বছরের বর্ষা মৌসুমে এমন জলাবদ্ধতায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারনে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে চলছে পাঠদান। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার শালাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শালাইপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের মাঠেই হাঁটুপানি বিরাজ করছে। এতে শিক্ষার্থীরা স্কুলের কক্ষে যেতে পোহাতে হচ্ছে হাঁটু পানি। কেউ আবার পিছলে পড়ে যায় কাদা-পানিতে। কাদা-পানি পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয় যাতায়াত করতে হয় তাদের। জলাবদ্ধ মাঠের ঘাস ও আগাছার পঁচা দুর্গন্ধে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বিঘিœ্নত হচ্ছে। সব থেকে প্রাথমিকের কমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। পানিতে পড়ে গিয়ে ডুবে যাওয়ার আতংক থাকছে। এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দা পর্যন্ত পানি উঠায় ওই ভবনে পাঠদান বন্ধ রেখে পাশের নতুন ভবনের অফিস কক্ষে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। তাছাড়া পাশের অন্য একটি কক্ষে এক সঙ্গে দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এতে চরম অসুবিধার মুখে পরতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর।
অন্যদিকে উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠেও একই অবস্থার কারনে জাতীয় সঙ্গীত, পিটি প্যারেড ও খেলাধুলা করতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের মাঠে জলবদ্ধতা নিরসনে দফায় দফায় মিটিং করে এবং উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেও কোনো সুফল পাননি বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয় মাঠে খেলতে না পারায় শিক্ষার্থীরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। একটু বৃষ্টি হলেই কিংবা আকাশে মেঘ দেখলেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখায় শঙ্কা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, মাঠে জলাবদ্ধতার কারণে নিয়মিত খেলাধুলা ও প্রাত্যহিক সমাবেশ করা যায় না। একটু বৃষ্টি হলেই শ্রেণি কক্ষে আসা-যাওয়া সমস্যা হয়। অনেক সময় যাতায়াতে শরীরে কাদা লেগে যায়। শালাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ সেলিনা বলেন, পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিপাতেই মাঠটি জলাবদ্ধতার শিকার হয়। বেশি বৃষ্টি হলে মাঠের পানি বেড়ে শ্রেণি কক্ষে প্রবেশ করে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দেখা দেয়। মাঠের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে মাটি ভরাটের কোনো বিকল্প নেই। জলাবদ্ধতার কারণে একদিকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া শ্রেণি কক্ষ সংকটের কারনে অফিস কক্ষে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। শালাইপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ আব্দুল গফুর মন্ডল বলেন, বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টিতেই আমাদের বিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটু পানি জমে যায়। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে চরম অসুবিধা পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার বলেও কোনো লাভ হয়নি। শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বাস্তবায়ন হয়নি। উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। পাঁচবিবি উপজেলার নবাগত নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. আরিফা সুলতানা বলেন, এ বিষয়ে অবগত হলাম। দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই বিদ্যালয় দুটির পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।