সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩২ পূর্বাহ্ন

ঝালকাঠির সড়ক দুর্ঘটনা: ১০ বছর অপেক্ষায় থাকা বাবার সন্তানের মুখ দেখা হলো না

ইমাম হোসেন মাসুদ পিরোজপুর :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩

বিয়ের ১০ বছরের জন্ম নেয়নি কোন সন্তান। এরপর বাবা হওয়ার জন্য যখন অপক্ষোর প্রহর গুনছিলেন ঠিক সেই মুহূর্তে সড়ক দূর্ঘটনা কেড়ে নিল হতভাগ্য এ পিতার জীবন। গত শনিবার সকালে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের মধ্যে একজন এ অনাগত সন্তানের বাবা শাহীন মোল্লা। প্রায় ১০ বছর পূর্বে পার্শবর্তী কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠী গ্রামের আব্দুল মজিদ খান এর মেয়ে নাজমার সাথে বিয়ে হয়েছিল পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পূর্ব ভান্ডারিয়া গ্রামের ছালাম মোল্লার ছেলে শাহীন মোল্লা। তবে গার্মেন্টস কর্মী নাজমা এবং গাড়ি চালক শাহীন দম্পতির ঘরে কোন সন্তান ছিল না। বিয়ের এ দীর্ঘ সময় পর নাজমা বর্তমানে ৭ মাসের গর্ভবর্তী। আর এতে আনন্দের কোন সীমা ছিল না তাদের পরিবারে। তবে সন্তানের মুখ দেখার আগেই এ পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়েছে শাহীনকে। শনিবার সকালে খুলনা-বরিশাল সড়কের ঝালকাঠি সদর উপজেলার ছত্রকান্দা গ্রামে মর্মান্তিক বাস দূর্ঘটনায় যে ১৭ জন নিহত হয়েছে তাদের মধ্যে দুইজন শাহীন(২৮) এবং তার বাবা ছালাম(৭০)। শাহীন এবং তার ছোট ভাই রাসেল তাদের বাবা ছালামকে নিয়ে ভান্ডারিয়া থেকে বরিশালে হার্টের চিকিৎসা করানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়া ভান্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পাবনা থেকে রাসেল এবং চট্টগ্রাম থেকে তার বড় ভাই শাহীন বাড়িতে এসেছিল। ভোটদান শেষে বাবার চিকিৎসা করিয়ে কর্মস্থলে তাদের ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে শনিবার রাতেই চট্টগ্রাম থেকে বাড়িতে এসেছে অন্তঃসত্তা নাজমা। আর স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে অনেকটাই বাকরুদ্ধ শাহীনের মা শাহিনুর বেগম। এ দূর্ঘটনায় শাহীনের ভাই রাসেলও মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। একই দূর্ঘটনায় নিহত দক্ষিণ ভান্ডারিয়া গ্রামের ঔষধ ব্যবসায়ী তারেক মাহমুদের বাড়িতেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ৭ বছর বয়সী ছেলে মাহাদিকে নিয়ে ভান্ডারিয়া থেকে বরিশালে চিকিৎসা করতে যাচ্ছিল তারেক। এ দূর্ঘটনায় ছেলেকে বাঁচাতে পারলেও, নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি তারেক। নিহত তারেকের মাহাদি ছাড়াও ৭ মাস বয়সী আরও একটি সন্তান রয়েছে। শনিবারের সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের মধ্যে ৮ জনের বাড়ি ভান্ডারিয়া। শনিবার সকালে ভান্ডারিয়া থেকে বাশার স্মৃতি নামের বাসটি অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বরিশাল যাচ্ছিল। বাসটি ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ অতিক্রম করার পর এটি রাস্তার পাশের একটি পুকুরে পড়ে যায়। এতে ১৭ জনের মৃত্যু হওয়ার পাশাপাশি আরও ৩৫ জন আহত হয়।
বাসটি চালানের সময় এর চালক পিছনে ফিরে যাত্রীদের সাথে কথা বলছিল। ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম জানান, তারা যা হারিয়েছে তার কোন ক্ষতিপূরন টাকা বা অন্য কিছু দিয়ে মেটানো সম্ভব না। তবে এ সব পরিবারের পাশে তিনি থাকবেন এবং সাধ্য মতো সহায়তা করবেন। এছাড়া ভান্ডারিয়া উপজেলার নিহত ৮ জনের প্রত্যেককে তাৎক্ষণিক দাফনের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছেন তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com