ভালো নেই ফরিদপুরের সদরপুরে পদ্মা ও আড়িয়ালখাঁ নদী পাড়ের মানুষেরা। প্রবল স্রোতে ভাঙছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম। চলতি বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে নদীগুলোর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে নদী ভাঙন। এতে বিলীন হচ্ছে ফসলী জমি, বসতবাটি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা। সরেজমিনে দেখা যায় গ্রামবাসী ঘরবাড়ি, গরুছাগল, ধানচাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে। পদ্মানদীতে ভাঙছে উপজেলার আকটেরচর ইউনিয়নের আকটের হাট সংলগ্ন খোকারাম সরকারের ডাঙ্গী, এখানেই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬০টি ঘর রয়েছে যেখানে ৬০ টি ছিন্নমূল পরিবার বসবাস করে। সেখান থেকে পদ্মানদী মাত্র ৫শ মিটার দূরে অবস্থান করছে। আরও ভাঙছে ইউনিয়নের কলাবাগান গ্রাম, শয়তানখালীর চর। পদ্মার ছোবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না নাড়িকেল বাড়ীয়া ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর, কাচিকাটা গ্রাম, চরনাসিরপুর ইউনিয়নের ফকির কান্দি, তালপট্টির চর, কাড়ালকান্দি, জঙ্গিকান্দি, জামাল শিকদার কান্দি গ্রাম। অপরদিকে আড়িয়াল খাঁ নদীর স্রোতে উপজেলার চরমানাইর ইউনিয়ন ও চরনাসিরপুর ইউনিয়নের শিমুলতলী ঘাট, কাজীরসুরা, দূর্বারটেক, মফিজদ্দিনের কান্দি, হাফেজ কান্দি, চরগজারিয়া, গিয়াস উদ্দীন মুন্সীর কান্দি গ্রামের কিছু কিছু এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সদরপুরের কিছু কিছু এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়। বহুবছর আগে থেকেই পদ্মা ও আড়িয়ালখাঁ নদীর ভাঙনে তলিয়ে গেছে সদরপুরের ৫টি ইউনিয়নের মাইলের পর মাইল জমি। প্রতিবছর কোথাও কোথাও জেগে উঠছে নতুন চর পাশাপাশি তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ফার্স্ট এইড হিসেবে নদীর ভাঙনরোধে কোথাও কোথাও জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যবস্থা নদী ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধান নয় বলে জানান স্থানীয়রা। আকটেরচর সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরপ্রাপ্ত রিনা বেগম জানান – সরকার আমাগো ঘর দিছিল, ভালই ছিলাম। শান্তিতে ছিলাম। কিন্তু দেখতাছি পদ্মায় তো সব নিয়া যাইব। দিয়ারা নাড়িকেলবাড়ীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ নাসির উদ্দিন সরদার জানালেন-আড়াই কিলোমিটার জুড়ে পদ্মায় ভাঙনরত আছে। গত ২ বছরে ইউনিয়নের ১ কিলোমিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। চরনাসিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ রোকন উদ্দিন জানান- সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে নদী শাসন না করলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন অফিসার মোহাম্মদ আবু এহসান মিয়া জানান-পানি বিপদসীমার নীচে আছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন – আমি ক্ষতিগ্রস্থদের নামের তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি- এই কাজ চলমান রয়েছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।