শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩০ অপরাহ্ন

বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ৭০ হাজার ছাড়ালো

খবরপত্র অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ১৩ লাখ-

# ট্রেনকে হাসপাতালে পরিণত করলো ভারত # ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অক্সিজেন সাপোর্টে
# লিবিয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু
বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৭০ হাজার ৩২০ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে শুরু ইতালিতেই মারা গেছেন ১৫ হাজার ৮৮৭ জন। গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটার। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, ভাইরাসটিতে এখন পর্যন্ত বিশ্বে ১২ লাখ ৮৪ হাজার ৭৪০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৭০ হাজার ৩২০ জন। পাশাপাশি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৪ জন। এছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থান আছেন ৯ লাখ ৪২ হাজার ৬৮৯ জন। তাদের মধ্যে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৬৯৫ জন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছেন। বাকি ৪৫ হাজার ৯৯৪ জনের অবস্থা গুরুতর।
গত বছরের শেষদিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। যাতে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা। সবশেষ তথ্যানুযায়ী ভাইরাসটি এরইমধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২০৮টি দেশে ছড়িয়েছে। এসব দেশ থেকে নতুন রোগীর তথ্য জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি যোগ হচ্ছে নতুন দেশের নাম। করোনা ভাইরাসকে বিশ্বব্যাপী মহামারি বলে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৩ লাখ মানুষ। অর্থাৎ মোট আক্রান্ত ১২ লক্ষ ৮২ হাজার ৩৮২ জন। আর এতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বিশ্বের ৭০ হাজারের বেশি মানুষ। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে এই রোগে মারা গেছেন ৭০ হাজার ১৮৩ জন।
আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে শীর্ষস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে প্রতি মুহূর্তে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সেখানে মোট আক্রান্ত ৩ লক্ষ ৩৭ হাজার ৬৩৭ জন। মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। আমেরিকার পরেই রয়েছে স্পেন। এই প্রথম আক্রান্তের সংখ্যায় ইতালিকে টপকে গেল তারা। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩২ জন। আর মারা গেছেন ১৩ হাজার ৫৫ জন। বিশ্বে মৃত্যুর দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে ইতালি। তবে আশার আলো এই যে, রোববার রাত থেকে মৃত্যুর সংখ্যা খুব একটা বাড়েনি। ইতালির মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৯৪৮ জন। জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, ফ্রান্সে আক্রান্ত ৯০ হাজার ৮৩৯ এবং মোট মৃত্যু ৮০৭৮ জন। করোনার উৎপত্তিস্থল হিসাবে পরিচিত চীনে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৭০১ জন।
করোনায় মৃত্যুর নিরিখে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ইটালির। সেখানে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। সেখানে মারা গেছে মোট ১৫ হাজার ৮৮৭ জন। তারপরেই রয়েছে স্পেন। সেখানেও হু হু করে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। দেশটিতে সোমবার দুপুর পর্ন্ত মারা গেছেন ১৩ হাজারের বেশি মানুষ। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। সেখানে মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়েছে। বিশ্ব জুড়ে করোনার এই তা-বের মধ্যেই অবশ্য আশার আলো দেখা যাচ্ছে। আড়াই লক্ষেরও বেশি মানুষ (২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯৪ জন) করোনার কবল থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে এখনও চিকিৎাধীন রয়েছেন বিশ্বজুড়ে আরও ৯ লাখ ৪২ হাজার ৭০৬ জন। এদের মধ্যে ৪৬ হাজারের বেশি রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আইসোলেশনে থাকার ১০ দিন পরেও শরীরে করোনার লক্ষণ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের আইসিইউতে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছে । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক সপ্তাহের বেশি কারও শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে তা থেকে নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যার কারণে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
বেশ কয়েকজন দাবি করেছেন যে, কনফারেন্স কলের সময় বরিস জনসনকে প্রচ- কাশতে দেখা গেছে। ব্রিটেনের আবাসনমন্ত্রী রবার্ট জেনরিক জানিয়েছেন, করোনা পজেটিভ আসার পরেও গত কয়েক দিন ধরে কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন জনসন। এর আগে গত শুক্রবার আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় টুইটারে এক ভিডিও বার্তায় বরিস জনসন জানিয়েছিলেন যে, তার শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশি।
দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাদিন দোরিস প্রথম কোনো মন্ত্রী হিসেবে করোনায় আক্রান্ত হলেও তিনি এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। নাদিনের মতে, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ঘুমানো প্রয়োজন এবং সুস্থ হওয়া দরকার। ১০ দিন আগে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ার পর থেকেই আইসোলেশনে ছিলেন জনসন।
তবে কয়েকদিন ধরে তার শরীরে ক্রমাগত করোনার লক্ষণ দেখা দেয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাউনিং স্ট্রিট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ হলেও সরকারের প্রধান হিসেবে তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন।
ব্রিটিশ সরকারের একটি সূত্র বলছে, রোববার রাতে হাসপাতালেই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী জনসন। আরও কয়েকদিন তাকে হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে। গত মাসের শেষের দিকে করোনা পজেটিভ হওয়ায় আইসোলেশনে ছিলেন জনসন।
কিন্তু রোববার রাতে তার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলছেন যে, জনসনের আরও বেশ কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। রোববার ডাউনিং স্ট্রিট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবেই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। করোনা পজেটিভ ধরা পড়ার ১০ দিন পরে তার শরীরে করোনার লক্ষণ বাড়তে শুরু করেছে বলে জানানো হয়েছে।
২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফির দীর্ঘ একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় বসা লিবিয়ার বিপ্লবী সরকারের প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিলের মৃত্যু হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ বিশ্বমহামারিতে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরন করেছেন। লিবিয়ার রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ফোর্সেস এলায়েন্সের বরাতে সোমবার (১৫ এপ্রিল) এ খবর জানিয়েছে আল জাজিরা।
এদিকে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে দুই সপ্তাহ ধরে তিনি মিশরের রাজধানী কায়রোতে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে কায়রোর ওই হাসপাতালের একজন পরিচালক বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহ আগে হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার তিনদিন পরেই তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন।
মাহমুদ জিবরিল বিপ্লবী সরকারের প্রধান ছাড়াও, গাদ্দাফি সরকারের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বপালন করেছিলেন।
ট্রেনকে হাসপাতালে পরিণত করছে ভারত :
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গত ২৫ মার্চ দেশজুড়ে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশজুড়ে এই লকডাউনের সময় নজিরবিহীন এক উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ভারতীয় রেলের ১৬৭ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম। চলাচল স্থগিত হওয়া ট্রেনগুলোকে এখন দৃশ্যত হাসপাতালে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হতেই ট্রেনের ২০ হাজার পুরনো বগিকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যেই তারা দেশজুড়ে ১২৫টি হাসপাতাল পরিচালনা করছে। ফলে মোবাইল বেড বাড়ানোর দক্ষতা তাদের রয়েছে। ভারতীয় রেলওয়ে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল অপারেটর। ভারতে সবচেয়ে বেশি কর্মী রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে।
ভারতে সাধারণত দৈনিক ২০ হাজারের বেশি ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেন দেশজুড়ে সাত হাজার ৩৪৯টি স্টেশন প্রদক্ষিণ করে। তবে বিদ্যমান লকডাউনের ফলে প্রায় ৬৭ হাজার ৩৬৮ কিলোমিটার এলাকায় আর ট্রেন চলাচলের সুযোগ থাকছে না। ফলে কয়েক হাজার যাত্রীবাহী ট্রেন এমনিতেই অলস পড়ে আছে। তবে মালবাহী ট্রেন এখনও পর্যন্ত চালু রয়েছে।
এখন ব্যবহৃত হচ্ছে না এমন নন এসি বগিগুলো শনাক্ত করতে রেলওয়ের ১৬টি জোনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মূলত এ বগিগুলোকেই হাসপাতাল বা আইসোলেশন ওয়ার্ডে পরিণত করা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে এসব হাসপাতাল বা ওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারবে রোগীরা। রেলওয়ে বোর্ডের তথ্য ও প্রচার বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক রাজেশ দত্ত বাজপেয়ী জানিয়েছেন, ১৫ দিনের প্রথম পাঁচ হাজার আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি হবে। প্রয়োজনে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও বেশি সংখ্যক বগিকে হাসপাতালে হাসপাতলে রূপান্তর করা যেতে পারে।
ইরানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫৮ হাজার ২২৬ এবং মারা গেছে ৩ হাজার ৬০৩ জন। যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৪৭ হাজার ৮০৬ জন এবং মারা গেছে ৪ হাজার ৯৩৪ জন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে অক্সিজেন সাপোর্টে আছেন।

 

ই-খ/খবরপত্র




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com