অভাব অনটনের সংসার। সামান্য আয় আর দুঃখ-কষ্টে কাটছিল একেকটা দিন। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে অসহায় মা-বাবা খুঁজে পেত সুখ। কিন্তু সেই সুখও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১১ মাস বয়সী শিশু আদর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। জন্মগতভাবে ঠোটকাটা ছিল, তাই চিকিৎসকের সরনাপন্ন হন অসহায় মা-বাবা। চিকিৎসা শেষে জানা যায় শুধু ঠোটকাটা রোগই নয় আদর জন্মগতভাবে হৃদরোগেও আক্রান্ত। রংপুরের মহানগরীর নূরপুর মহাদেবপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন শিশু আদরের মা-বাবা। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম মোস্তাকিম আল আদরের। এখন তার বয়স তিন বছর। বাবা শাহীন হাসান খোকন পেশায় একজন রিকশাচালক, মা ববি খাতুন। দীর্ঘদিন ধরে ভাড়ায় চালিত রিকশা চালিয়ে কোনো রকমে পরিবারকে আগলে রেখেছেন শাহীন হাসান। অভাব অনটনের সংসারে দুই ছেলে সন্তানকে ঘিরেই তার স্বপ্ন। বড় ছেলে আবু বকর সিদ্দিক ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছেন। দুই ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন খোকন-ববি দম্পতির। কিন্তু হঠাৎ করে ছোট ছেলে আদরের রোগে-শোকে পুরো পরিবার এখন দিশেহারা। যে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সুখ খুঁজতেন মমতাময়ী মা ববি খাতুন। আজ তিনিও বাকরুদ্ধ সন্তানের ফ্যাকাসে মুখের দিকে তাঁকিয়ে। জন্মের ১১ মাস পর থেকে আদরের প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে। বয়স বাড়ার সাথে বাড়ছে শিশু আদরের হৃদযন্ত্রে ধরা পড়া ছিদ্রের যন্ত্রণাও। শারীরিক অবস্থা কখনো ভালো থাকে আবার ঘটে অবনতি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আদরের অস্ত্রোপচার জরুরি। এর জন্য প্রয়োজন ৩-৪ লাখ টাকা। বাবা শাহীন হাসান খোকন অশ্রুসিক্ত চোখে জানান, আদরের জন্ম ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। জন্মগতভাবে ওর ঠোটকাটা ছিল। ১১ মাস মাস বয়সে শিশু আদরের হাঁপিয়ে যাওয়া ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দেয়। তখন থেকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলছিল। হঠাৎ করে অবস্থার অবনতি হলে আদরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে হৃদযন্ত্রে ছিদ্র ধরা পড়ে। মা ববি খাতুন বলেন, যখন আমার বাচ্চার ১১ মাস বয়স তখন ডাক্তার বলেছিল ১০ কেজির নিচের শিশুর অপারেশন করা যাবে না। তখন থেকে আমরা আদরের প্রাথমিক চিকিৎসাগুলো সেরেছি। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ঢাকার হার্ট ফাউন্ডেশনেও নিয়েছিলাম। চিকিৎসকরা বলেছে অপারেশন করা গেলে আদর সুস্থ হয়ে উঠবে। তা নাহলে যত বড় হবে, ওর হার্টের সমস্যার সাথে অন্য সমস্যাও দেখা দিবে। এখন আমার বাচ্চার ওজন ১০ কেজির উপরে হয়েছে কিন্তু অপারেশন করার মতো আমাদের তো সামর্থ্য নেই। আড়াই বছর ধরে বাচ্চার ওষুধপাতি, চিকিৎসা, সংসার আর বড় ছেলের পড়াখেলার খরচ চালাতে আমরা ভীষণ কষ্ট করছি। সম্প্রতি আদর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দিন দিন শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা জানিয়েছে, দ্রুত অপারেশন করা গেলে শিশুটি অন্য সবার মতো স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারবে। ঢাকার হার্ট ফাউন্ডেশনেই আদরের অস্ত্রোপচার সম্ভব বলেও জানিয়েছে চিকিৎসকরা। আদরের মা ববি বেগম বলেন, হার্ট ফাউন্ডেশন থেকে অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিয়ে বলেছেন। কিন্তু আদরের বাবা ভাড়ায় চালিত রিকশা চালায়, তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলে। সন্তানের চিকিৎসা করা তো অসম্ভব। আদরের অস্ত্রোপচারের টাকা সংগ্রহ করতে আমাদেরকে বিত্তবানদের কাছে হাত পাততে হবে। না হলে সন্তানের সুচিকিৎসা করানো সম্ভব হবে না। শাহীন হাসান খোকন বলেন, আড়াই বছরে আমার সামর্থ্য অনুযায়ী বাচ্চাটার চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন জায়গায় ধারদেনাও করেছিলাম। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে আমাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল, সেটাও ওষুধপাতি কেনাসহ হাসপাতালে নিয়মিত ডাক্তার দেখানো ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যয় করেছি। এখন আর কাছে ধার–দেনা করব? সম্ভাব্য সব টাকার উৎস শেষ হয়ে গেছে। চিকিৎসকের পরামর্শে আমার ছেলেটার হার্টে অপারেশন করাতে গেলে প্রায় ৪ লাখ টাকা প্রয়োজন। এখন কীভাবে কী করব? আমার ছেলেকে বাঁচাতে সবার কাছে ভিক্ষা চাইছি। সবাই এগিয়ে এলে আমার আদর আবার হাসবে, খেলবে। শিশু আদরের বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। সে স্থানীয় জ্ঞানগৃহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোট ভাইয়ের এমন রোগে মন ভেঙেছে তার। সব সময় ভাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে সিদ্দিক। ছোট ভাইকে বাঁচাতে সবার সহযোগিতা চেয়ে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমার একটা মাত্র ভাই। আব্বা আম্মা আমাদের দুই ভাইকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে। আমরা পড়াশোনা করে বড় হব। আমাদের অভাব থাকবে না। কিন্তু আজ সেই স্বপ্ন বোধহয় শেষ হতে যাচ্ছে। আমার ভাই অসুস্থ। ওর অস্ত্রোপচার (অপারেশন) করাতে অনেক টাকা লাগবে। আমার ছোট ভাইকে বাঁচাতে সবার সহযোগিতা চাই। স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম ফুলু বলেন, এ মুহূর্তে শিশুটির চিকিৎসা জরুরি। ঢাকায় নিয়ে তাকে অস্ত্রোপচার করতে বলা হয়েছে। এ অবস্থায় রিকশাচালক বাবার জন্য এতো টাকা জোগাড় করা সম্ভব হবে না। সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসলে আদরকে সুচিকিৎসার মাধ্যমে বাঁচানো যাবে। আমরা গ্রামের মানুষ চেষ্টা করছি, তবে বিত্তবানদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর বিশেষ কয়েকটি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। আমার এবার আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছি। এখন শিশুটির চিকিৎসা করাতে প্রয়োজন কয়েক লক্ষ টাকার প্রয়োজন। তাই সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই ফুটফুটে শিশুটির তার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে। এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ হাসানুল ইসলাম জানিয়েছেন, শিশুটির হার্টে জন্মগত ভাবে ছিদ্র রয়েছে। দ্রুত অপারেশন করাতে পারলে শিশুটির জন্য ভালো। অপারেশন করাতে খরচ হতে পারে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা এদিকে শিশু মোস্তাকিম আল আদরের চিকিৎসার জন্য সাহায্য পাঠাতে তার মা-বাবার ০১৩০৯৪৪৭৩৪১ (নগদ) অথবা ০১৫৬৮৬৪২১৯২ (বিকাশ) মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া অর্থ সহায়তা পাঠাতে পারেন- মোছাঃ ববি খাতুন, হিসাব নম্বর- ৫০১২০০১০০৫০৮৮, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, রংপুর বাজার শাখা।