বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
কালীগঞ্জে থামছে না কৃষি জমির মাটি কাটা কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় বাদাম চাষে আশার আলো দেখছেন কৃষকরা কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ সারেংকাঠী ও গুয়ারেখা ইউনিয়নে ঢল নেমেছে স্বচ্ছ মনের প্রার্থী আলহাজ্ব আঃ হকের পক্ষে শেরপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র খোকনের দায়িত্ব গ্রহণ অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা বশির আহমদ উপজেলার পর এবার সিলেট বিভাগেরও শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা প্রধান কালীগঞ্জের আল-জাছির হলেন দেশ সেরা কালিয়ায় মক্কীনগর কবরস্থানের উদ্বোধন ও দোয়া মাহফিল ঈশ্বরগঞ্জে প্রতীক পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীরা আরমান হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধন

কোন বয়সের শিশুকে কতক্ষণ স্ক্রিন ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত?

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০২৩

সংসার সামলানো, রান্না বান্না, টুকটাক কাজ এসবের জন্য অনেক সময় বাচ্চাদের হাতে বিভিন্ন ডিভাইস তুলে দিতে হয়, যাতে তারা কিছুক্ষণ স্থির থাকে। এছাড়া যেন কোনো অপশন নেই, এমনটাই মনে হয়। নিরাপত্তার কথাও কিন্তু মাথায় আসে যে বাচ্চাকে বাইরে খেলতে দিবো, কোথায় পাঠাবো বা যদি কোনো সমস্যা হয়। আর অনেক জায়গায় তো খেলার কোনো স্পেস নেই। তো ঘরবন্দি বাচ্চার একমাত্র বিনোদন বা সময় কাটানোর উপায় হলো এসব ডিভাইস। তাই আজকের বিষয় হলো শিশুর স্ক্রিন টাইম। এর ক্ষতিকর প্রভাব কী এবং অতিরিক্ত ডিভাইস আসক্তি নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো নিয়ে আজ আমরা জানবো। একটি শিশু যতক্ষণ ডিভাইসে টাইম স্পেন্ড করে সেটিই তার স্ক্রিন টাইম। টিভি, ট্যাব, মোবাইল যেকোনো কিছুই হতে পারে। লার্নিং এর জন্য একটা নির্দিষ্ট বয়সে কিছুক্ষণ শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম বা মজার কার্টুন, ছড়া-গান এসব বাচ্চারা দেখতেই পারে। তবে স্ক্রিন টাইমের ক্ষেত্রে শিশু কী দেখছে, কতক্ষণ দেখছে, বা সেটা তার বয়সের উপযোগী কিনা এসব বিষয় মাথায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কোন বয়সে কতক্ষণ স্ক্রিন ব্যবহার করতে পারবে? ‘The American Academy of Pediatrics‘ এর মতে, ১৮ মাসের কম বাচ্চাদের স্ক্রিন টাইম একদমই অ্যালাউ করা উচিত না। শুধুমাত্র আত্মীয়দের সাথে ভিডিও কলে কিছুক্ষণ তাকে অ্যালাউ করা যাবে, তাও সেটি বেশি সময় ধরে নয়। যাদের বয়স ১৮-২৪ মাস তারা শুধুমাত্র বাবা-মায়ের সাথে কিছু সময় স্ক্রিন টাইম শেয়ার করবে এবং সেটি হতে হবে তার বয়সের জন্য উপযোগী কনটেন্ট। ২-৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের ১ ঘন্টা স্ক্রিন টাইম রাখা যেতে পারে এবং সেটা এডুকেশনাল প্রোগ্রাম। ৬ কিংবা তার বেশি বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বাবা-মা টাইম ফিক্সড করে দিবেন এবং তার উপর নজর রাখতে হবে যে সন্তান তার বাইরে অন্য কোনো হার্মফুল কনটেন্ট দেখছে কিনা।
শিশুর উপর ক্ষতিকর প্রভাব: এটি এমন একটি কন্ডিশন যেখান থেকে বের হওয়া খুব সহজ নয়। শিশু থেকে বড়রাও দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টার স্ক্রিনে টাইম স্পেন্ড করে। এটা এক ধরনের নেশার মতো। আরেকটু আরেকটু করে অনেকটা সময় চলে যায় এর পিছনে। বাচ্চাদের বিকাশের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, চলুন জেনে নেই।
স্লিপিং প্যাটার্নে ব্যাঘাত ঘটা কার্টুন বা গেমসে বেশি মনোযোগ দিলে আপনার শিশু সময়মতো ঘুমাতো চাইবে না। আর অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুর ভিশনে আর স্লিপিং প্যাটার্নে ব্যাঘাত ঘটায়। খাবার চিনতে না শেখা একটা বিষয় খেয়াল করবেন, স্ক্রিন টাইমের জন্য বাচ্চা বুঝতে পারে না খাবারের স্বাদ বা কতটুকু সে খাচ্ছে। খাবার খাওয়ার সময় হাতে ডিভাইস তুলে দেওয়াটা খুবই কমন। এতে তার মনোযোগ খাবারে কম আর স্ক্রিনে বেশি থাকে! খাবার চিনতেও শেখে না। স্ক্রিনের প্রতি আর্কষণ থাকায় খাবারও খেতে চায় না মাঝেমধ্যে, অনীহা দেখায়।
আচার ব্যবহারে পরিবর্তন:শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। ডিভাইসে যে কার্টুন বা ভিডিও চলছে তা থেকে প্রতিনিয়ত বাচ্চারা শিখছে। সেটা ভালো হোক বা মন্দ। এতে তার সমগ্র আচার আচরণে পরিবর্তনও আসছে। কখনো কখনো সে জেদ দেখায়, রাগ করে, বেশি হাইপার হয়ে যায়। অর্থাৎ তার পারসোনালিটি বিল্ডআপের টাইমেও এই জিনিসগুলো বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিবারের সাথে কম সময় কাটানো: যেসব বাচ্চাদের স্ক্রিন টাইম বেশি তারা পরিবারের সাথে কম সময় কাটাতে চায়। সোশ্যাল বন্ডিং কম হওয়ার কারণে তাদের মানসিক বিকাশ দেরিতে হয়। এই বাচ্চারা বাইরেও যেতে অনীহা প্রকাশ করে এবং ভালোভাবে মিশতে পারে না অন্য বাচ্চাদের সাথে।
স্ক্রিন টাইম শিশুদের অ্যাকটিভিটি কমিয়ে দেয়। কম চলাফেরার কারণে তাদের ওয়েট বেড়ে যেতে পারে আর সেটি অন্যান্য শারীরিক সমস্যাকে ট্রিগার করে। সারাদিন টিভি বা মোবাইলের সামনে বসে থাকলে স্পিচ প্রবলেম, কানে কম শোনা, ডাকলে রেসপন্স না করা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। এক কথায়, শিশুর শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে এক প্রকার বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া: স্ক্রিন টাইমের প্রতি বেশি আর্কষণ বাচ্চার বই পড়া, খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয়। তার ক্রিয়েটিভিটি কমে আসে। নতুন কিছু করতে সে অনীহা প্রকাশ করে।
ভয় পাওয়া বা ট্রমা: হতে পারে শিশুকে একটি শিক্ষনীয় বিষয় নিয়ে ভিডিও দেখতে দিলেন। এখন ভালোর পাশাপাশি বিভিন্ন হার্মফুল কনটেন্টও খুব সহজলভ্য ইউটিউবে। আপনার শিশু ভুলবশত এমন কিছু কনটেন্ট দেখলো যেটি তার ব্রেইনে নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে। ভয়ের কিছু দেখে থাকলে সে সহজে সেই সিচুয়েশন থেকে বের নাও হতে পারে এবং ট্রমার শিকার হওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। এই ভয় বা ট্রমা তার মানসিক বিকাশে বিঘœ ঘটাবে, এটা খুবই স্বাভাবিক।
তাহলে কি কিছুই শিখছে না? অনেক প্যারেন্টস ভিডিও বা কার্টুনকে বাচ্চার কথা বলার মাধ্যম হিসেবে ভেবে থাকেন। এটা আসলে পুরোপুরি ঠিক নয়। কিছু ভিডিও থেকে শেখা যায়, যেমন- কারো সাথে প্রথম পরিচয়ে সালাম বা ‘হ্যালো‘ বলা এবং শেষে ‘বাই‘ বলা। এগুলো টুকটাক শব্দ তারা ক্যাচ করে ফেলে। কিন্তু পরিপূর্ণ বিকাশ হয় না বা ভাষা শিখে ফেলে না এই বয়সেই, কারণ এটি একতরফা কথোপকথন (one way communication)। আপনার শিশু স্ক্রিনে কী হচ্ছে শুধুই সেটাই দেখতে পারছে কিন্তু কোনো ভাব বিনিময় হচ্ছে না। ফলাফল স্পিচ ডিলে!
স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণের কৌশল: শিশুকে সময় দিন। শিশু বিরক্ত হলেই সাথে সাথে ডিভাইস তুলে দিবেন না। এতে তার মাঝে যেকোনো কিছু সহজে পাওয়া যায়, এই মনোভাব কাজ করে। পরবর্তীতে না পেলে তার মধ্যে জেদ কাজ করে। শিশুর বিকাশে সহায়ক হবে এমন খেলনা তুলে দিন। যেমন- বিল্ডিং ব্লক বা আঁকাআকি বাচ্চারা বেশ পছন্দ করে। সেই সাথে অবশ্যই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
বাচ্চাদের জন্য আলাদা ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে, সেটা দিতে পারেন। অযাচিত ভিডিও ব্লক করে দিন। কিডস ফ্রেন্ডলি সেটিংস দিয়ে রাখুন মোবাইলে। বাচ্চাকে আদরের পাশাপাশি সঠিক উপায়ে শাসন করাটাও জরুরি। যেন সে বুঝে কোনটি তার জন্য ভালো, আর কোনটি খারাপ। তবে কিছু বাচ্চাকে এক্সট্রা কেয়ার দিয়ে বুঝিয়ে বলতে হয়। আপনার বাচ্চাকে অবজার্ভ করুন সে কীভাবে রিঅ্যাক্ট করে।
তাকে ছুটির দিনে বাইরে নিয়ে যান এবং অন্য বাচ্চাদের সাথে মেলামেশার সুযোগ করে দিন। চিড়িয়াখানা, পার্ক, প্লে গ্রাউন্ড এসব জায়গায় নিয়ে যেতে পারেন তাতে তার স্ক্রিন টাইমের প্রতি আগ্রহ কমবে। বাসার ছোটখাটো কাজে বাচ্চাকেও সাথে নিন, যাতে তার কাজ শেখার প্রতি আগ্রহ জাগে। তাকে উৎসাহ দিন না পারলেও। যেমন- কাপড় ভাজ করা, গাছে পানি দেওয়া, রান্না বা বেকিং এর সময় ছোট ছোট জিনিস এগিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। অবশ্যই তার বয়স অনুযায়ী কাজ করবে সে। এখন অনেক প্রি স্কুল বা চাইল্ড কেয়ার প্রতিষ্ঠান আছে। আপনার সাধ্য অনুযায়ী বাচ্চাকে কিছু সময় সেখানে রাখতে পারেন। এতে দিনের অনেকটা সময় সে স্ক্রিন টাইম থেকে বিরত থাকবে। নতুন নতুন জিনিস শিখবে।
সর্বোপরি নিজেকে পরিবর্তন করুন। আপনি নিজেই যদি ডিভাইসে আসক্ত থাকেন তাহলে আপনার শিশুকে কীভাবে বিরত রাখবেন? বাচ্চার সামনে অপ্রয়োজনে ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। যদি দরকারে মোবাইল ব্যবহার করতেও হয় তার সামনে, সুন্দর করে বুঝিয়ে বলুন।
কর্মজীবী বাবা-মায়েদের করণীয়: বাবা-মা দুজনই যদি জব করেন, তাহলে এটা নিশ্চিত করুন যে সারাদিন যে বাচ্চার দেখাশুনা করছে সে যেন বাচ্চাকে মোবাইল বা স্মার্ট ফোন না দেয়। বয়স অনুযায়ী কিছুক্ষণ টিভি দেখতেই পারে, তবে সারাদিন নয়! বাগান করা, গাছের যত্ন নেওয়া, ছবি আঁকা এগুলোতে অভ্যস্ত করুন তাকে। অবসরে আপনার বাচ্চাকে কোয়ালিটি টাইম দিন, গল্প করুন বেশি বেশি।
এই ছিলো আজকের আলোচনা। একটি শিশুর ভালোভাবে বেড়ে উঠার সাথে আপনার নিজের, সমাজের ও দেশের সুন্দর ভবিষ্যত জড়িত। তাই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমকে অন্তরায় হতে দিবেন না। ভালোভাবে বেড়ে উঠুক প্রতিটি শিশু।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com