ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা, ফরিদপুর সিভিল সার্জন এবং বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নামে মিথ্যা অভিযোগ এনে অশ্লীল, আপত্তিকর এবং মানহানিকর ভাষাযুক্ত স্লোগান ব্যবহার করে মিছিল দেয়ার প্রতিবাদে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। দি ইস্টার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সাখাওয়াত হোসেন এবং মো. জিল্লুর রহমান ওই তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ আনেন। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুর ২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দের আয়োজনে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত সকল চিকিৎসক ও কর্মচারীরা অংশ নেন। জানা যায়, ফরিদপুর জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃক চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে সোমবার (১৭ জুলাই) দুপুরে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার তিনটি ক্লিনিকে এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ক্লিনিক তিনটি হলো- হাসপাতালের উত্তর পার্শ্বস্থ সরকারি কলেজ রোড সংলগ্ন দি ইস্টার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল রোডস্থ আল আমিন সার্জিক্যাল ক্লিনিক এবং উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থিত স্বর্ণা ক্লিনিক। অভিযান পরিচালনার সময় সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্টরা ক্লিনিক তিনটিতে বেশ কিছু অসঙ্গতি দেখতে পান। এ সময় সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনাকারীরা ক্লিনিকগুলোর সার্বিক পরিবেশ নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন এবং অপারেশন থিয়েটারের বেশ কিছু যন্ত্রপাতিও নষ্ট দেখতে পান। এ প্রেক্ষিতে রোগীদের সঠিক স্বাস্থ্যসেবার কথা বিবেচনা করে বিদ্যমান অসঙ্গতি দূর না করা পর্যন্ত ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বন্ধ রাখার এ নির্দেশনার প্রতিবাদে ‘দি ইস্টার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর মালিক সাখাওয়াত হোসেন ও জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল সোমবার বিকেলে বোয়ালমারী পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা.মো. ফরিদ হোসেন মিঞার নাম জড়িয়ে ক্লিনিকের মালিক সাখাওয়াত হোসেন ও জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে মিথ্যা, আপত্তিকর ও মানহানিকর স্লোগান দেয়া হয়। দি ইস্টার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সাখাওয়াত হোসেন দাবি করেন -নিয়ম মাফিক তাদের সব কিছু ঠিক থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞার নির্দেশনায় ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিচালকের একটি ব্যবসায়ীক প্রস্তাবনা ফিরিয়ে দেওয়ায় তিনি দীর্ঘদিন যাবত নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। হয়রানির অংশ হিসেবে সিভিল সার্জন কোন প্রকার অসংগতি না থাকার পরেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাদের ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা মালিক পক্ষ ছাড়াও ১৮ জন কর্মচারী পেটে লাথির প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।
বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ডা. এম এম নাহিদ আল রাকিব বলেন- নিয়মতান্ত্রিক ও নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে জেলা সিভিল সার্জন স্যার অভিযান পরিচালনা করেছেন, ক্লিনিক গুলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও এ অঞ্চলের সাধারণত রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতেই তাদের বন্ধ রাখতে মৌখিক নির্দেশ দেন। এ নিয়ে একটি মহল মিথ্যা, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে আপত্তিকর, অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে মিছিল দিয়েছে। বিষয়টি আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি তাদের নিদর্শন মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন- আমাদের নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বোয়ালমারীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ক্লিনিক মালিকদের দাবি মিথ্যা, ভিত্তিহীন। বিধি মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দি ইস্টার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকপক্ষের আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা.মো. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, এটা জেলা সিভিল সার্জনের রুটিন ওয়ার্ক। জেলার ক্লিনিকগুলোর সার্বিক অবস্থা তদারকি করা তার কাজ। ফরিদপুর জেলা সিভিল সার্জন বোয়ালমারী উপজেলার তিনটি ক্লিনিকে সোমবার অভিযান চালিয়ে কিছু ত্রুটি খুঁজে পেয়েছেন। সে মোতাবেক তিনি (সিভিল সার্জন) ওই সকল ত্রুটি দূর করে ক্লিনিক পরিচালনা করতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ঘটনার সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি বোয়ালমারীর কোন ক্লিনিকের সাথে জড়িত নই। অথচ আমাকে জড়িয়ে দি ইস্টার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পক্ষ থেকে মানহানিকর স্লোগান দেয়া হয়েছে, যা আপত্তিকর। আমি এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেব।